মতামত

‘ধন্য আমি ধন্য হে- তোমার প্রেমের জন্য যে’

সৈয়দা রাশিদা বারী: পৃথিবীর উপর, দেশ, জাতি, সমাজ সংসার এর কিছু কিছু মানুষ বা ব্যক্তি, ব্যক্তি হলেও এক একটা প্রতিষ্ঠান। সেরকম কিছু মানুষের মধ্যে নারীর ক্ষেত্রে আমার দেখা এ দেশে, বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগম (০৪.০৬.১৯২৫- ২৩.০৫.২০১৬ইং) আপাই সর্বোত্তম। বলা যায় যিনি এদেশের নারী লেখকদের কাপড়ের টুকরা, কাদা মাটি দিয়ে পুতুল বানাবার মতোন, লেখিকা করে গড়ে তুলেছেন। সমাজে ও দেশে এমন মানুষ কয়জন থাকে? ছিল এবং আছে। সকলকেই তো দেখা যায় যারযার স্বার্থের কাজে ব্যস্ত থাকতে। যেমন- মানুষ দানও করেন, তবে সেটা হাইলাইটস হয়ে লোক দেখানোর জন্য, নাম ডাক বাড়াবার জন্য অর্থাৎ অন্যান্য কাজ সিদ্ধির জন্য। সেই ক্ষেত্রে- তিনিই একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন নিঃস্বার্থে লেখিকা তৈরির কাজে থেকেছেন ব্যাস্ত। তাঁর স্বামী রোকনুজ্জামান খান (০৯.০৪.১৯২৫- ০৩.১২.১৯৯৯ইং) দাদা ভাইও নূরজাহান আপারই দেওয়া উৎসাহ অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় আজীবন থেকেছেন তৃণমূল পর্যায়ে শিশু থেকে লেখক তৈরির কাজে ব্যাস্ত। নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থের প্রতি তিল পরিমাণ ভ্রক্ষেপণ না রেখে এই দুইজন নক্ষত্রই বাংলাদেশের লেখক তৈরিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এ যেন এক বিরল প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী যুগের নিটল ইতিহাস। তাই এদেশের পটভূমির দ্বার প্রান্তে অক্ষয় হয়ে থাকবে, সোনার পাতে বাধানো হয়ে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন (১০.১১.১৮৮৮- ২১.০৫.১৯৯৪ইং)’র প্রতিষ্ঠিত ‘বেগম’র সম্পাদক নূরজাহান আপা ও মানিক মিয়ার প্রতিষ্ঠিত ‘ইত্তেফাক’র কচিকাঁচার রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাই। কি রোমাঞ্চ ইতিহাস যে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন পত্রিকার নাম দিলেন ‘বেগম’ আবার একমাত্র কন্যার নামও নূরজাহান বেগম রাখলেন। এই নাম রাখাটাতেও তো নাসিরউদ্দিনের একটা আর্ট যার বিশাল ব্যাখ্যা রয়েছে! দেখার আরো একটা বিসয় যে তিনি সমাজে নারীর প্রাধান্যতা প্রতিষ্ঠা করতে ও প্রধান রাখার প্রবণতায় মেয়েই নিয়েছেন আর ছেলে চাননি। সেই মেয়েকে দিয়েই মেয়ে সমাজ উদ্ধার করতে কাজ করেছেন আমৃত্যু। তাই তার একমাত্র কন্যা নূরজাহান বেগম ও একমাত্র জামায় রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাই তারই ইচ্ছা উৎসাহে আমৃত্যু সাহিত্য এবং সাংস্কৃতির উপরে, মানুষ গড়ার কাড়িগর থেকেছেন!
মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের পাটুয়াটুলী ‘বেগম’ পত্রিকার ঐতিহ্যবাহী অফিস ও সওগাত প্রেস আমি দেখেছি, এক আকর্ষণীয় প্রেম যাতে বিরাজমান। আমার কাছে যার প্রধান আকর্ষণ ছিল অনেকগুলো বিড়াল! যেমন হযরত শাহ জালালের মাজারের আকর্ষণ জালালী কবুতর। খানজাহান আলীর ঘোড়াদীঘির আকর্ষণ কুমির। একদিন হয়তো এটা এ তিন নক্ষত্রের স্মৃতি রক্ষার্থে জাদুঘরে পরিণত হবে। এখনও দর্শনের দিক থেকে আমার মনে হয় যেমন বাংলাদেশের ঐতিহ্য লাল বাগের কেল্লা, ঈঁশাখাঁর সোনার গাঁ এর ভাঙা দালান, ঘোড়াওয়ালা পুকুর, লেক, সাদা ভূমি পথ ও জাদুঘর ইত্যাদি। বগুড়ার রূপŸান মোড়া, মহাস্থানের গড়, কিংবা আলাওলের দীঘি, ষাটগম্বুজ মসজিদ-ঘোড়া দীঘি, ভারতের ক্ষণার বাড়ি। সতের রত্ন মন্দির, কিংবা কুষ্টিয়াতে আছে রবী ঠাকুরের কুঠিবাড়ী ও টেগর লজ। লালনের মাজার ও সে উপলক্ষ্যে গড়ে ওঠা আজকের লালন কমপ্লেক্স, মীর মোশাররফ, আকবর হোসেন, বাঘা যতীনের বাস্তুভিটা। বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান, বাসস্থান- সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ ইত্যাদি ….। ঐতিহ্যবাহী ভারতবর্ষসহ বাংলাদেশে এরকম আরো আছে। আছে অনেক ধরনের কীর্তি ও পুরাকীর্তি। কিন্তু নারীর জন্য ঐতিহ্যবাহী সে আমলের পত্রিকা এখনও ঐতিহ্য বয়েই চলেছে- ধরে রেখেছে একনিষ্ঠ হয়ে, সেটা এই একটায় স্বর্ণস্বাক্ষি মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের প্রতিষ্ঠিত ‘বেগম’ পত্রিকা। আর তার মেয়ে জামাইয়ের মতো এমন নিঃস্বার্থ অবদানও যেন বাংলাদেশে এই প্রথম এই শেষ। আমি তো বলতে পারি- গ্রাম পর্যায়ে তৃণমূল থেকে হাজারো বাধা অতিক্রম করে সাহিত্য-লেখালেখির সিঁড়ি বেয়ে, এ পর্যন্ত আসা আমিও এক লড়াকু যোদ্ধা বা সাহিত্য সৈনিক। চেয়েছি আমার ‘স্বপ্নের দেশ’কে ভাষা আন্দোলকদের সম্মাননায় ও তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে তাদেরই করকোমলে উৎসর্গ করবো। সেই জায়গা থেকে আমার বাবা, বঙ্গবন্ধু এ. কে ফজলুল হক মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও এই ৩ গড়িয়সী মহিয়সীসহ সকল ভাষা আন্দোলকদের করকোমলে সম্মান করবো আমার সাধ্য মতো। আমি সেটাই করে চলেছি। আজ আমি ১শতটি সৃজনশীল গ্রন্থের প্রণেতা- ডাইরেক্ট লেখক এবং জাতীয় সচিত্র মাসিক ‘স্বপ্নের দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশক। বাংলাদেশ ভাষাসৈনিক প্রজন্মলীগ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি। বাংলাদেশ আধুনিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি। যতই তিনি আমার সম্পদ থেকে বঞিাচত করুণ, মানুষের ষড়যন্ত্রে হেড়ে গিয়ে। কিন্তু তবুও তার জন্যই আমার এসব। আর এতটুকু বয়সে যখন আমি ভালো করে চলা শিখি নাই, মানুষের চোখের দিকে চেয়ে, মুখের পানে তাকিয়ে, একজন মানুষ পরিচয়ে কথা বলা শিখি নাই। নারীর স্বত্ত্বাধিকার কি তা জানতে শিখি নাই, তখনই নূরজাহান বেগম আপা আমায় বলেছিলেন ‘তুমি পারবে। তোমার মধ্যে আছে সে সম্ভাবনা, আমি স্বয়ং তা দেখতে পাচ্ছি।’ বলেছিলেন- প্রতিভাটাকে ফুটিয়ে তুলতে হবে, বাস্তবায়ন করতে হবে। উনি আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, কুষ্টিয়াতে বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের শাখা খোলার এবং কাজ করার। আমি উনার পরামর্শ ও উৎসাহ প্রেরণা দেওয়া সেই কাজ করেছিলাম। যে কয় বছর বা যতদিন লেখিকা সংঘকে আমি নেতৃত্ব দিয়ে চালিয়েছিলাম বলা বাহুল্য জাতীয় পর্যায় ছাড়িয়েও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পৌঁছেছিল এর কর্ম এবং প্রচার-প্রসার। তখন ফেসবুকের প্রভাব ছিল না তাই তৃণমূল পর্যায়ে পৌছায় নাই হয়তো এখনকার মতো হাতে হাতে। কিন্তু যাদের জানাবার সেই পর্যন্ত অবশ্যই পৌছিয়েছে এবং তারা ঠিকই জানেন। বেগমের আপার সাথে সাক্ষাতের পূর্বে কয়েকখানা সম্পাদনা বই ও কয়েকখানা জাতীয় দৈনিকে আমার লেখার স্থান হলেও আমার একক বই ছিল মাত্র একটি। নাম ‘চাঁদ ভাঙন ও বেদনা’। প্রকাশের সাল-১৯৯৩ইং।
জাতীয় দৈনিক বলতে জনকন্ঠ, সংবাদ, সংগ্রাম, ইনকিলাব, তখন তো ইনকিলাব পত্রিকার বেশ প্রভাব ছিল, এই পত্রিকায় প্রথম লেখাটি ছাপা হওয়ার ঘটনাটি অকৎসাত বা অজান্তেই হয়। আমি বাড়ির হালট, পালান, খোলাট, একাকার করে একযোগে দৌড়ে দৌড়ে প্রচণ্ড রৌদ্রে ধান উড়ানো, ধান শুকানো, খড় শুকানোর কাজে জোড় পাল্লায় লড়ছিলাম। কারণ আমি তো ঘর সংসারের এগুলো সামলে আবার সাহিত্য চর্চা সাংবাদিকতা করতাম তাই। আমার কাজটা এভাবেই করতে হতো। একটু সময় ঐ পিছনে দিতে- সময় বানানোর জন্য। এমন সময় আমার মেজ ভাশুরের মেজ ছেলে দৌড়িয়ে আমার সামনে এসে বললো- আপনাকে এই মুহূর্তেই একটা পরীক্ষা দিতে হবে। নেন কাগজ কলম, এতে এই মুহূর্তে এখানে দাঁড়িয়ে আমার সামনেই লিখে দেন। এটা আমি পত্রিকায় নিজে পাঠাবো। এর কপিও রাখতে দেবোনা আপনাকে। এই লেখাটি যদি ছাপা হয়, পরীক্ষায় পাশ করেছেন ধরে আপনাকে লেখতে দেবো, বাধা দেবো না। যদি ছাপা না হয়, ফেল করেছেন ধরে- কোনদিন লিখতে দেবো না। লিখছেন জানলে ও দেখলে আপনার হাত কেটে দেওয়া হবে। পা ভেঙে ঘরে ফেলে রাখা হবে। খুুউব মনে আছে- রৌদ্রে খড়ের উপরে দাড়িয়ে, খড় নাড়ার কাদল হাতের ডানার সাথে হেলানো আকারে রেখে, কাগজটি কাদলের সাথে ঠেস্ দিয়ে ধরে, একটি ছড়া কবিতা লিখে ওর হাতে দিয়ে দিয়েছিলাম, কোন কথা না বলে। সপ্তাহ খানেকের মাথায় ও ছুটতে ছুটতে সামনে এসে আমার হাতে ইনকিলাব ধরিয়ে দিয়ে বললো- সেজো মা- যা লিখে দিয়েছিলেন হুবহুই তো তাই ছাপা হয়েছে! আপনি লিখবেন। অন্যের কথা বলতে পারবো না- তবে আমি তো আর কোনদিন আপনাকে বাধা দেবো না। এরপরে লেখা আমিই পাঠিয়েছি। দৈনিক ‘সোনার বাংলা’ নামে একটি পত্রিকা বের হতো। এখানে ‘দাদুর আসরে নজরুল’ আমার লেখা কিশোর উপন্যাস, ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়েছে। দৈনিক ‘জনকণ্ঠ’ পত্রিকার প্রথম প্রকাশের, প্রথম পরপর কয়েক সংখ্যায় আমার কবিতা ছিলো। জনকণ্ঠের মৃত: এখলাস উদ্দীন আহমেদ ছড়া, কবি নাসির আহমেদ কবিতা, আর অমায়িক ব্যবহারের অসংখ্য সুন্দরী মৃত: গুলশান আক্তার আপা দেখতেন নারীর পাতা ‘অপরাজিতা’। সংবাদ ও অন্যান্য পত্রিকাতেও কবিতা ছাপা হতো।
