জাতীয়

চাঁদাবাজি-মজুতদারি বন্ধে জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ: প্রধানমন্ত্রী

টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সব জায়গায় চাঁদাবাজি এবং মজুতদারি বন্ধ করতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে যাতে না আসতে পারে, বার বার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। জনগণ আমাদের শক্তি, তারা চেয়েছে বলে ক্ষমতায় এসেছি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ আমাদের শক্তি। এ দলটির নেতাকর্মীদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা এখানে। বার বার নির্বাচন নিয়ে চক্রান্ত হয়েছে। সব চক্রান্ত মোকাবিলা করে আমরা ক্ষমতায় এসেছি। গতকাল শনিবার সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ নির্দেশনা দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সব জায়গায় চাঁদাবাজি এবং মজুতদারি বন্ধ করতে হবে। আপনারা বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধি, এতে আপনাদের নজর দিতে হবে। কৃষক যাতে প্রকৃত মূল্য পায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। চাঁদাবাজি ও মজুতদারির জন্য যাতে পণ্যের দাম না বাড়ে সেটি দেখতে হবে।
বিশেষ বর্ধিত সভা যেন মিলন মেলা: বিশেষ বর্ধিত সভাকে জাতীয় নির্বাচনের পর দলীয় নেতাদের ‘মিলন মেলা’ হিসেবে বর্ণনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এতে তৃণমূলের নেতাদের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’, ‘আগামী উপজেলা নির্বাচন’ ও ‘দ্রব্যমূল্য কমানো’র বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন তিনি। ‘দ্বাদশ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়েছে’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, বলে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হয়নিÍ তাদের সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে, কী কী ক্ষেত্র দেখে বলছে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি, এটা তাদের বলতে হবে। সেটা বলে না, বলে যাচ্ছেÍ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হয় নাই। কিছু দেশীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায় হতে এ ধরনের কথা বলা হয়। যে দেশই বলুক, তাদের কাছে আমার প্রশ্নÍ কীভাবে, কোথায় সমস্যা, তাদের বলতে হবে। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে নির্বাচন হয়েছে, সেটা এখনও তাদের বিরোধীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এমনকি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় খুনোখুনি হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচনটা অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। জনপ্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই নিরপেক্ষভাবে দায়িত্বপালন করেছে।
নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছিল: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভোটাররা যেন কেন্দ্রে না আসেন, নির্বাচনটা যেন অবাধ না হয়, নির্বাচনটা যেন হতে না পারে বা নির্বাচন হওয়ার পরে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলবে-এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি… কাজেই নিষেধাজ্ঞা দাও, ওইটা দাও। আমাদের যখন বলেছিল, নিষেধাজ্ঞা দেবে। তখন আমিও বলে দিয়েছি, দরকার হলে আমরাও নিষেধাজ্ঞা দেবো, আমারও দিতে পারি, আমি নিষেধাজ্ঞার রীতিনীতি জানি বলেই বলেছি। তিনি বলেন, এত কথার মধ্যে আমাদের দেশটা যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে এবারের নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কারণ অন্তত প্রতিপক্ষ থাকুক, নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হোক, ভোটার আসবে, নিজেদের পছন্দমতো ভোট দেবে, যাকে খুশি তাকে দেবে, সেই অধিকারটুকু জনগণ পাক। সেইভাবে নির্বাচন করেছি বলেই আজকে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছে না। অনেকেই বলে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারছে না। এই কথাটা আমাদের সব নেতাকর্মীদের মাথায় রাখতে হবে, মনে রাখতে হবে।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সৃষ্ট দূরত্ব ভুলে যেতে হবে: নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সৃষ্ট দূরত্বে বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এবারের নির্বাচন স্বতন্ত্র ও দলীয়ভাবে করতে গিয়ে অনেকের মন কষাকষি, নানারকম কিছু হয়ে গেছে। যেটা হয়ে গেছে, সেটা হয়ে গেছে, এখন ভুলে যেতে হবে। সবাই এক হয়ে কাজ করতে হবে। জনগণের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কাজ করতে হবে। যদি কোথাও কোন সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেটা সমাধানের জন্য আমরা আছি, কেন্দ্রীয় কমিটি করবে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে কোন আত্মঘাতী সংঘাত যেন না হয়। সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। দোষারোপ করার অর্থ হয় না। এসময় তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন যদি উন্মুক্ত না হতো, তাহলে শুধু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা না, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হরণ করা হতো। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার অর্জন নস্যাৎ হয়ে যেতো।
আ’লীগের বড় শক্তি জনগণ: জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে জেনেই বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেই সঙ্গে তারা যুগিয়েছিল কিছু প্রভু। তাদের নির্দেশ মতো আন্দোলন করে। এখনও কিছু কিছু লম্ফঝম্প করছে, করতে পারে কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের জনগণের সংগঠন, এটা তাদের মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ ভেসে আসেনি, কিংবা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল পকেট থেকে এ সংগঠন বের হয়নি। এটা মাটি-মানুষের ভেতর থেকে সংগঠন বেড়ে উঠেছে। মানুষই এ সংগঠনের বড় শক্তি।
উপজেলা নির্বাচনে সংঘাতে জড়ালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ বছর ক্ষমতায় সাধারণ মানুষের জন্য কতটুকু কাজ করেছেন, কারা করতে পারেনি সেটাও যাচাই-বাছাই হয়ে যাবে। এর মধ্য দিয়ে। জনগণের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা কেমন, সেটাই দেখবো। তিনি বলেন, কোনো রকম সংঘাত চাই না। (কোনো সংঘাত হলে) যিনি এর সঙ্গে জড়িত থাকবেন, সে যে-ই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দ্রব্যমূল্য কমাতে সবাইকে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ: দ্রব্যমূল্য কমাতে সবাইকে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন,বিশেষ করে পরিবহনের ক্ষেত্রে বা পাইকারি বাজারে, অথবা মজুতদারি, এসব জায়গায় চাঁদাবাজি ও অবৈধ মজুতদারি বন্ধ করতে হবে। মাল আসলে পাইকারি বাজারে চাঁদাবাজি, চলার পথের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। আপনারা এখানে আছেন বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধি, এখানে আপনাদের দৃষ্টি দিতে হবে। কৃষক যাতে ন্যায্য মূল্য পায়, সেটার দিকে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দেন তিনি।
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান: বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, যে অর্থ আমরা ব্যয় করি তার অর্ধেক দামে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। কাজেই এখন থেকে যে যত বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে তাকে তত বেশি দাম দিতে হবে। আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর যারা একেবারে পারবেন না, তাদের জন্য ছাড় আছে। কিন্তু অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যারা ব্যয় করবেন, তাদের অতিরিক্ত মূল্য দিতে হবে।
সভায় সূচনা বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। এ সভায় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা/মহানগর ও উপজেলা/থানা/পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের দলীয় ও স্বতন্ত্র সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা অংশ নিয়েছেন।

Related Articles

Back to top button