topআন্তর্জাতিক

তিব্বত-চীন সংকট নিরসনে মার্কিন সিনেটে নতুন আইন 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তিব্বত এবং চীনের বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং দালাইলামার অনুসারীদের সঙ্গে আলোচনা পুনরায় শুরু করার জন্য চীন সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন সিনেট। ওরেগনের মার্কিন সিনেটর জেফ মার্কলে, সহ-সিনেটর টড ইয়াং এবং প্যাট্রিক লেহিসহ চলমান তিব্বত-চীন বিরোধের সমাধানের লক্ষ্যে দ্বিদলীয় আইন প্রচার করতে একত্রিত হয়েছেন। খবর এএনআইয়ের। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি অর্থপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে তিব্বত-চীন দ্বন্দ্বের সমাধানকে সমর্থন করে। তাছাড়াও তিব্বতের নাগরিকদের স্বাধীনতার অধিকারও দেয়।
এ ব্যাপারে মার্কলে বলেন, যখন চীন সারাবিশ্বকে নিজেদের কুক্ষিগত করতে চাইছে, সে মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মূল্যবোধ, অর্থাৎ পৃথিবীর সবার জন্য স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণকে পুঁজি করে পুরো বিশ্বে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ আইন দ্বারা এটা স্পষ্ট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনুভব করতে পারছে যে চীন-তিব্বতের বিরোধ এখনো অমীমাংসিত এবং তিব্বতের লোকেরা কীভাবে চীনের দ্বারা শাসিত হচ্ছে সে সম্পর্কে কথা বলার অধিকার তাদের আছে। তাছাড়া এ আইন স্পষ্টভাবে চীনা সরকারকে এ বার্তা পাঠায় যে আমরা তিব্বতের মর্যাদা নিয়ে অর্থপূর্ণ আলোচনার আশা করি এবং চীনা সরকারের বর্তমান পদক্ষেপগুলো আমাদের আইনটি জনগণ হিসেবে তিব্বতিদের স্বাধীনতার অধিকারকে পুনরায় নিশ্চিত করে। সেই সাথে এটি স্পষ্ট করে যে, অমীমাংসিত সংঘাতের বিষয়ে অর্থপূর্ণ আলোচনায় যুক্ত হতে বর্তমান চীনা সরকারের অস্বীকৃতির মাধ্যমে চীনা সরকার মার্কিন সরকারের প্রত্যাশা পূরণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
ইয়াং বলেন, তিব্বতের লোকেদের স্বাধীনতার জন্য এবং দালাইলামার সাথে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য মার্কিন নীতিটি চীনা সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে। তাছাড়াও এ আইনটি আমেরিকার সংকল্প প্রদর্শন করে যে সিসিপির স্থিতাবস্থা- তিব্বত ও অন্যত্র উভয় ক্ষেত্রেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিব্বতের পরিস্থিতির অবনতির সাথে সাথে ২০১০ সাল থেকে চীনা ও তিব্বতের নেতাদের মধ্যে বৈঠক প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়েছে। তিব্বতের রাজনৈতিক অবস্থার সমাধানের জন্য তিব্বতের জনগণ শান্তিপূর্ণ আলোচনা ছাড়া আর কিছুই কখনো চায়নি। তবুও তাদের নিষ্ঠুর নিপীড়ন এবং চীনা আগ্রাসনের শিকার হতে হয়েছে।
মার্কিন এ নীতি এ বিষয় স্বীকার করে যে তিব্বত কখনই চীনের অংশ ছিল না এবং তিব্বতি জনগণদের অধিকার রক্ষার জন্য মার্কিন প্রশাসন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
এই দ্বিদলীয় আইনটি কংগ্রেসের অভিপ্রায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক নীতিতে পরিণত হয়েছে। এ নীতি অনুযায়ী, তিব্বত ও চীনের বিরোধ অমীমাংসিত এবং তিব্বতের আইনি মর্যাদা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে নির্ধারিত হওয়ার কারণে দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সংলাপ পুনরায় শুরু করা প্রয়োজন। এ বিলটি তিব্বতিদের নাগরিক অধিকারকে সমর্থন জানায় এবং সেইসঙ্গে তাদের অধিকার লঙ্ঘনের জন্য চীনকে দায়ী করে। তিব্বত-চীন দ্বন্দ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ সমগ্র বিষয়টিকে এক নতুন পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
তিব্বতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে চীনা কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিন প্রশাসন শান্তিপূর্ণ আলোচনার জন্য চীনা সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৫৯ সালে দালাইলামাকে জোরপূর্বক নির্বাসিত করে প্রায় ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিব্বতকে দখল করে রেখেছিল চীন। চীনের চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফলে তিব্বতের অবস্থাও দক্ষিণ সুদান এবং সিরিয়ার মতোই।
কেন্দ্রীয় তিব্বত প্রশাসনের (সিকয়ং) প্রেসিডেন্ট, পেনপা সেরিং বলেন, “তিব্বতে চীনের শাসনের বিষয়ে ঐতিহাসিক সমর্থন, জনসমর্থন এবং কূটনৈতিক সমর্থনের অভাব রয়েছে। চীন অবৈধভাবে তিব্বতকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। তিব্বত কখনোই চীনের অংশ ছিল না। তিব্বতবাসীরা শুধুমাত্র স্বাধীনতার স্বাদ চায়, যা সকল মানুষেরই প্রাপ্য। বহু দশক ধরে তিব্বতিরা চীনা সরকারের কাছ থেকে অনাচারের শিকার হয়েছে। তবুও তারা সবসময়ই শান্তিপূর্ণ উপায়ে সবকিছুর সমাধান করতে চেয়েছে। শান্তিপূর্ণ আলোচনার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ আইনটি অনেক উপকারী হবে। তিব্বত-চীন দ্বন্দ্বের সমাধানে কাজ করার জন্য মার্কিন সিনেটর লেহি, মার্কলে এবং ইয়াংকে ধন্যবাদ।”

Related Articles

Back to top button