কোন কোন পত্রিকা আমার লেখা ছাপার জন্য চেকও দিয়েছে। তখন তো পরিশ্রমও করতে পারতাম, ধৈর্যও ছিল। এখন আর যেটা পারি না। অথচ এখন ইলেকট্রিক যুগে কত সুযোগ সুবিধা! আর মেয়ে সাহিত্য চর্চায় বাঁধাও এখন সেরকম নেই। আমাদের সময়ে ছিলো ঘরেও বাঁধা, পরেও বাঁধা। অর্থাৎ লেখালেখি করা বন্ধ করতে পারিবারিক বাধার সাথেই ছিলো সামাজিক বাধা। আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশীরা লুফে শত্রুতা করতো। অকারণে ঝাঁক বেঁধে ভেংচি কেটে তেড়ে আসতো। কথা বললেই মারবে তেমন মরিয়া হয়ে। আমার শাশুড়ি বলেছেন, মা বাবাও বলেছেন- আমার জন্য নাকি তাদের মান সম্মান ছিঁকেই উঠতেছে। মুখ দেখাতে পারে না সমাজে মানুষের কাছে। অথচ আমি শিশু থেকেই ছিলাম আরবীতে কারিয়ানা কোরআন পড়ায় ১নং শুদ্ধচার এবং ইসলামিক ব্যক্তিত্ব। নবীর বংশধর বলেও কথা। কেননা তারা নিজের থেকেই সৃজনশীল থাকেন। আমি কোরান গভীর রাত্রে অথবা ভোরে জোরে জোরে পড়তাম। মানুষ কান পেতে শুনতো আমার পাঠ। আমার কাছে আসতোও অনেকে শিখতে। নামাজ কালাম রোজা নির্ভুল পালন সর্বশ্রেষ্ঠভাবে করতাম। বাড়ি এবং আসেপাশে সবার মধ্যে, সংসারের কাজ বা অন্যান্য দায়িত্ব পালনও আমার মতো ত্রুটিমুক্তভাবে কেউ পালন করতে পারে নাই। আমি নাকি শিশু থেকেই এরকম পারদর্শী গুণি এবং জ্ঞানী ছিলাম। আয়লক্ষত করতে পারতাম অর্থাৎ ছিলাম খুবই সংসারী। তবুও পত্রিকা অফিসে যাওয়ার জন্য (বাসে উঠার আগের পথটুকু) পথ দিয়ে আমি যখন হেঁটে যেতাম। ঐ প্রশংসা না করে বরং কৃটিসাইজ করে পথের দুধার থেকে মানুষ বলতো- ঃ ঐ যে যায়। ঃ কে? ঃ মাষ্টারের বউ ঃ মাষ্টারের বউ কি করে? ঃ কলম ঘুরোয়। কিন্তু আমি বোবার মতো চুপচাপ আমার কাজে চলে গিয়েছি। তার জন্যও আবার বলেছে- আমার হাত-পা ভেঙে কেন ঘরে ফেলে রাখছে না! আমার অপরাধ আমি নারী। বউ মানুষ হয়ে, মেয়ে মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে, আমি কেন কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক হওয়ার সাধ করেছি?! ঘরের বাহির হয়েছি! এইসব বাধা তো আর এখন নাই। আবার এখন লেখার কপি করতে ফটোকপি করা যায়। ফোন, মোবাইল, ইমেইল, হোয়াটসএ্যাপ, উইচ্যাট, ইমু, মেসেঞ্জার প্রভৃতি বন্দোবস্ত আছে। কারেন্টে চলে ফ্যান লাইট। চাল ডাল সবজি ইত্যাদি তৈরী করা বাজারের কেনা সরঞ্জামে দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহ হয়। পানিও কুয়া থেকে বালতি টেনে উঠাতে বা টিউবয়েলে চাপ পর্যন্ত না দিলেও হয়। স্নান এর পানি রাত্রে পুকুর হতে টেনে এনে রাখতে হয় না।
তখন পেতাম না কাগজ কলম। ঢেকিতে ধানভেনে চাল, যাতা ঘুরিয়ে ডাল, সবজি মসলাপাতী সবই নিজে আবাদ ও হাতে তৈরী করে খেতে হতো। পাটায় বাটা মসলায় রান্না করতে হতো। মাঠের ৪০/৫০জন ধান কাটা ভাগার ভাত রানতে হতো বিশাল হাড়িতে, খড়কুটো দিয়ে মাটির চুলায়। এখন তো বেসন পাওয়া যায়। বেলেন্ডারও আছে। বড়া বা বেগুণি মসলা ইত্যাদি করতে মানুষ বেলেন্ডার ব্যবহার করে। তখন এসব পাটায় বেটে করতে হতো। হারিকেন বা ল্যাম্পের আলো, তবু কেরোসিন তেল থাকতো না। থাকলেও লেখালেখিতে ব্যবহার করতে দিতো না। লেখাটিও পোষ্ট করতে হতো, এখনকার মতন পাকা রাস্তা, ভ্যান রিক্সায় যাতায়াতের