টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে একের পর এক আগুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এবার ঢাকার অভিজাত নিউ সুপার মার্কেটটি আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে। শনিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে দমকল বিভাগের ৩০টি ইউনিটের ২২০ জন ফায়ার ফাইটার কাজ করেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে দমকলের পাশাপাশি বিজিবি, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করেছে। আগুন নিভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৩ জন কর্মীসহ ৩৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য নিউমার্কেট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম। আগুনে আহত ও মালামাল উদ্ধার অভিযানে জীবন বাজি রেখে কাজ করেছে পুলিশ। তবে নাশকতা কিনা তা খতিয়ে দেখতে বললেন ফায়ার সার্ভিসের ডিজি।
জানা গেছে, অগ্নিকাণ্ড যেনো থামছেই না। রাজধানীতে একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। ঈদের আগে রাজধানীতে মার্কেটগুলোতে যেনো আগুনের কালো ছায়া পড়েছে। বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের শোক কাঁটিয়ে উঠার আগে এবার রাজধানীর সবচেয়ে জনপ্রিয় নিউমার্কেটে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট। গতকাল শনিবার ভোরে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের তিনতলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। নিউমার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে আহত ৩৫ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আহত অন্যদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবী কর্মী তিনজন, বিমানবাহিনীর সদস্য একজন, আনসার সদস্য একজন ও একজন সাংবাদিক রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই আগুনের ধোঁয়ায় আহত হয়েছেন। এছাড়া মার্কেটে টিন লেগে কয়েকজন জখম হয়েছেন। আহত ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা হলেন রাসেল (২২), শান্ত (২৪), তৌফিক (২৩), রাজন (২৫), মিলন (২৬), সজীব (২৫), আরিফুল (২৬), কামরুজ্জামান (২৫), শরিফুল (২৪), রাজিব (২২), ডিপজল (২৪), আলমগীর (৩৬), সোহেল রানা (৩৫)। ঢামেকে চিকিৎসাধীন দোকান মালিক ও কর্মীরা হলেন রিফাত (২৩), বায়জিদ (২৫), হাসান (২০), রিমন (২৮), কামাল হোসেন (৩৩), ফিরোজ আলম (৩০), জীবন (৩০), জিসান (১৮), ইয়াসিন (২৪), জীবন (২৫), স্বপন (২৩), ফারহান (২৪), সারফিন (১৮), ইমাম হোসেন আলী (২৬), রাশেদ (৩০), সাব্বির (১৮)। আহত অন্যরা হলেন এটিএন নিউজের সাংবাদিক মনিরুজ্জামান (৩৩), বিমানবাহিনীর সদস্য সার্জেন্ট আরাফাত (৩২), আনসার সদস্য সবুজ (২০), স্বেচ্ছাসেবী সাব্বির (৩০), জাকির হোসেন (২৭), চাঁন মিয়া (১৮)। গতকাল শনিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নিউমার্কেটের নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার তথ্য জানতে পারে ফায়ার সার্ভিস। ৫টা ৪৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর একে একে ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেখানে যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অগ্নিনির্বাপণী সাহায্যকারী দল। ঘটনাস্থলে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করেন স্বেচ্ছাসেবীরাও। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।
আরো জানা গেছে, রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর আশপাশের মার্কেটগুলো বন্ধ রয়েছে। নিউমার্কেটের কাছাকাছি চন্দ্রীমা সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং মল, বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট, গাউছিয়া সুপার মার্কেট, নূর মেনশন সুপার মার্কেট, হকার্স মার্কেট, চাঁদনী চক, ইয়াকুব সুপার মার্কেট, নূর জাহান সুপার মার্কেট, গোল্ডেন সুপার মার্কেট বন্ধ রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি সায়েন্স ল্যাব থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত সব দোকান-অফিস বন্ধ। এই সড়ক দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সাধারণ মানুষ ঢুকতে গেলে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়। নিউ সুপার মার্কেটে লাগা আগুন সকাল সোয়া নয়টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে বলে দাবি করেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। নিউ মার্কেটির তৃতীয় তলা থেকে এ আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হয়েছে। নিউ সুপার মার্কেটসহ ঈদের আগেই কেন একাধিক মার্কেটে আগুন লাগছে, আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সাার্ভিসকে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে ও অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের ওপর কেন হামলা হচ্ছে, যে ঘটনাগুলো ঘটেছে এগুলো বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস কিনা; এসব প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে গতকাল শনিবার সকালে নিউ মার্কেট এলাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণের ব্রিফিং করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, আগুনের সূত্রপাত হয়েছে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট (দক্ষিণ) ভবনের তৃতীয় তলা থেকে। বিষয়টি নাশকতা কিনা, খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধও জানান তিনি।
