জাতীয়বাংলাদেশ

ঢাকা এখন ফাঁকা

এনামুল হক, ঢাকা: বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উপলক্ষে মানুষ ঘরমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। ঢাকাও ফাঁকা হচ্ছে। তবে ঈদ উপলক্ষে কত লোক ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবু ধরে নেওয়া হয়, প্রতিবারই ঈদের সময়ে ঢাকা থেকে অর্ধেকের বেশি মানুষ গ্রামে চলে যায়। যাওয়ার বাহন বাস, ট্রেন ও লঞ্চ। অনেকে বিমানে করেও ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। বর্তমান সরকারের প্রায় ১৫ বছর শাসনামলে রাজধানী থেকে সারা দেশের সঙ্গে জেলা ও উপজেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ার কারণে ঈদসহ অন্য সময় লম্বা ছুটি পেলেই ঢাকায় বসবাস করা মানুষগুলো ছুটে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি। বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মাণের পর দক্ষিণাঞ্চলের (বরিশাল, পিরোজপুর, খুলনা ও তার আশপাশের জেলা-উপজেলা) মানুষ এমনিতেই বৃহস্পতিবার হলেই পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটাতে ছুটে যান। আর ঈদ হলে তো কথাই নাই। এবারও তেমনটি হয়েছে। ঈদের ৫ দিনের লম্বা ছুটি পেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে মানুষ। এই ঈদুল আজহার ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়ি ফেরার স্রোত শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার থেকে। গতকাল মঙ্গলবারও ওই স্রোত বয়ে যায়।
পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। এবার ঈদে সরকারি ছুটি তিন দিন। অর্থাৎ ২৭, ২৮ ২৯ জুন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি মোট ৫ দিন। এরমধ্যে এবার একদিন (মঙ্গলবার) ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ছুটি দিয়েছে সরকার। আগামী ২ জুলাই থেকে খুলবে সরকারি অফিস আদালত। গত সোমবার সরকারি অফিসের শেষ কার্যদিবস ছিল। ফলে সোমবার থেকেই রাজধানী ঢাকা ফাঁকা হতে শুরু করে। আজ বুধবারও অর্থাৎ ঈদের আগের দিন এবং ঈদের দিনও ঢাকায় বসবাস করা মানুষগুলো গ্রামের বাড়ি ফিরবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের আনন্দ কাটাতে স্বজনদের কাছে যেতে ভিড় করছে মানুষ। কেউ অগ্রিম টিকেট কেটেছেন, আবার কেউ বাস টার্মিনালে গিয়ে টিকেট সংগ্রহ করছেন। গুলিস্তানে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদযাত্রায় ঘরে ফেরা মানুষের ঢল। গুলিস্তান থেকে খুলনা, যশোর, গোপালগঞ্জ-পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলায় মানুষ বাসে করে যাচ্ছেন। দোলা পরিবহনের কাউন্টার স্টাফ মো. শাওন জানান, পরিবহনের কোনো সমস্যা নেই। পনেরো মিনিট এবং আধাঘণ্টা পরপর বিভিন্ন জেলায় এখান থেকে বাস ছেড়ে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে বের হয়ে মূল সড়কে যেতে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় গরুর হাট এবং ভাসমান গরু-ছাগলের হাটের কারণে এই যানজটে পড়তে হচ্ছে। ফ্লাইওভারেও যানজট লেগে আছে। এতে বাস আসতে এবং ঢাকার বাইরে যেতে সিডিউলের একটু হেরফের হচ্ছে।
বৃষ্টি ও রোদের সমস্যা এড়াতে যাত্রীদের সুবিধার্থে কিছু কিছু বাস কর্তৃপক্ষ কাউন্টারের সামনে সামিয়ানা টাঙিয়েছেন। বাস চালকদের অনেকেই জানিয়েছেন, রাস্তার পাশে গরু-ছাগলের হাটের কারণে যানজট ও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এজন্য নির্দ্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যস্থানে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে শঙ্কা রয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও ঢাকা ছেড়ে যাওয়া যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। সায়েদাবাদ এলাকায় ফেনী ও নোয়াখালীর বাস কাউন্টারে সালাউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকে পরিবার-পরিজনদের আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে। যার কারণে এখানে ভিড় অনেক কম। তবে বুধবারও এসব কাউন্টারে ঘরমুখো মানুষের ভিড় থাকবে। কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে মানুষের স্রোত। নিরাপত্তার জন্য তৎপর র‌্যাব-পুলিশ সদস্যরা। তবে কমলাপুরে কনস্ট্রাকশনের কাজ চলার কারণে যাত্রীদের স্টেশনে পৌঁছাতে দুর্ভোগ হচ্ছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্রেনের সময়সূচি এখন পর্যন্ত ঠিক রয়েছে।
পদ্মা সেতুতে স্বস্তির ঈদযাত্রা:যানজট আর মানুষের ভিড়ে ঠাসাঠাসি, ঈদযাত্রা মানে এমন চিত্র ভেসে ওঠে চোখের সামনে। ঈদের ছুটির বেশিরভাগ সময় আসা-যাওয়ার পথেই চলে যেতো। গত এক বছরে পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলকারীরা ভুলতে বসেছেন সে অসহনীয় যানজট আর ভিড়ের কথা। এখন তাদের ভাবতেই অবাক লাগে যে এ যাত্রা কতোটা স্বস্তির, কতোটা আনন্দের। পদ্মা সেতু দিয়ে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। ঈদে একদিকে যেমন নির্বিঘ্নে ঘরমুখো মানুষ পদ্মা সেতু দিয়ে পার হচ্ছেন তেমনি রাজস্বও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ রজ্জব আলী।
নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, যান চলাচল শুরুর এক বছরে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতুতে সোমবার সকাল থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১ হাজার ২৯৮টি যান পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে তিন কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৮০০ টাকা। তিনি জানান, গত সোমবার পর্যন্ত টোল আদায় হয়েছে ৮০৫ কোটি ১৭ লাখ পাঁচ হাজার ৫৫০ টাকা। এ সময়ের মধ্যে যান পারাপার হয়েছে ৫৭ লাখ ২৮ হাজার ৬৫১টি।
নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, পদ্মা সেতুর দুই পারে ১৫টি বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে সাতটি ও জাজিরা প্রান্তে আটটি বুথ রয়েছে। তিনি আরও জানান, ঈদ যাত্রায় মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য উভয় পারেই দুটি করে চারটি লেন রয়েছে। সার্ভিস লেনে বাইক চলাচল করায় এবং টোল আদায়ে অতিরিক্ত টোল বুথ করায় অন্য যান চলাচলে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে না। সেতুতে সব যানবাহন স্বাচ্ছন্দে চলাচল করছে।

 

 

 

Related Articles

Back to top button