সৈয়দা রাশিদা বারী: প্রায় ২যুগ গবেষণার পর বুঝলাম যে, নারীই পুরুষের বড় হওয়ার সর্ববৃহৎ ধারক বাহক। এখানে উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- বঙ্গবন্ধুর গর্ভধারিনী মা জান, সন্তান খোকাকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানুষের তালিকায় নাম লেখাতে প্রথম অবদান রেখেছেন। দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধুর স্ত্রীর অবদান লক্ষণীয়। তিনিই বাংলাদেশের জাতীয় মা অর্থাৎ জাতির মাতা। শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব অকৃত্রিম এবং দুঃসাহসিক ভাবেই স্বামীকে আপ্রাণ সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছিলেন। ফজিলাতুন নেছা জীবনের বিলাসিতা, বিনোদন ও সুখ শান্তির প্রতি বিন্দুমাত্রও ভ্রুক্ষেপণ করেন নাই। এটা পানির মতো স্বচ্ছ, জোস্নার মতো স্নায়িত। তাই তো তিনি হাসি মুখেই স্বামীকে জনগণের কাজ করতে দিয়েছিলেন, জরুরী ভিত্তিতে মুখ্য ভূমিকায় থেকে। কখনোই পরিবারের দায়িত্ব পালন করা নিয়ে চাপ সৃষ্টি করেন নাই। অশান্তি বাঁধান নাই বরং সকল ভাবেই ছাড় দিয়ে চেয়েছিলেন যে, স্বামীটি তার সোনায় সোহাগা ভাবে, বঙ্গবন্ধুতে পরিণত হওয়া। জাতির পিতাতে পরিণত হওয়া। তাই তিনি কখনোই স্বামীর প্রতি অসন্তুষ্টর প্রকাশ, মান—অভিমান, মুখ ভার ইত্যাদি করেন নাই। কৃতজ্ঞই থেকে স্বামীকে কৃতজ্ঞ করেছেন জ্ঞান ধ্যান শিক্ষার আলো দিয়ে! এটা যে কত বড় ত্যাগ স্বামীর প্রতি একজন স্ত্রীর, এ বলার অপেক্ষা রাখে না। আর একজন মা তো ছেলের উন্নতির জন্য, বিশ্ব বরেণ্যকারে গড়ে তুলতে নিজের প্রাণটা দিতেই প্রস্তত থাকেন। এভাবে শেখ সাহারা খাতুনও ছাড় না দিলে, ছেলেকে দিয়ে আয় ইনকামের ধান্দা করাতেন। আয় ইনকামের পথ দেখাতেন। সম্পদ গড়তে চাইতেন ছেলের উঠন্ত বা প্রাপ্ত বয়সে। কিন্তু সেটা না করিয়ে, না চেয়ে সেই পানে প্রত্যাশিত না হয়ে বরং তিনি নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং দেশ ও দশের কল্যাণের জন্য কাজ করতে, আরো উৎসাহ দেন। প্রকৃতভাবে এটা শিশুলব্ধি থেকেই বঙ্গবন্ধু মায়ের আদর্শে শিক্ষা প্রাপ্ত হয়েছেন। ঐ মায়ের হাতেই গড়া বা মানুষ হওয়া ফজিলাতুন্নেছা। তাই মা সাহারা সম্পূর্ণ নিজের স্বদিচ্ছায় তিনি ছেলের অন্তকর্ম মাতৃভাষা মাতৃভূমি এবং দেশের মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে সপে দিয়েছিলেন। আর তার ছেলে মুজিবের কর্মের হাল পাশে থেকে ধরতে ফজিলাতুন্নেছাকেই নির্বাচন করেছিলেন। যেন তার খোকা আরো ভালোভাবে শক্ত মজবুতকারে কাজ করতে অগ্রগতি থাকেন বা থাকতে পারেন। বাবা মা হারা হাতে গড়া কন্যাকেই তিনি নিজের পুত্রের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। পুত্রের অর্ধাঙ্গিনী করে দিয়েছিলেন। ওদিকে শাশুড়ির থেকে হাতে কলমে শিক্ষা নিয়ে জ্ঞানে দীক্ষিত, অনুপ্রাণিত হয়ে স্বামীকে সর্বাত্মকরণে সহযোগিতা করেছিলেন বলেই তো, সেই কন্যাও ফজিলাতুন্নেছা থেকে হলেন, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। এটা একটা কি মহাশিক্ষা ও দীক্ষা আবার শাশুড়ি মাতার অনুকরণ করায় মহাফসল