প্রচলন বা সুবিধা না থাকলেও বেশ দূরে যেয়ে! আবার লেখাটা পৌছালো কি না, সে খোঁজও নেওয়া যেত না। ইত্যাদি সমস্যার মধ্যেও যে লেখা পাঠাতাম, ছাপা হওয়া পত্রিকার কপি সংগ্রহ করতাম, গ্রামের অজ পাড়ায় অবোধ বা মূর্খদের নানান বাধা সামলে, বাস করে। কি করে সে সম্ভব হতো, আল্লাহই জানেন! যা এখন মনে উঠলেও ভয় করে। আরো ভয়করে, কারো সহযোগীতা ছাড়াই কি করে ও সব কাজ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি? সেটা ভাবলে! আমার পিছনে আল্লাহরই সার্বক্ষণিক সর্বোপরি দয়া আর্শীবাদ ঐশ্বরিক সহযোগীতা ছিল, এটাই সত্যি। যার বাইরে আর কিছু ভাবার বিন্দু মাত্রও অবকাশ নেই। যেখানে আমার জন্মদাতা জন্মদাত্রী বাবা মাই বাঁধা দিয়েছেন, আত্মীয় স্বজনকেও স্থান দিতে নিষেধ করেছিলেন! জীবনে আমার তো এর থেকে বড় বাধা এবং কষ্টের কারণ আর কিছু হতে পারে না। তবে মনে হয় আল্লাহর পর নূরজাহান বেগম আপারই সহযোগীতা ও আর্শিবাদ আমি পেয়েছি! ভালো কাজে একজন নারী, অপর একজন নারীকে পাশে পাওয়া, এটা যে কত বড় শক্তি। এ শক্তির কোন উপমা নেই, তুলনা উদাহরণও হয়না, যেটা উনি আমাকে দিয়েছিলেন, আর আমি উনার থেকে পেয়েছিলাম।
এই যে নূরজাহান আপার মধ্যে তার নূরের প্রভাবে একটা অন্ত দৃষ্টি ছিল- এটা আমায় ভাবায়। কি করে বুঝেছিলেন যে আমি পুরাপুরি লেখক হতে সক্ষম হবো! (জাতীয় পুরষ্কার কিন্তু এখানে কোন বিষয় না। ওটা বর্তমানে রাজনৈতিক চাল। পূর্বের সৃজনশীল আসল লেখকগণ এটা ছাড়ায় তারা লেখক। তাই এখানে কেউ ওটা ভাবলে তার অণ্যায় হবে। যেহেতু আমি রাজীনিতিমুক্ত তাই ওটা আমার জন্য নয় বুঝতে হবে।) উনি তো আমাকে না দেখেই তার পত্রিকার প্রচ্ছদে আমার ছবি ছাপিয়ে ছিলেন। তাঁর পত্রিকায় আমার লেখা ছাপিয়ে ছিলেন। শুধু নাকি লেখা পছন্দ করেই! এবং উনি বলেছিলেন- ‘মেয়েদের লেখা আমি সাধারণত ফেলি না। কারণ তাহলে ওরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে! ওরা তো অনুপ্রাণিত না হলে, অনুপ্রাণিত না থাকলে লেখা বাদ দিয়ে দেবে। আর তোমার লেখা ছাপিয়েছি পছন্দ করেই। তুমি ভালো লেখো। বিশেষ করে তোমার লেখায় জড়তা দূর্বলতা নাই। মেয়েদের লেখাও যে এতটা বস্তুনিষ্ঠ ঝরঝরেসহ ধারালো প্রকৃতির হতে পারে তা আমি তোমার লেখা থেকেই বুঝলাম’। তবে এই প্রশংসা আমাকে ভাবায় না। আমাকে ভাবায় তাঁর বলা উপরের ঐ ২লাইন কথা। এই যে লেখালেখিতে মেয়েদের উৎসাহ দিতে হবে, অনুপ্রাণিত করতে হবে, তা না হলে যদি লেখালেখি করা ছেড়ে দেয়? আহ! এই দুশ্চিন্তায়ও উনি ভুগেছেন। কে এই কথা বলতে পারে? এবং এইটা ভেবে কাজ করতে পারে? বুকের পাটায় এতবড় জোর, হিম্মত, স্বপ্নবোনা প্রত্যাশা আর এমন ভবিষৎ এর ডাক শুধু তো ঔরসজাত সন্তানের জন্য তার বাবা মায়েরই থাকে!। পৃথিবীতে দ্বিতীয় আর কারো থাকে বলে আমি বিশ্বাস করি না। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কও স্বার্থর জন্য গড়ে, টেকসই হয় ও বজায়ে থাকে। একটি মেয়ে চায় প্রতিষ্ঠিত ছেলেটিই তার স্বামী হোক। একটি ছেলে চায় বিশ্ব সুন্দরীর থেকেও একটু বেশি সুন্দর তার স্ত্রীটি হোক। আর গুণী হোক অন্তত জাতীর পিতার সহধর্মিনী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এর আদর্শের মতোন। সেখানে মা বাবা ছাড়া এবং বিনা স্বার্থে শর্তে এমন জোরের স্থান ও ভরসা আর কে দিতে পারে- কোথায় আছে- সেই জোরের মানুষ?!! তাইতো আমি মনে করি যেমন শেখ মুজিব জাতির পিতা, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বঙ্গমাতা। লেখিকাদেরও ‘লেখক মাতা’ অমর নূরজাহান বেগম, ‘বেগম’ পত্রিকার সম্পাদক আপা। বেগম রোকেয়া, নারী শিক্ষার মাতা। কবি সৈয়দা রাশিদা বারী নারী পুরুষ সম অধিকার প্রতিষ্ঠার মাতা। নূরজাহান অর্থ তো বিশ্বের আলো, আর আমার কাছে তিনিই নারী লেখিকাদের মনের পৃথিবীর আলো। যার অনুপ্রেরণা ছায়ার মতন পাশে থেকে, সাধারণ থেকে অসাধারণ করে তুলতে, ছোট পর্যায় থেকে বড় পর্যায়ে পৌঁছে দিতে, মেয়ে লেখকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে, সেই তো হতে পারেন ‘লেখক মাতা’। এ মুহূর্তে মনে পরছে আরো একটি কথা। নূরজাহান আপার অনেকগুলো নূর অন্তর্দৃষ্টি শক্তির মধ্যে আরো একটি নূর অন্তর্দৃষ্টি ছিল! সেটাও আমাকে এখনও মঞ্জুরিত করে। তখনও আমি ছিলাম যেমন অল্প বয়সী, তেমন গ্রাম্য। বোরকা নয় তবুও সব ঢাকা থাকতো। ভীত লাজুক বিনয়ী এবং অঢেল সংরক্ষণশীল সংযমী।
নূরজাহান আপার ধরণটা ছিল এ রকম কোন লেখিকা পাটুয়াটুলী তার কর্মশালায় পৌঁছাবার পর অফিস সহকারী বা একজন বয় অতিথি আপ্যায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে ছুটে আসতো। বসতে দিয়ে বাথরুম, হাতমুখ ধোয়ার পানি, খাবার পানি দেখিয়ে সে কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের ২জনের জন্য ধোয়া ওঠা সদ্য বানানো ঘন দুধের বড় ২মগ আকারের কাপ ভর্তি চা দিয়েছে। চায়ের সংগে বড় বড় দুটি করে ঢাকায় পুরী, সিংগারা, সমুচা, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাখরখানী এসবের যে কোন এক আইটেম থাকতো। দুপুর হলে এসব দেবার আগেই জিজ্ঞাসা করতো ভাত খাবো কিনা? আমরা কখনো অফিসে ভাত খাইনি। তবে বেগমের চা সিংগারা পুরি এমনই, যা খেলেও ভাত খাওয়ার মতোন ১বেলা থাকার এনার্জী অনায়াসেই পাওয়া যেত। আমি জীবনে এত স্থানে আপ্যায়ন পেয়েছি কিন্তু বেগম পত্রিকার আপ্যায়ন সত্যিই মনে রাখার মতোন। ঐ স্বাদের চা আর কোথাও আমি পাই না। নিজে তৈরি করলেও হয় না। যার সাথে মাত্র ২টি সমুচা অথবা সিংগারায় পেট ভরে শরীর মন দারুণ ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আর কত যে এনার্জি সংমিশ্রণের ছিলো। চাঙ্গা হয়ে উঠতাম পুনরায় অন্য কোন কর্ম তৎপরতায়। হয়তো আমরাও ক্ষুধার্থ অবস্থায় দুর্বল হয়ে থাকতাম বলেই ঐ আপ্যায়ন অত স্বাদে আর প্রশান্তিতে ভরিয়ে দিতো, ভালো লাগতো। যেটা আমি এবং আমার ছেলে রাজা মাঝে মাঝেই কথা প্রসঙ্গে বলি বা আলাপ করি। আমিও তো একজন গবেষক- যে কারণে একদিন চা দেওয়া ছেলেটির কাছে জিজ্ঞাসাও করেছি, যে এই চা এবং সিংগারা এমন কেন? বাইরে তো আমরাও কিনে খাই। এমন তো হয় না। সে তখন বলেছিলো দোকান ১টা নির্ধারণ আছে, ঐ দোকানী বেগম পত্রিকার চা নাস্তা আলাদা তৈরি করে দেয়। বাইরে সেটা দেয় না। এর মূল্যও আলাদা। অন্য একদিন কথা প্রসঙ্গে আপাকেও জিজ্ঞাসা করেছি। কেন তিনি