সারাদেশ

তাপপ্রবাহে পুড়ছে বাংলাদেশ

টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: সারা বাংলাদেশে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। তীব্র তাপপ্রবাহে জনশূন্য হয়ে পড়েছে শহরের রাস্তাঘাট। গরমে গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউই। ঢাকাসহ সারাদেশে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি হয়েছে। অসহনীয় এ গরমের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ঢাকায় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকে রাজধানীসহ সারাদেশে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে চ্য়ুাডাঙ্গায় ২, পাবনায় একজন, চট্টগ্রামে ২ জন, গাজীপুরে ১ জন ও রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ, বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন। দাবদাহে স্বস্তি পেতে শরীর-মন যখন ছায়া খোঁজে, তখন রুটি-রুজির জন্য বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার হচ্ছেন রিকশা ও ভ্যানচালকরা। যাত্রী নিয়ে মগবাজার থেকে মালিবাগ রেলগেট হয়ে রামপুরা পর্যন্ত এসেছেন রিকশাচালক ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, এত গরমে জীবন আর চলে না। দেখেন না ঘামে পুরো শরীর ভিজে গেছে। যাত্রীও খুব কম, খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। আমার মতো যারা শ্রমজীবী তাদের গরম-শীত-বৃষ্টি কী? প্রতিদিন বের হতে হয়। রোদে পুড়ে যাচ্ছি, শরীর বেয়ে ঘাম পড়ছে, তবুও যাত্রী টানতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে যাত্রী না থাকলে কোনো গাছ পেলে তার নিচে শরীর জুড়িয়ে নিচ্ছি। কাজে বের না হলে তো পরিবারের সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ২১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা থেকে ভ্যানে করে বর্জ্য অপসারণ করছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী খাদেমুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিটি বাসা বাড়ি, ফ্ল্যাট থেকে টেনে নামাতে হয় বর্জ্য। এরপর সেগুলো ভ্যানে লোড করে হেঁটে হেঁটে টেনে নিয়ে যেতে হয়। গত কয়েক দিনের অতিরিক্ত গরমে জীবন যায় যায় অবস্থা। বর্জ্য টেনে আনার সময় শরীরে আর কিছু থাকে না, মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে পথের পাশে বসে পড়তে হয়। বলতে গেলে দিন-রাত সবসময় তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডে যাত্রী নামিয়ে অপেক্ষা করছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, গরমে সিএনজির মধ্যে আর বসে থাকা যায় না। যেহেতু এটাই আমার পেশা, তাই এই অতিরিক্ত গরমেও চালাতে হয় সিএনজি। একদিকে প্রকৃতির গরম, অন্যদিকে সিএনজির ভেতরের গরম। সব মিলিয়ে সারা দিনে পুড়ে যায় শরীর। মাঝে মাঝে যাত্রী না থাকলে রাস্তার পাশের গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। আমরা যারা শ্রমজীবী তাদের কাজ না করলে তো আর চলবে না। কষ্ট হয় খুব, ঘেমে ভিজে যাই, মাথার ঘাম পায়ে পড়ে। তবুও কাজ তো করতে হবে।
এদিকে সারা দেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৫ দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। যেহেতু এরপর শুক্র-শনিবার রয়েছে তাই বন্ধটা টানা ৭ দিনে গিয়ে ঠেকছে। আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে খুলবে স্কুল-কলেজ।
শনিবার যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। অতি তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে ওই জেলা। চুয়াডাঙ্গায়ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গার ঠাকুরপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে জাকির হোসেন অত্যধিক গরমে হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন। তিনি ঠাকুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি ছিলেন। শনিবার সকালে ধান খেতে সেচ দিতে যান জাকির। এসময় তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরজন দামুড়হুদা ইউনিয়ন পরিষদ পাড়ার আজিম উদ্দীনের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন হিটস্টোকে মারা গেছেন। তিনি বিকেল ৩টার দিকে অত্যধিক গরমে নিজ বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন মর্জিনা খাতুন। পরে তাকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হেলেনা আক্তার নিপা বলেন, স্ট্রোকজনিত কারণে জাকির ও মর্জিনাকে হাসপাতালে আনা হয়। তবে তার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে পাবনা শহরের শালগাড়িয়া এলাকায় মারা গেছেন সুকুমার দাস। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি রূপকথা রোড এলাকার একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। তীব্র গরমে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রফিকুল হাসান বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই সুকুমার দাসের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রামে হিটস্ট্রোকে ছয় মাস বয়সী এক শিশু ও ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। নিহত বৃদ্ধের নাম ছালেহ আহমদ শাহ (৭০)। ছালেহ আহমদের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের উত্তর পরুয়াপাড়া এলাকায়। ছালেহ আহমদের ছেলে নজরুল ইসলাম জানান, তাঁর বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর তাকে আনোয়ারা হলি হেলথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আনোয়ারা হলি হেলথের পরিচালক সাইফুল ইসলাম শামীম বলেন, হাসপাতালে আসার আগেই ছালেহ আহমদের মৃত্যু হয়েছে। তিনি হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন।
