topরাজনীতি

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ-বিশ্বস্ত বন্ধু ভারত: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: উভয় দেশের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে ডিজিটাল ও সবুজ অংশীদারিত্বের জন্য একটি যৌথ দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্মত হয়েছে ঢাকা ও নয়াদিল্লি। শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের যাত্রায় উভয় দেশই ‘ভিশন স্টেটমেন্ট’ অনুমোদন করেছে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ‘ডিজিটাল পার্টনারশিপ’ এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সবুজ অংশীদারিত্বর জন্য একটি যৌথ দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্মত হয়েছে। গতকাল শনিবার ভারতে নয়াদিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে নরেন্দ্র মোদির সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর গণমাধ্যমের সামনে একটি যৌথ বিবৃতিতে এসব মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, দুই প্রতিবেশী দেশের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নিরাপত্তা ও বাণিজ্যের বিষয়টি উঠে আসে। ভারতকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং আঞ্চলিক অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় শুরু হওয়া ভারতের সাথে সম্পকর্কে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে মূল্যায়ন করে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ক্রমাগত দ্রুত গতিতে বাড়ছে। শেখ হাসিনা যোগ করেন শনিবার বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। যেখানে আমরা পারস্পরিক স্বার্থের অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে রাজনীতি ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও সংযোগ, অভিন্ন নদী থেকে পানি বণ্টন, বিদ্যুৎ ও শক্তি এবং আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আমাদের জনগণ ও দেশের উন্নতির জন্য একে অপরকে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যেহেতু নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে ঢাকা ও দিল্লি নতুনভাবে পথ-চলা শুরু করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা ‘রূপকল্প-২০৪১’ এর মাধ্যমে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’ অনুসরণ নিশ্চিত করার জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছি।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, দুই দেশই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়সহ উচ্চপর্যায়ের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান আমাদের স্বাধীনতার এবং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতে আমি দ্বিপাক্ষিক সফর করেছিলাম। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র আমন্ত্রিত ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে নয়াদিল্লিতে ভারতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম। জুন মাসে দ্বিতীয়বারের মতো নয়াদিল্লি সফর করছি। এসব আমাদের এ দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে একে অপরের সঙ্গে কাজ করার প্রমাণ বহন করে। শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এই আলোচনাসমূহ আমাদের একে অপরকে সহযোগিতার উন্নততর পথ নিরূপণে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দেবে।
গতকাল শনিবার দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল পার্টনারশিপ ও গ্রিন পার্টনারশিপ চুক্তি, ৩টি নবায়নসহ মোট ১০টি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। নতুন সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে ; ১. বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল পার্টনারশিপ (চুক্তি)। ২. ভারত-বাংলাদেশ গ্রিন পার্টনারশিপ (চুক্তি)। ৩. সমুদ্র সহযোগিতা ও ব্লু-ইকোনোমি। ৪. ভারতের ইন-স্পেস এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা। ৫. দুই দেশের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সংযোগ সংক্রান্ত সমঝোতা। ৬. সমুদ্রবিষয়ক গবেষণায় দুই দেশের সমঝোতা। ৭. কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগিতায় ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ, ওয়েলিংটন-ইন্ডিয়া এবং মিরপুর ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের মধ্যে সমঝোতা। নবায়ন করা সমঝোতার মধ্যে রয়েছে; ১. স্বাস্থ্য ও ওষুধ সংক্রান্ত পুরনো সমঝোতা নবায়ন। ২. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রশমনে ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি, বাংলাদেশ ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান সমঝোতা নবায়ন। ৩. মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে বিদ্যমান সমঝোতা নবায়ন।
এছাড়াও বাংলাদেশিদের জন্য ই-মেডিকেল ভিসা সুবিধা চালু করবে ভারত। পাশাপাশি রংপুরে নতুন একটি সহকারী হাইকমিশন খুলবে ভারত। গতকাল শনিবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠক শেষে দেওয়া বিবৃতিতে এসব তথ্য জানান মোদি। নরেন্দ্র মোদি জানান, ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ই-মেডিকেল ভিসা চালু করবে। এছাড়া বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের সুবিধার্থে রংপুরে একটি নতুন সহকারী হাইকমিশন খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ভারতের বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিই। ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে হতে যাওয়া ম্যাচের জন্য দুই দলকে শুভ কামনা জানিয়েছেন মোদি। শেখ হাসিনা-মোদির বৈঠক নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধন আরও গভীর করার লক্ষ্যে আলোচনা করেছেন। এই আলোচনায় উন্নয়ন অংশীদারত্ব, জ্বালানি, পানিসম্পদ, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং আরও অনেককিছুসহ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এদিন, সকালে ফোরকোর্টের রাষ্ট্রপতি ভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এসময় শেখ হাসিনা সশস্ত্র সালাম গ্রহণ ও গার্ড অব অনার পরিদর্শন করেন। সকাল ৯টায় রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবালয়ে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে নয়াদিল্লি ত্যাগ করেন। রাত ৯টায় তিনি ঢাকায় অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

Related Articles

Back to top button