আগে খাইয়ে পরে দেখা করেন? তিনি বলেছিলেন দূরদুরান্ত থেকে লেখিকারা কখন কোন পর্যায়ের কোন অবস্থার সম্মুখীন হয়ে এখানে পৌঁছান বা আসছেন সে তো আর আমি জানি না। তবে অনুধাবন করি নারী যখন তখন কিছু না হোক পারিবারিক সংসারের ধোকল তো আছেই এবং থাকবে। সংসারে নারীরা নিজেদের খাওয়ার ব্যাপারে উদাসীন। দিতে দিতে ফুরিয়ে গেলে, নিজের পর্যন্ত আর আসে না। সেটাকে নারীরা সমস্যা না মনে করে সেভাবেই থেকে যান। অমনইভাবে কাজে বেড়িয়ে পড়েন। পেটে ক্ষুধা নিয়ে আমার সামনে এসে কথা বলতে কষ্ট হবে, শরীরও ভেঙে শরীর আরো খারাপ হয়ে পরবে তাই আমি খাইয়ে নিই। আর এটা আমার বাবার নির্দেশ। বাবার কথা ছিল বেগম পত্রিকায় এলে, সেই মেয়েটিকে তার সঙ্গের মানুষটিসহ আগে খাইয়ে- পরে সাক্ষাত করবে। আর সাক্ষাতে তার এবং তার পরিবারের খোঁজ খবর আগে নেবে। আরে সর্বনাশ! পৃথিবীর ইতিহাসে এমন সহনীয় নিয়ম নারীর প্রতি আর কোথাও ছিল কিনা আমি সে জানি না। তবে আমি মনে করি বা আমার কাছে এটা হাজী মহসিনকেও ছাড়িয়ে যাবার মতোন যা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ও আপার অন্ত মানসিকতার সেবা।
পৃথিবীতে সেবা তো অনেক ধরণের আছে। সেবকও অনেক আছেন, অতীতেও ছিলো। নারীর সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি এমন উদার সহমর্মিতা অতীতে ছিল না, ‘বেগম’ ছাড়া আমরা পাই নাই। ভবিষ্যতে হলেও হতে পারে তবে সেটা আমরা পাবো কি না জানি না। যদি আরো কিছু পত্রিকা এরকম থাকতো, নারীর সাহিত্য সংস্কৃতির ধারা এগিয়ে দেবার জন্য। তাহলে আজ সাহিত্যে নারীর এতো ঘাটতি এত পিছনে নারীর অবস্থান হতো না। রতোও না এত পিছিয়ে। আমি তো মনে করি কারণ নারীরাও ভালোই সাংস্কৃতি চর্চা, সংবাদ পরিবেশন ও সাহিত্য লিখতে পারেন। শুধু সুযোগ আর সময়ের সঙ্কটেই পিছনে রয়েছেন। এই পিছনের আদমশুমারি করা বেশি কঠিন নয়। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যে নোবেল প্রাইস হতে- আজকের জাতীয় বাংলা একাডেমী স্বাধীনতা একুশে পদক পর্যন্তই শনাক্ত করলে নারী এবং পুরুষের সংখ্যা তাতেই বেড়িয়ে আসবে দিনের মতো পরিষ্কার হয়ে পানির মতো স্বচ্ছতায়। হ্যাঁ সমাজে পাওয়া যায় অনেক ধরনের সেবা বলতে যেমন- কন্যা দায় বা মেয়ের বিবাহ, ছেলের খাৎনা বা মুসলমানী দেওয়ানো, মৃত্যু হলে দাফন দেওয়া, কাফনের কাপড়, মৃত্যুর খানা-খয়রাত বা চল্লিশা করা। চিকিৎসা সেবা, ক্ষুধা নিবারণের জন্য খাওয়ানোর সেবা, এমনকি ক্ষুধার্থকে হোটেলে বসিয়ে যত ইচ্ছা যা ইচ্ছা পেট ভরে খেতেও বলে ইত্যাদি। আবার এখন দেখি টিউবয়েল ও বাড়িতে বাড়িতে স্যানেটারী ল্যাট্রিন করেও দিতে। ঘর উঠিয়ে দিচ্ছে অনেক সেবা সংস্থান। কিছুদিন আগে গেছে বয়স্ক শিক্ষার প্রবণতা। পোষাক বই ফ্রি, নাস্তা ফ্রি, যাতায়াত খরচও দিতো। কত রকম এনজিও প্রতিষ্ঠান এমন সেবা দেওয়ার জন্য পথ খুঁজে হয়রান। কিন্তু সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার ধারা অব্যাহত রাখতে একটা বই পত্র-পত্রিকা কিনে নিয়ে বা কিনে দিয়ে সহযোগিতা করবে না, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে। কোন নারী সেই চাহিদা প্রকাশ করলে ভনিতা