লাভ। তিনিও শাশুড়ির ঘরে ওঠা ফলন। এখান থেকেও তো বিশ্বের নারীর শিক্ষা নেওয়া উচিত। যে শাশুড়ি মায়ের থেকেও আশীর্বাদ প্রাপ্ত হলে, জীবন মরণে ধন্য হওয়া যায়। অবশ্যই একইরূপ পুত্র ও পুত্র বধূর সমানে সমান অবস্থান হবেই- হতে বাধ্য, সে যেকোন বিষয়ে। দেশ মাটি মানুষের কল্যাণে কাজ করলেও দুজনেই মানব সমাজে মহামানব হওয়া সম্ভব। শাশুড়ি পুত্রর সাথে পুত্রবধূরও কল্যাণ চান। কিন্তু সে রকম হওয়া লাগে। সেটা লালনের গুরু ধরো ও গুরু ভজোরের মতোন দীক্ষিত গ্রহণ করতে হয়। তাই পুত্রের জন্য কন্যা মিলায়ে খুঁজে দেওয়া, মা-ই ভালো বোঝেন এবং সেটাই বেটার। কাজেই কোন পুত্র যদি তার জন্মদাত্রী মায়ের উপর ভরসা করে, মাকে দায়িত্ব দেয় তার স্ত্রী মিলিয়ে খুঁজে দিতে। তবে এর মতো ভালো আর হয় না। দুই পরিবারের জন্যও ভালো, দম্পতির জন্যও ভালো। প্রত্যেকটা মেয়ের স্বামীরই কিন্তু শাশুড়ির মালিক। এটা বুঝতে জানতে হবে। তাই হঠাৎ করে সেই শাশুড়ির হতে কোন মেয়েই শাশুড়ি মায়ের বুকের ধন, পুত্র সন্তানকে স্ত্রী হয়ে এসে, শাশুড়ি থেকে ছিনিয়ে নিতে হয় না জবরদস্তি হামলা করে। সংসারে নানান দোষ চাপিয়েও পলিটিক্স করে কেড়ে নিতে হয় না। করতে হয় না শাশুড়িকে অপমান-অসম্মান। দিতে হয় না আঘাত। বরং ধৈর্য ধরলে একটা সময় শাশুড়ি নিজেই পুত্রবধুকে সব কিছু বুঝিয়ে দেন। সেভাবেই যে পায় সেইতো হয় ঘরের লক্ষ্মী মহারাণী। সেই পুত্রবধূও শেষ জীবনে ঐ সম্মান শ্রদ্ধা ফিরিয়ে পান, তার পেটের সন্তান ও তার পুত্রবধূ দারা। জীবন ২দিনের কিন্তু কর্ম তো চিরদিনের। পৃথিবীর সমস্ত মানুষের মধ্যেই এই শিক্ষাবর্তী দীক্ষা বার্তা। নীতি আদর্শ জ্ঞান বিদ্যা থাকলেই বেস্ট। তারে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় না। আমার তো মনেই হয়, মা সাহারা খাতুন এবং ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, নারী জাতির উন্নয়ন উন্নতির জন্য আসল শিক্ষা প্রদীপ। ভালো শাশুড়ি ও ভালো পুত্রবধূ বানাবার বার্তাবাহক ইনশাল্লাহ। তাই মহান আল্লাহর দয়া আর্শীবাদে বাংলাদেশের মুজিবও মায়ের জন্যই ভাগ্যবান হয়ে গুণী স্ত্রীকে পেয়েছিলেন। যেমন জন্মদাত্রী মা— তেমন জীবন সঙ্গী বা সহধর্মিনী স্ত্রী। না হলে কিন্তু দেশের স্বার্থ, দশের স্বার্থ রক্ষায় মুজিব, নিজেকে সম্পূর্ন সমর্পণ উৎসর্গ করতে মোটেও পারতেন না। কতজনই আছেন না, জীবনের সময়ের অর্ধেক অর্থাৎ হাফ কোয়ার্টার বা পৌণে এক কিলো চলেই হাফিয়ে ওঠে। সেই পথ থেকে সরে দাঁড়ানো। বিয়ে করেও বউ পাগল বনে গুণবিদ্যার মাথা খেয়ে বসে অনেকে। এমনটা কবিতা লিখা কবি, সংবাদ লেখা সাংবাদিক, প্রভৃতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বও আছেন। যে আগে ঐ পথে ছিলেন এখন নাই। নেই নানান কারণে, পারিবারিক বাধা, সময় সংকট, অর্থ অভাব, মনেরও গন্ডগোল ইত্যাদি। বউ পাগলা হলেও হয়। বউ নিয়ে তার রঙ তামাশা করা ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি সময় এবং এনার্জি সেখানেও যায়। এরকম রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও হয়েছে। যেকোন কাজ লেগে বা ধরে থাকার মূল্যই আলাদা, প্রাপ্তীও