এদিকে একই জেলার বোয়ালখালী উপজেলায় সাফা নামের ছয় মাস বয়সী এক কন্যা শিশুর মৃত্যু ঘটে। উপজেলার পশ্চিম শাকপুরা ২নং ওয়ার্ড আনজিরমারটেক সৈয়দ আলমের নতুন বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। তার বাবার নাম মো. নিজাম উদ্দীন। নিহতের বাবা নিজাম উদ্দীন বলেন, ভোরে মায়ের বুকের দুধ পান করার কিছুক্ষণ পর সাফা ঘুমিয়ে যায়। সে সময় ঘরে বিদ্যুৎ ছিল না। সকাল সাতটায় মেয়েকে কোলে নেওয়ার পর তার শরীর ঠান্ডা অনুভব হলে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সাবরিনা আকতার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের ধারণা বিদ্যুৎ না থাকায় সে হিট স্ট্রোকে মারা গেছে। এছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ির জেলখানা রোডে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বিকেলে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম আশরাফ উদ্দিন। সোহেল রানা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এনায়েতপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
এদিকে শনিবার বিকেলে রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় এক বৃদ্ধ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে তার না পরিচয় জানা যায়নি। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ফকিরাপুল ট্রাফিক সিগন্যাল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে মতিঝিল থানা পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু জাফর সাংবাদিকদের জানান, রোগে আক্রান্তের পাশাপাশি প্রচণ্ড গরমের কারণে মৃত্যু হতে পারে।
সূত্র আরও জানায়, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলে অব্যাহত তীব্র তাপদাহ রূপ নিয়েছে অতি তীব্র তাপদাহে। গত কয়েকদিন তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ওঠানামা করলেও পারদ চড়েছে ৪২ ডিগ্রির ঘরে। টানা চারদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এই অঞ্চলে। গতকাল বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে দাবি করছে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের প্রখরতা যেমন বাড়ছে, তেমনি বেলা গড়ালেও উত্তাপ কমছে না। দিন ও রাতের তাপমাত্রায় খুব বেশি পার্থক্য না থাকায় দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে এখানকার জনজীবন।
এদিকে, তীব্র তাপদাহে জনসাধারণকে সচেতন করতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করে পথচারী ও এলাকাবাসীকে সতর্ক করছে জেলা প্রশাসন। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
অপরদিকে যশোরে তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। অতি তীব্র তাপপ্রবাহে জনশূন্য হয়ে পড়েছে শহরের রাস্তাঘাট। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউই। যাত্রীর অপেক্ষায় অলস সময় পার করছেন হাতেগোনা যানবাহনের চালকেরা। গতকাল শনিবার বিকেল পৌনে তিনটার দিকে যশোর বিমানবন্দর মতিউর রহমান ঘাঁটিস্থ আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৩৫ শতাংশ। তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে।
শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা মোড় থেকে শুরু করে সিভিল কোর্টের মোড় হয়ে চাঁচড়া চেকপোস্ট হাইওয়ে পর্যন্ত পুরো আড়াই কিলোমিটার সড়কে শুক্রবার ব্যতীত প্রতিদিনই তীব্র যানজট লেগে থাকে। শহরের প্রবেশপথ এ সড়ক দিয়ে মানুষজন বিভিন্ন অফিস-আদালত, হাসপাতাল ও স্কুল-কলেজে যাতায়াত করে। ফলে মানুষের উপস্থিতি এবং যানবাহনের চলাচল সব থেকে বেশি থাকে সড়কটিতে। তবে শনিবার সড়কটির চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। তীব্র তাপদাহে জনশূন্য হয়ে পড়েছে পুরো সড়কটি। মানুষের উপস্থিতি যেমন কম, তেমনি যানবাহনের উপস্থিতিও ছিল নগণ্য। শুধু মুজিব সড়কই নয়, শহরের বড়বাজারসংলগ্ন দড়াটানা মোড়, বকুলতলা, গরিব শাহ সড়ক, জেল রোডসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো জনশূন্য হয়ে পড়েছে। এ সকল সড়কেও নেই যানবাহনের উপস্থিতি। দু-একটা ইজিবাইক, রিকশা দেখা গেলেও যাত্রীর অপেক্ষায় মোড়ে মোড়ে বসে থাকতে দেখা গেছে চালকদের।
শহরের জিরো পয়েন্টে রাস্তার ওপর রিকশা রেখে জজ কোর্টের প্রাচীরের গায়ে হেলান দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন রিকশাচালক জমির হোসেন। তিনি বলেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহর পুরো ফাঁকা হয়ে গেছে। এত গরমে মানুষ বের হবে কী করে? পেটের দায়ে বের হয়ে যাত্রী পাচ্ছি না। ভাড়ার রিকশা চালাই, মহাজনকে দেওয়ার মতো টাকা এখনও ওঠেনি। নিজের জন্যে তো দূরের কথা। তবে গত শুক্রবার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দিন বৃহস্পতিবার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বুধবার ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গত মঙ্গলবার এপ্রিল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
যশোর মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক ডা. আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন, এই সময়ে ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, পক্স, হিটস্ট্রোক, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি হতে পারে। প্রচণ্ড গরম থেকে মুক্তি পেতে কেউ যেন ডিপ ফ্রিজের পানি পান না করেন। এ সময় প্রচুর পানি, ডাবের পানি, দেশি ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন। দিনমজুর বিশেষ করে কৃষকরা যেন বেলা ১১টার মধ্যে এবং বিকালে তাপমাত্রা কমলে কাজ করেন সেই পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা।
শনিবার বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এছাড়া, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসমূহে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। রাজশাহী ও পাবনা জেলাসহ খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, ফেনী, কক্সবাজার, চাঁদপুর ও রাঙ্গামাটি জেলাসহ রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে। আগামী পাঁচ দিনে আবহাওয়া পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।

Related Articles

Back to top button