বিনোদন বা বিলাসিতা করছে মনে করে, তার বাজে কথা বলতেও মুখ আটকায় না। ইতস্থিত হওয়া তো বহু দূরের। এই তো হলো সমস্যা! এসব ক্ষেত্রে যদি কোন নারী কোন ছেলের সহযোগিতার প্রতি হাত বাড়ান তো উক্ত জনৈক তাকে চরিত্রহীনা ধরে নিবেন। কুপ্রস্তাব দেবেন।! পুরুষের কুপ্রস্তাব এভোয়িড করতে করতেই তো নারীর জান যায়। প্রয়োজন মেটানো দূরের। তাই বলা যায়, প্রকৃতভাবে নারীর সাহিত্য সাংস্কৃতিক সেবা কিন্তু কেউই করে না। অথচ এই সেবাই সকল উর্ধ্বের সেবা। এই সেবা নিজেদের আত্মীয় পরিজনরাও করেন না। বরং তারা আরো অপবাদ দেয়, মেয়েটি নষ্ট হয়ে গেছে ও যাচ্ছে বলে! একে অপরের মধ্যে জানিয়ে দেয়- ঐ মেয়েটির কেউ লাই বা স্থান না দেবার জন্য- সহযোগিতা করাতো দূরের! মনে পড়ে বই বের করার জন্য কুষ্টিয়া হতে ঢাকাতে এসে এক কাপড়েই ঘুরতে ঘুরতে, যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আর পা চলে নাই- ওঠে নাই- তখন রাজা বলেছে চলেন আম্মা বেগম পত্রিকায় লেখাটা দিয়ে আসি। ঠিক তাইই করতাম। আমাদের রেষ্ট, খাওয়া, লেখা দেওয়া, লেখা ছাপা হওয়া পূর্বের পত্রিকার কপি নেওয়া, আপার সান্নিধ্য লাভে ভালোবাসা পাওয়া, সব কাজ একসাথে উদ্ধার হয়ে, পরিপূর্ণতা লাভ করে, অনেক খুশি মনে ফিরতাম উনার হতে! সে কি শান্তি! কি সুখ! তবু কিন্তু কোন নিকটজন বা আত্মীয় স্বজনের বাসায় অথবা অফিসে যেতে চায় নাই। যায়ও নাই। ঢাকায় বহু ধনী আত্মীয় স্বজন থাকা সত্তেও। কেননা ঢাকায় আমরা গ্রাম থেকে কেন এসেছি? এই নাক সিটকানো দেখা বা জবাবদিহিতা তাদেরকে দেওয়া বড় কঠিন ছিল। বেদনা দায়কও বটে। আমাদের বছরে তো না হলেও ১বার ঢাকায় আসা পরতো। আমার আব্বা দেশ ও ভাষার দায়ে জেল খাটা ভাষাসৈনিক হওয়াতেই বোধহয় বাংলাভাষার প্রতি ছিলাম এত বেশী দুর্বল। তাই ফেব্রুয়ারির মেলা উপলক্ষ্যে ভাষা শহীদ, ভাষাসৈনিক, ভাষাসংগ্রামীর শ্রদ্ধা জানাতে বইগুলো লিখে প্রকাশের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠতাম! যে কারণেই ঢাকাতে ছুটতে হতো। যদিও সব প্রকাশ করতে কখনো পারি নাই। আমরা কুষ্টিয়াতে ফিরে ঐ শান্তি নিয়েই আবার ঢাকা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতাম। ততদিন শুধু দিন গুনতাম, কবে ঢাকায় যাবো, পরিতৃপ্ত হবো? নূরজাহান আপার কাঁচা হলুদ মাখা সুন্দর সোনার বরণ উজ্জল মুখ, সোনার চেয়েও দামী, দেখলে শান্তি ও গর্বে ভরে যায় বুক। আমাকে লেখক হবার বাসনা যোগাবে। আর আমি তার সান্নিধ্য লাভে ধন্য হবো। এই স্বপ্ন স্রোতে ভেসে আবেগে আচ্ছন্দ্যে আমার কণ্ঠ মান্না দের নকল বা পরিকণ্ঠ হয়ে অজান্তেই মুখ ফুঁড়ে বেড়িয়ে গিয়েছে গান- ‘ধন্য আমি ধন্য হে, তোমার প্রেমেরে জন্য যে’ …। বলতে এক বিন্দু দ্বিধা নেই; সেই তো আমার মনের সারা বছরের প্রত্যাশা। ঈদ পুর্নরমিলনী, পূজা পার্বণ, দূর্গা, সরস্বতীর ভাড়ারা। খোকসার আন্তর্জাতিক কালী মন্দির, কুষ্টিয়ার রথের মেলা পরিদর্শন, বড়দিন, দোল পূর্ণিমা, মাঘি পূর্ণিমার তিথি- আরো ইত্যাদি জ্ঞাতী ও জাতি ধর্মের নানান ধর্ম পালনের সুখ ॥ রচনাকাল: ২০/০৪/২০১৯ইং থেকে ১৩.০১.২০২৪ইং, সকাল ১১টা।

Related Articles

Back to top button