টাইমস২৪ ডটনেট, ঢাকা: বাংলাদেশের উত্তর জনপদ জেলা নাটোরের বাসিন্দা গোলাম রাব্বানীর বয়স ৪০ বছর। মাথায় তেমন চুল নেই। পেশায় একজন গরু ব্যবসায়ী। তবে স্থানীয়রা তার নাম দিয়েছেন ‘ধোঁয়া মানব’। কারণ কাঁচা সুপারি দিয়ে পান খেলে তার মাথা দিয়ে অনবরত বের হয় ধোঁয়া। তাও আবার শুধু শীতকালে। এমন আজব ঘটনা দেখতে প্রতিনিয়ত লোকজন ভিড় করছেন রাব্বানীর বাড়িতে।
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার চকগাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা গোলাম রাব্বানীর এই বিস্ময়কর ও বিরল ঘটনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এরইমধ্যে তিন সদস্যের মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. রোজি আরার নির্দেশে সোমবার এ টিম গঠন করা হয়। আজ বুধবার প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার মাথা দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়ার কারণ খুঁজে দেখা হবে। রাব্বানীর পান খাওয়ার প্রতি ঝোঁক দীর্ঘদিন থেকে। তবে সাত থেকে আট বছর আগে থেকে কাঁচা সুপারি দিয়ে পান খেলে তার মাথা দিয়ে অনবরত ধোঁয়া বের হয় এবং তিনি ঘামতে থাকেন। আর এমন দৃশ্য শীতকালে দেখা গেলেও গরমকালে দেখা যায় না। আবার দিনের বেলাতেও এই ধোঁয়া চোখে পড়ে না। এই ধোঁয়া দেখে অনেকেই আনন্দ পান। সবার আনন্দ দেখে তারও ভালো লাগে। আর এ জন্য প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫টি পান খাওয়া হয় তার। তবে তার মাথা হারানোর চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। তার মাথা থেকে ধোঁয়া ওঠার দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন তার বাড়িতে শত শত মানুষ ভিড় করছেন। অনেকে ছবিও তুলছেন। অনেকে আবার ভিডিও ধারণ করছেন। রাব্বানী মিডিয়ার প্রশ্নে জানিয়েছেন, সাত থেকে আট বছর আগে থেকে ঘামের সঙ্গে মাথা দিয়ে ধোঁয়াও উঠতে শুরু হয়। ১৩ থেকে ১৪ বছর ধরে নিয়মিত কাঁচা সুপারি দিয়ে আমি খিলি পান খাই। পান খাওয়ার পর পুরো শরীর ঘেমে মাথা দিয়ে ধোঁয়া ওঠতে শুরু করে। আবার পান খাওয়া শেষ হলে তা বন্ধ হয়ে যায়। শুধু শীতকালে এমন ধোঁয়া ওঠে। তিনি আরও বলেন, আমার মাথা দিয়ে ধোঁয়া ওঠার পর থেকে ধীরে ধীরে চুল উঠে টাক হয়ে গেছে। এক সময় আমার মাথায় প্রচুর ঘন ও কালো চুল ছিল। প্রথম দিকে মাথা দিয়ে ধোঁয়া ওঠায় বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। পরে শরীরে কোনো অসুবিধা না হওয়ায় তেমন চিন্তা করি না। এলাকার ছেলেরা মাথা থেকে ধোঁয়া ওঠা দেখে বেশ আনন্দ পায়। আমিও তাদের সঙ্গে আনন্দ করি। যেখানেই যাই ছেলে-মেয়েরা আবদার করে পান খাওয়ায়। তারপর মাথা দিয়ে ধোঁয়া ওঠার দৃশ্য দেখে আনন্দ পায়। তবে ধোঁয়া ওঠার সময় শরীর দিয়ে প্রচণ্ড ঘাম বের হয়। পরে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। মানুষ আনন্দ পায়, তা দেখে আমিও আনন্দ পাই। রাব্বানীর স্ত্রী তানিয়া খাতুন জানান, শারীরিক সমস্যা না হওয়ায় ধোঁয়া বের হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কোনো চিকিৎসকের কাছে যাননি তারা। এখন অনেক লোকজন ধোঁয়া দেখার জন্য তাদের বাড়িতেও ভিড় করেন। অনেকেই এই ধোঁয়া দেখার জন্য তার স্বামীকে শখ করে পান খাওয়ান। গরু ব্যবাসায়ী ইকবাল হোসেন জানান, রাব্বানীর সঙ্গে প্রায় ২৫ বছর ধরে গরুর ব্যবসা করি। সে দীর্ঘদিন থেকে পান খান। তবে ইতিমধ্যে সে ভাইরাল হওয়ায় তার মাথা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। কখন জানি তার মাথাটাই হারিয়ে যায়।তাকে নিরাপত্তা কীভাবে দেব এটা নিয়ে চিন্তায় আছি। স্থানীয় আব্দুল সাত্তার বলেন, প্রায় ১৪ বছর থেকেই রাব্বানী পান খায়। গত ৭ থেকে ৮ বছর থেকে পান খেলেই মাথা দিয়ে ধোঁয়া ওঠে। প্রথম দিকে এ দৃশ্য দেখে সবাই অবাক হতাম। সে কাঁচা সুপারি দিয়ে পান খেলেই মাথার টাক দিয়ে ধোঁয়া বের হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, সম্প্রতি রাব্বানীর মাথা দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়ার বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। উৎসুক মানুষ আসছেন দেখতে। ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করছেন। অনেকেই দীর্ঘ সময় কাটাচ্ছেন গল্পে। আবার কেউ কেউ ফ্রি পান কিনে খাওয়াচ্ছেন। বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কাঁচা সুপারিতে এমন উপাদান আছে যা শরীরে অতিরিক্ত উত্তাপ সৃষ্টি করে। সেই উত্তাপ বের করে দিতে জলীয় বাষ্পের সৃষ্টি হয়। সে কারণে অতিরিক্ত ঘাম হয়। রাব্বানীর মাথা দিয়ে ধোঁয়া ওঠার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলা যাবে। এর আগে নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. রোজী আরা খাতুন বলেন, কাঁচা সুপারি দিয়ে পান খেলে নানা শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়। শরীরে দ্রুত তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তবে মাথা দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়ার কারণ জানতে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে রাব্বানীর শরীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রাজ্জাক জানান, সম্প্রতি বাগাতিপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের চকগাজিপুর গ্রামের গোলাম রাব্বানীর পান খেলে মাথা দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. রোজি আরা নির্দেশ দিলে তিন সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়। ওই টিমে বাগাতিপাড়া উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান করা হয়েছে। এর অন্য দুই সদস্যরা হলেন- স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এএইচএম আনিসুজ্জামান পিয়াস এবং আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সোহানুর রহমান। গঠিত মেডিক্যাল টিম আগামীকাল বুধবার গোলাম রাব্বানীর প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন এবং কাঁচা সুপারি দিয়ে পান খেলে তার মাথা দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়ার কারণ খুঁজে দেখবেন।