জাতীয়সারাদেশ

মশার উৎপাতে ঢাকাবাসী অতিষ্ঠ

টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় ভয়ঙ্করহারে বেড়েছে মশার উপদ্রব। দিনের বেলাতেও বাড়িঘরে মশার উৎপাত চলে। সন্ধ্যা থেকে মশার আক্রমণে ঘরে বাইরে আরো বেড়ে যায়। খোলা জায়গায় আরও বেশি। মশার উপদ্রব থেকে রাজধানীবাসীকে নিস্তার দিতে নতুন বছরে বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা করেছে দুই সিটি কর্পোরেশন। অথচ উত্তর বা দক্ষিণ দুই সিটির মানুষই মশার উপদ্রবে অস্থির। ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া থেকে বাঁচতে তাই গত বছরের ব্যর্থতা ভুলে মশক নিধনে নতুন বছরে নতুন উদ্যমে কাজ শুরুর দাবি জানিয়েছে নগরবাসী।
এদিকে মশা মারতে সিটি করপোরেশেন তৎপরতা খুব বেশি দেখা যায় না। কোন কোন এলাকায় ওষুধ ছিটানো হলেও তাতে খুব একটা কাজ হয় না বলে অভিযোগ অনেকের। কিটতত্ত্ববিদরা বলছেন, কিউলেক্স মশা বেড়ে যাওয়ায় চিকনগুনিয়া রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। রাজধানীবাসীকে ভাবাচ্ছে মশার উপদ্রব। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রায় সব এলাকায় মশার উৎপাত বেড়েছে। দিন কিংবা রাত মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে নগরবাসী। রাজধানীর অভিজাত গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকায় মশার উৎপাত যেন বেশি। সন্ধ্যা নামলেই খোলা জায়গা মশার ভনভনানিতে মানুষের টেকা দায়। উচু ভবনেও মশার উৎপাত বলে জানান বাসিন্দারা।
কীটতত্ত্ববিদরা জানান, কিউলেক্স মশা সারা বছরই দেখা যায়। তবে নভেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত এর উৎপাত বেশি। এখন যে তাপমাত্রা বিরাজ করছে তা এই মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত। তাই সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রম বাড়ানোর দাবি নগরবাসীর। কিউলেক্স মশার পাশাপাশি ডেঙ্গুর বাহক এডিসের প্রজনন স্থান ধ্বংসে নগর কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান রাজধানীবাসী।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ঢাকার দুই সিটিতে প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট ও কাভার্ড ড্রেন রয়েছে। যেগুলোয় দুই সিটি মশার ওষুধ ছিটাতে পারে না। পাশাপাশি প্লাস্টিক দ্রব্যসামগ্রী, পলিথিন, ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন আবর্জনায় ড্রেনগুলো ভরাট থাকে। যে কারণে ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না। এ জমাটবদ্ধ পানিতে কিউলেক্স বংশ বিস্তার করছে। এসব স্থানে মশার প্রজনন ধ্বংস করতে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করছে না। এ ছাড়াও জলাশয়, খাল, নর্দমা এবং যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিক দ্রব্য ও ডাবের খোসার পানিতেও ভয়াবহরূপে মশার বংশ বিস্তার ঘটছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে আতঙ্কজনক।
সূত্রমতে, মশক নিধনে দুই সিটির পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। তারপরও নগরবাসীকে কেন মশার ধকল সইতে হচ্ছে, এমন প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। সরেজমিন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জুরাইনের ওয়াসা গলি ঘুরে দেখা গেছে পাশের খালটিতে ময়লার স্তূপ। যেখানে প্রতিমুহূর্তে জন্ম নিচ্ছে অসংখ্য মশা। দিনের বেলাতেই যখন মশার উপদ্রব থেকে বাঁচার উপায় নেই। সন্ধ্যার পর সেখানে টেকাই মুশকিল। জুরাইন ছাড়াও কদমতলী, যাত্রাবাড়ী, মুগদা, বাসাবো, খিলগাঁওসহ আরও অনেক এলাকাতেই মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ নগরবাসী।
জানা যায়, ডিএসসিসির শনির আখড়া, রায়েরবাগ, গোড়ান, ধলপুর এবং ডিএনসিসির উত্তরা, তুরাগ, বাড্ডা, সাঁতারকুল, ডুমনি, মিরপুর, কুড়িল, কল্যাণপুর এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে নগরজীবন। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহে মশার দাপটে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে রাজধানীবাসী। দক্ষিণ সিটি ছাড়া উত্তর ঢাকার মিরপুর, কল্যাণপুর, ডুমনি, ভাটারা এলাকাতেও দুই সপ্তাহে মশার উপদ্রব বেড়েছে দ্বিগুণ। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সিটি করপোরেশন মশার বিস্তার বেড়ে যাওয়ার দায় এড়াতে পারে না। সময়মতো কার্যকর ওষুধ না ছিটানোয় মশা বেড়েছে। পাশাপাশি তারা যেসব ওষুধ দিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ তারা যে ওষুধ ছিটায়, তাতে মশা নিধন হয় না; বরং বায়ুদূষণ হয়। মশককর্মীরা ওষুধ ছিটাতে অনীহা দেখান।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, বর্তমানে যেসব মশার কামড়ে নগরবাসী অতিষ্ঠ তার ৯৯ ভাগ কিউলেক্স মশা। আর মশার খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় ড্রেন নর্দমার পচা পানি। যখন শীতের পরে তাপমাত্রা বাড়ে, মশার জীবচক্রের গতিশীলতা বেড়ে যায়। এই সময়ে মশা ডিম বেশি পাড়ে। পূর্ণাঙ্গ মশা এবং লার্ভা দমনে জরুরিভিত্তিতে ক্রাশ প্রোগ্রাম প্রয়োজন। পাশাপাশি নর্দমা ও খাল পরিষ্কার ও বাসাবাড়ির আশপাশে ওষুধ ছিটাতে হবে। সিটি কর্পোরেশন বলছে, মশা নিধনে হটস্পট চিহ্নিত করে অভিযান চলছে। নতুন বছরে বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা নিয়ে তাদের কাজ চলমান রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশনের বাজেট ১০১ কোটি টাকা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ডক্টর কবিরুল বাশার বলেছেন, খাল পরিষ্কারের কারণে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে এ ঠিক না। খাল পরিষ্কার করলে সেখানে সাথে সাথে লার্ভি সাইট (মশার ডিম ধ্বংস করার ওষুধ) প্রয়োগ করার কথা। মশার উৎপাত বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রতি বছরই এই সময় প্রাকৃতিকভাবে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। পচা পানিতে এ মশার বংশ বিস্তার করে। এ সময় পানিতে অর্গানিক কমপাউন্ড বেড়ে যায়। এটা মশা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
মশক নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে কবিরুল বাশার আরও বলেন, প্রতি সাত দিন অন্তর অন্তর এডাল্টি সাইট ও লার্ভি সাইট প্রয়োগ করেত হবে। নিয়মিত জলাশয় ও পানি জমে থাকার স্থানগুলো পরিষ্কার করতে হবে। তবে একবার ওষুধ দিয়ে আবার ১০-১৫ দিন পর দিলে হবে না। মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে প্রতি সাত দিন পরপরই ওষুধ প্রয়োগ করার পরামর্শ দেন এ কীটতত্ত্ববিদ।

Related Articles

Back to top button