টাইমস ২৪ ডটনেট: ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধ-বিরতির সমঝোতা দেখিয়ে দিয়েছে যে তুলনামূলকভাবে পুরোপুরি অসম অবস্থায় ও ন্যুনতম বা স্বল্পতম অস্ত্র-শস্ত্রধারী হয়েও এবং সামরিক ভারসাম্য যত প্রতিকূলই হোক না কেন শত্রুকে নতজানু করা সম্ভব। রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাদাল্লাহ জারেয়ি এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ‘হামাসই ঠিক করে দিচ্ছে কোন্ কোন্ বন্দিরা কোন্ সময় মুক্তি পাবে…. হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে ইসরাইলের সামরিক ভারসাম্য মোটেই সন্তোষজনক নয় এবং ইসরাইল এক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে’-এটি ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ-এ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে আমুস হারিয়েলের একটি উক্তি। ৪৭১ দিন যুদ্ধ চলার পর গত রোববার গাজায় যে যুদ্ধ-বিরতির সমঝোতা কার্যকর হয়েছে সে বিষয়ে এটি প্রত্যক্ষতম বর্ণনা। এই যে অবস্থা অপরাধী ইসরাইলের জন্য সৃষ্টি হল দীর্ঘ যুদ্ধ চালানোর পর তা এতই ভঙ্গুর ও এত বিপর্যয়কর যে দখলদার ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সায়ার দাবি করেছেন যে গাজার যুদ্ধ-বিরতি অস্থায়ী! এই সমঝোতার ফলে যুদ্ধ বন্ধ হোক বা যুদ্ধ-বিরতির প্রথম অথবা দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় পর্যায়ের পর কোনো অজুহাত দেখিয়ে বা কোনো অজুহাত দেখানো ছাড়াই ইসরাইল আবারও যুদ্ধ শুরু করুক না কেন এই কৌশলগত সমীকরণে কোনো পরিবর্তন আসবে না। কারণ ইসরাইল যুদ্ধ করে বন্দিদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারেনি এবং একটি ক্ষুদ্র অঞ্চলের বিরুদ্ধে ৪৭১ দিন ধরে যুদ্ধ করার পরও হামাসের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়েছে মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় ও যুদ্ধ-বন্দি বিনিময়ের অসম শর্ত বা দাবি মেনে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতেও বাধ্য হয়েছে যদিও এই হামাস নামক প্রতিরোধ আন্দোলনকে নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েই যুদ্ধ শুরু করেছিল তেলআবিবের দখলদার শাসকগোষ্ঠী। তাই এ যুদ্ধে কে পরাজিত হয়েছে তা তুলে ধরার জন্য আর বেশি কিছু বলা জরুরি নয়। মজার ব্যাপার হল এমনকি এক মাস আগেও নেতানিয়াহু যুদ্ধের আগুন অব্যাহত রেখে বার বার ঘোষিত পুরনো বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বলেছিলেন যে ‘হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধ থামানো হবে না’। কিন্তু ইসরাইলের অপরাধী প্রধানমন্ত্রী যখন যুদ্ধ-বিরতির সমঝোতার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ধন্যবাদ জানান তখন তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে এই সমঝোতা ইসরাইলি বোমা-বর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
হামাস যুদ্ধ-বিরতির ময়দানে প্রমাণ করেছে যে চালকের আসন তারই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ঠিক যেমনি ২০০৩ সালের ৭ অক্টোবরেও আলআকসা তুফান নামক সামরিক অভিযান চালানোর সময় সামরিক ক্ষেত্রেরও নিয়ন্ত্রণও ছিল তারই হাতে। আসলে হামাসের সামরিক ক্ষমতা ও গাজার অধিবাসীদের বেসামরিক প্রতিরোধের ফলেই ইসরাইলের সামরিক কৌশলগুলো অকার্যকর হয়ে গেছে। আর এরই আলোকে ইসরাইলি মন্ত্রীসভার সিনিয়র সদস্য স্মোতরিচ যুদ্ধ-বিরতির প্রথম দিনে বলেছেন, ‘বিষয়টি যদি এখানেই শেষ হয় তাহলে বলতে হবে যে ইসরাইল অত্যন্ত ভয়াবহ ও বড় পরাজয়ের শিকার হয়েছে’।
আসলে মার্কিন সরকার ও ইসরাইল হামাস ও ইসলামী জিহাদের মোকাবিলায় তখনই যুদ্ধ-বিরতির দ্বারস্থ হয় যখন তারা এ দুইয়ের সঙ্গে যুদ্ধে অচলাবস্থার শিকার হয়েছে। যুদ্ধ-বিরতি শুরু হওয়ার পর প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হামাস যে লোকবল ও অস্ত্রসহ গাড়ি বহর নিয়ে মহড়া চালিয়েছে তা ছিল ব্যাপক অর্থবহ এবং ইসরাইলের জন্য অত্যন্ত অসহনীয় ও বেদনাদায়ক।
ইসরাইলি রেডিও উল্লসিত বিপুল জনতার জোয়ারের মধ্যে হামাসের বিপুল সংখ্যক সশস্ত্র সদস্যের উপস্থিতি সম্পর্কে বলেছে, হামাস যুদ্ধের কোনো পর্যায়েই গাজার কোনো অংশের ওপরই নিয়ন্ত্রণ হারায়নি এবং এখন এই সময়কে কাজে লাগিয়ে গাজার ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ ও শাসন শক্তিশালী করছে। দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে যুদ্ধ করেও ইসরাইল গাজার ওপর হামাসের কর্তৃত্ব বিলোপ করতে ও এর বিকল্প কাউকে সেখানে বসাতে পারেনি। এটা কি করে সম্ভব দীর্ঘ ১৫ মাস পরও গাজায় হামাসের সামরিক গাড়িগুলো টিকে আছে? তাই সত্যিই এটা ইসরাইলের জন্য সামরিক পরাজয়।
সূত্র: পার্সটুডে।