অবশ্যই আছে। এখন যেন স্বাধীন, প্রতিষ্ঠিত দেশের আয় ইনকাম আছে। আয় ইনকামের পথও নতুনভাবে করে নেওয়া যায়। কিন্তু পূর্বে তো পরাধীন দেশ ছিল। তখন নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানোর মতো, বাপ দাদার অর্থ সম্পদ খুইয়ে রাজনৈতিক কর্মে লিপ্ত থাকা লাগতো। আর তাদের কোন শর্ত স্বার্থ ছিল না। তখন শুধু চেয়েছেন দেশ ও দশের শত্রুমুক্ত অবস্থান। ভাবতেন আর স্বপ্ন দেখতেন নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যত। তাদের অবর্তমানে নতুন প্রজন্মের সুন্দর সোনালী জীবন। বুকভরা এই প্রশান্তি নিয়েই তখন মানুষ, মানে রাজনীতিবিদগণ কাজ করেছেন। স্বদেশীয় প্রেমে কাজ করতে পেরেছেন। ঘরে যদি তেমন স্বদেশীয় প্রেম আত্মার, মা ও স্ত্রী তার থেকেছে, কোন চিন্তা থাকে নাই। কাজেই মা শাহারা খাতুন ও ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এই দুইজন ত্যাগী মহিয়সী নারীর প্রেরণা অনুপ্রেরণা উৎসা দেওয়া থেকে, ছাড় দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই কিন্তু খোকা, শেখ মুজিব থেকে হয়েছিলেন জাতির পিতা, হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। আর তাদের হাসু, শেখ হাসিনা থেকে হয়েছেন রাষ্ট্রনায়ক, দেশরত্ন, শিরোরত্ন হয়েছেন ৫বারের গৌরাবান্বিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ৪বার হয়েছেন একটানা প্রধানমন্ত্রী, এই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। তাই আমি বলতে চাই— পৃথিবীর বুকে শেখ সাহারা খাতুন, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এবং শেখ হাসিনা অবিস্বরণীয় মহান ৩জন মণীষিদের কাতারে মণীষি, গরীয়ান মহীয়ান ব্যক্তিত্ব! যিনারা কেউ বঙ্গবন্ধু সৃষ্টির ১ম কাড়িগর, কেউ ২য় কাড়িগর এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করার ফাইনাল বা সিরিয়াস কাড়িগর! অর্থাৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের ৩নম্বর কাড়িগর। ধাপও পার হয়েছে ৩টা। সেমিষ্টার, সেমিফাইনাল, ফাইনাল। কজেই বাংলাদেশের বুকে এই ৩তনয়াই বিশাল আদর্শের প্রতীক!! বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের ৩জন যুগশ্রেষ্ঠ নারী। যার মাপ তারা ৩ডায়মণ্ডই সমানে সমান!! বাংলাদেশে যাদের অবদানের কোন তুলনাই হয় না। আমি পরলোকগত হওয়া, ২জনের পবিত্র মানসিকতাবহ মানসীর প্রতি, শ্রদ্ধা অর্পণ করছি। তাদের আত্মার প্রতি জানাই বিনম্র ভক্তি। আল্লাহ এই দুই পবিত্র থেকেও পবিত্রতর কৃতিমান অমর মহিয়সীর বেহেস্ত নসীব দিন। আর সুন্দর মনের মানুষ ৫বারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু দান করুন। হ্যাঁ নারী দিবস উপলক্ষে- আমার সাহিত্য সাংস্কৃতিক গবেষণা- ২০২৪ বলছে ‘এই ৩জন কৃতি নারীই এখনও পর্যন্ত ফুলের সৌরভ চাঁদের গৌরব বাসন্তি জোস্না ছড়াচ্ছেন। বাংলাদেশের ইতিহাস বির্মিাণের যুগ শ্রেষ্ঠ নারী রূপে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাংলাদেশকে দীর্ঘজীবি করুণ। জয় ৩মহিয়সী বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।
22.02.2024ইং বিকাল ৪টা, বৃস্পতিবার।