চলতি সংবাদ

ঢাকার কাফরুল থানার আওয়ামী লীগের নেতা আরিফুল ইসলাম আত্মগোপনে, মামলা-হামলা আতঙ্কে

টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কাফরুল থানার (ঢাকা মহানগর উত্তর) ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বাবুর নামে ৭টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। জামায়েত-বিএনপির নেতাকর্মীদের একের পর এক হত্যা মামলা, সন্ত্রাসী হামলায় আতঙ্কে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আরিফুল ইসলাম বাবু ও তার পরিবারের সদস্যরা। সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে আরিফুল ইসলাম বাবুর ৩/৪টি বাড়ি দখল করে নিয়েছে। আরিফুল ইসলাম বাবুসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারাও লাপাত্তা হয়ে গেছেন। আওয়ামীলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম বাবু বাংলাদেশে থাকা জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। যেকোন সময় তাকে হত্যা করা হতে পারে। তাকে বাংলাদেশে পেলেই খুন করতে পারে সন্ত্রাসীরা। তার পরিবারের সদস্যরাও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতা আরিফুল ইসলাম বাবু বাংলাদেশে থাকা মানে যেকোন সময় হামলা ও হত্যার আশঙ্কা রয়েছে। তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নিরাপত্তা দিতে পারবে না। তার মতো আওয়ামী লীগের বহু বিক্ষুব্ধ কর্মীরাও ভয়ে আছেন। অনেক আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীরা একই কথা জানিয়েছেন।


সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে ক্ষমতায় ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ সময় আওয়ামী লীগের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীও ছিলেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে চড়ে বাংলাদেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ছোট বোন শেখ রেহেনাও তার সঙ্গী হন। সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তার দেশছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবসান ঘটে আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসন।


এরপর পাল্টাতে থাকে সার্বিক চিত্র। কেন্দ্রীয় নেতারা চলে যান আত্মগোপনে। শুরু হয় মামলা, গ্রেপ্তার হচ্ছেন অনেকে। আবার অনেকের বাসা-বাড়ি, অফিস কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে করা হচ্ছে হামলা, লুট করা হচ্ছে সর্বস্ব। এসব দেখে ভয়ে দিন পার করছেন সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দলটির নেতাকর্মীরা।


নাম প্রকাশ না করে আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা এখন নিজেদের সেভ করার চেষ্টা করছি। মামলা-হামলা থেকে বাঁচতে অনেক সময় আত্মগোপনে যেতে হয়। কর্মীদের সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি। আমাদের বাড়ি-ঘর নিরাপদ না। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও নিরাপদ না। ঝুঁকি নিয়ে আত্মগোপনে আছি। আমাদের এক নেতা তো হামলা-মামলা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন। রাজনৈতিক মামলা হচ্ছে। আমরা কর্মীদের নিয়ে বেশি চিন্তিত।


দলীয় সূত্র মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা ঘরছাড়া রয়েছেন। তারা নিজেদের আত্মগোপনে রাখার চেষ্টা করছেন। তবে, পরিবার-পরিজনরা দিন-রাত আতঙ্কের মধ্যে থাকছেন; কখন কী হয়! উপজেলা বা জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের শীর্ষ নেতারা ঘর ছাড়া রয়েছেন বলে জানা গেছে।


গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। প্রাণনাশের আশঙ্কায় কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ অনেকে সেনানিবাসে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার ৬২৬ জনকে আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেখান থেকে বের হয়ে রাজনৈতিক নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। কেউ দেশে আবার কেউ পাশের দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান।

সন্ত্রাসী হামলা ও মামলার ভয়ে ঢাকার কাফরুল থানার (ঢাকা মহানগর উত্তর) ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বাবু নিজেও পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা আরিফুল ইসলাম বাবু টাইমস ২৪ ডটনেটকে বলেন, প্রতিদিনই মিথ্যা মামলা হচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে।

আমার নামে এই পর্যন্ত কামফরুল, পল্লবী, ভাষানটে ও মিরপুর থানায় ৭টি হত্যা মামলা হয়েছে। প্রত্যেকটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমার বাড়িতে হামলা করে মালামাল লুটপাট ও ৩/৪টি বাড়ি দখল করে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এই অবস্থায় আপাতত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিরাপদ স্থানে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।আমাদের কোনো নেতাকর্মী বাড়িতে থাকতে পারছেন না। একদিকে, বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের হামলার ভয়, অন্যদিকে মামলার ভয়।


এখন পর্যন্ত শতাধিক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক; সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান; আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি; দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু; সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক; ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত; আওয়ামী লীগ সরকারে সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আরিফ খান জয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বন্দরের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল। কেন্দ্রের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলাপর্যায়ের নেতাকর্মীদের আটক করা হচ্ছে।

রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন-জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ মোল্লা; বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র আবদুল মালেক মণ্ডল; বাগমারার গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার; বাঘার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি সেলিম রেজা; গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিমুল ইসলাম ও কামারপাড়া এলাকার আওয়ামী লীগকর্মী আবদুল হান্নান। এ ছাড়া সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শামীম আহমদ ও প্রচার সম্পাদক আবদুর রহমান জামিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা হত্যা মামলাগুলোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গণহত্যার অভিযোগে আটটি মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় জমা পড়েছে। অন্তত ১০৩টি মামলা করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন থানায়। সবমিলিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১১১টি হত্যা মামলা করার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অপহরণ করে গুমের অভিযোগেও মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।


দলীয় সূত্র মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নেতারা আত্মগোপনে থাকলেও অনেকেই ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে সক্রিয় রয়েছেন। তাদের সঙ্গে কেবল হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা যাচ্ছে। শুধু বিশ্বস্ত কর্মী বা পরিচিতজনদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

Related Articles

Back to top button