সারাদেশ

গাজীপুরে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৭ বগি লাইনচ্যুত

টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: বাংলাদেশে গাজীপুরের বনখড়িয়া এলাকায় বুধবার ভোররাত ৪টার দিকে দুর্বৃত্তরা রেললাইন কেটে ফেলায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। ট্রেন দুঘর্টনায় আসলাম হোসেন নামে একজন নিহত এবং আহত হয়েছেন ১২ জন। এ দুর্ঘটনায় লোকোমাস্টার এমদাদুল হক, সহকারী লোকোমোস্টার সজিব মিয়া গুরুতর আহত হয়েছেন। ট্রেন দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। এরপর উদ্ধারকারী দল লাইন সংস্কারে কাজ শুরু করেছে। তিনটি ট্রেনের শিডিউল বাতিল করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেললাইনের ৬০০ ফুট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রেন দুর্ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্য কমিটি ঘটন করা হয়েছে।
জানা গেছে, গাজীপুরের ভাওয়ালে রেললাইন কেটে ফেলায় ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় ৬০০ ফুট রেললাইন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লাইনচ্যুত ৭টি বগিও ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন সংস্কারে কাজ করছে রেলওয়ে। ফলে এ পথে চলাচলকারী ট্রেনগুলো বিকল্পে পথে চলাচল করছে। এ ছাড়া প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চলা তিনটি ট্রেনের নির্ধারিত যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোর চারটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের ভাওয়াল রেল স্টেশন ও রাজেন্দ্রপুর রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী বন খড়িয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর ঢাকা থেকে সকাল পৌনে ৯টায় ও এর কিছু সময় পর ময়মনসিংহ থেকে অপর আরেকটি রিলিফ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। এর আধা ঘণ্টা পর আরও দুটি রিলিফ ট্রেন একসঙ্গে ট্রেনের দুই পাশ থেকে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। পাশাপাশি রেলওয়ের দুই শতাধিক সদস্য লাইন মেরামতে কাজ করছেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, দুর্ঘটনায় শুধু রেললাইনের বগি ও ইঞ্জিনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, প্রায় ৬০০ ফুট রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১০০টি স্লিপার পুরোপুরি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তিনশ ফুট লাইনে নতুন করে পাত বসানো হচ্ছে।
রেলওয়ের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা-২ মো. মোশারেফ হোসেন ভূঁইয়া জানান, গাজীপুরের জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ রেললাইনের ভাওয়াল রেলস্টেশন এলাকায় দুর্বৃত্তরা গ্যাস দিয়ে রেললাইন কেটে ফেলেছে। এতে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ কমিউটার ট্রেনের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ রুটে রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় ঢাকা থেকে ময়মসিংহে চলাচলকারী ট্রেনগুলো ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে চলাচল করছে। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে তিস্তা এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা দেরিতে হলেও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে পরিচালনা করা হচ্ছে। অপরিদকে ভোরে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন গাজীপুরের শ্রীপুরের কাওরাইদ রেলস্টেশন এলাকায় এসে থেমে ছিল। পরে কাওরাইদ স্টেশন থেকে যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন ঘুরিয়ে ময়মনসিংহ স্টেশনে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ সড়ক ধরে যমুনা এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। তিনি আরও বলেন, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত তিনটি ট্রেন বলাকা কমিউটার, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ও মহুয়া কমিউটার ট্রেন পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলের স্টেশন মাস্টার হানিফ আলী বলেন, গতকাল বুধবার ভোর ৪টার চারটার দিকে রাজেন্দ্রপুর স্টেশন ছেড়ে আসে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেক্স ট্রেন। কিছুদূর যাওয়ার পর ইঞ্জিনসহ বগিগুলো লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। এতে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ লাইনে রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুনেছি দুর্বৃত্তরা রেল লাইন কেটে ফেলায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের ডি এ ডি আরিফিন সিদ্দিক জানান, গাজীপুরের ভাওয়াল রেলস্টেশন এলাকায় ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের ৭টি বগী লাইনচ্যুত হয়েছে। ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১২ জন।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে কয়েক হাজার কিলোমিটার রেললাইন রয়েছে। নির্বিঘ্নে চলাচলে এখন দেশের মানুষের আস্থার জায়গা ট্রেন। এখানে যারা নাশকতা করেছে, এত বড় একটি দুর্ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা যারা করেছে, তাদের সবাইকে খুঁজে বের করব আমরা। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনা তদন্তের মাধ্যমে আমরা যে ক্লু পাব, তাদের প্ল্যান, প্রিপারেশন এগুলো জানব। এখানে রেললাইনকে গলিয়ে ফেলা হয়েছে, অক্সিজেন ও ইথেন গ্যাস একসাথে সংযুক্ত করে দেড় দুই হাজার তাপমাত্রা হয়ে যায়, এ ধরনের ম্যাকানিজম যারা দিয়েছে, যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের সবাইকে আমরা আইনের আওতায় আনব। বাংলাদেশে যেন আর কেউ ট্রেনে নাশকতা চালাতে না পারে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।
অপরদিকে, গাজীপুরে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়, রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় ও গাজীপুর জেলা প্রশাসন থেকে পৃথক কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের ৭ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বিভাগীয় সংকেত টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী সৌমিক সাওন কবিরকে। এই কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে ঘটনাস্থলে গিয়ে কমিটি কাজ শুরু করেছে।

Related Articles

Back to top button