গতকাল শনিবার ভোরে লাগা আগুনে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের প্রায় ১ হাজার ৫০০ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেটটির ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. শহিদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সিটি করপোরেশনের লোকেরা রাত ৩টার দিকে ব্রিজ ভাঙ্গার কাজ করছিল, ব্রিজের ওখানে বিদ্যুতের লাইন ছিল; যা তারা খেয়াল করেনি। ওই লাইনের ওপর বুলডোজার চালানোর সময়ই আগুনের সূত্রপাত হয়।’ পরিকল্পনা ছাড়াই এই ব্রিজ ভাঙার কারণেই শনিবার এই দশা (অগ্নিকাণ্ড) হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে এ ধরনের দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলছে, ‘একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই অগ্নিকাণ্ডকে নিউ মার্কেটের সঙ্গে সংযুক্ত পথচারী পারাপার সেতুর (ফুটওভার ব্রিজ) সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের উদ্যোগের সঙ্গে সম্পর্কিত করার অপচেষ্টা করছে। গণমাধ্যমেও এ নিয়ে বিভ্রান্তিকর ও অনাকাক্সিক্ষত সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে; যা ডিএসসিসির দৃষ্টিগোচর হয়েছে।’ দুর্যোগের এই কঠিনতম সময়ে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ‘ভিত্তিহীন সংবাদ ও গুজব’ ছড়ানো থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানিয়েছে সিটি করপোরেশন। ব্যবসায়ীদের কারও কারও ধারণা, এখানে কেউ না কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার ব্যবসায়ী মো. সবুজ আহাজারি করছিলেন ঘটনাস্থলে। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগেই ব্যবসায়ীদের মার্কেটে কেন এত আগুন, এটা স্বাভাবিক না। মনে হয় কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’ ঈদ উপলক্ষে তিনি দোকানে ৩০ লাখ টাকার মালামাল তুলেছিলেন, কিছু মালামাল বিক্রি করেছিলেন। বাকি সব শেষ হয়ে গেছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় তাসনিয়া ফ্যাশনের মালিক রুবেল মিয়া জানান, রাত ২টার দিকে দোকান বন্ধ করে নবাবপুরের বাসায় ফেরেন। ভোরে খবর পেয়ে দ্রুত মার্কেটে এসে দেখেন আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমে স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে মালামাল বের করার চেষ্টা করেন। পরে আগুন ছড়িয়ে পড়লে আর ঢুকতে পারেননি। দোকান থেকে সরিয়ে রাখা কিছু মালামালের কাছে বসেই কাঁদছিলেন তিনি। রুবেল মিয়া বলেন, ‘গুদামে ৪০ লাখ টাকার মালামাল রয়েছে। গুদামের দরজার কাছেও যেতে পারিনি।’ এই ব্যবসায়ীর মনেও সন্দেহ কেউ না কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। এখন ঘুরে দেখছি কোনো কূলকিনারা পাওয়া যায় কি না। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমার পাইকারি দোকানে বিশ লাখেরও বেশি টাকার কাপড় ওঠানো ছিল। শনিবার হোলসেল ডেলিভারি দেওয়ার জন্য অনেকগুলো প্যাকেট কমপ্লিট করে রাতে বাসায় গিয়েছিলাম। সকালে এসে দেখলাম সব শেষ। এখন কীভাবে ঘুরে দাঁড়াব সেটি বুঝতে পারছি না। আসমাউল মুত্তাকিন নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমার দোকানে শীতের জ্যাকেট ও তুলার তৈরি গরম কাপড় রাখা ছিল। আগুনে না পুড়লেও পানির ছাটে নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তারপরও কর্মচারীদের সাথে নিয়ে সবগুলো বের করার চেষ্টা করছি। কীভাবে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠব তা বুঝতে পারছি না।
নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাত ২টা পর্যন্ত দোকানে ছিলাম। ভোরে খবর শুনি, আগুন লেগেছে। এসে দেখি মার্কেটের তৃতীয় তলায় আগুন জ্বলছে। কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তিনি আরও বলেন, আগুনে আমার দোকানের সবকিছু পুড়ে গেছে। আমার স্বপ্ন শেষ ভাই। আমি এখন কী করব? ঈদ উপক্ষ্যে ঋণ করে ১০ লাখ টাকার মাল এনেছি, সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
নোঙর ফ্যাশন নামে একটি দোকানের মালিক রফিকুল ইসলাম রোকন বলেন, যা কিছু ছিল সব আগুনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে দেখছি আমার সব সম্পদ আগুনে পুড়ে যাচ্ছে। কিছুই করতে পারছি না। মালামাল বের করতে পারছি না। স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে মালামাল উঠিয়েছি। এখন আমি কী জবাব দেব তাকে?
ব্যবসায়ী নূপুর বেগম বলেন, আমাদের তিন দোকান ছিল, এর মধ্যে একটা দোকানের অর্ধেক মাল নামিয়েছি। আর সব পুড়ে গেছে। আমার ভাই কথা বলছে না, পাগলের মতো হয়ে গেছে। আমার ভাই ফকির হয়ে গেছে। লাখ লাখ টাকার মাল সব গেছে। তিন দোকানই শেষ আমাদের। আবু সাঈদ নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, নিউ সুপার মার্কেটে আমাদের চারটি দোকান ছিল। এই চার দোকানের সব মালামাল আগুনে পুড়ে গেছে। আমরা কী করব, কোথায় যাব, কার কাছে বিচার চাইব? কিছুদিন আগে এমন অবস্থা হয়েছে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের। আয়ের উৎস দোকানের সব মালামাল পুড়ে যাওয়ার পর সেখানকার ব্যবসায়ীরাও নিঃস্ব হয়েছেন।
এদিকে নিউ সুপার মার্কেটের এই আগুনের জন্য সিটি করপোরেশনকে দায়ী করছেন মার্কেটের মালিক সমিতির সভাপতি মো. শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের লোক রাত ৩টার দিকে ব্রিজ ভাঙার কাজ করছিল। ব্রিজের ওখানে আমাদের কারেন্টের লাইন আছে সেটা তারা খেয়াল করেনি। ওই লাইনের ওপর বুলডোজার চালানোর সময়ই আগুনের সূত্রপাত হয়। তারা কোনো পরিকল্পনা না করে এই ব্রিজ ভাঙার কারণেই আজ এই দশা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ফায়ার সার্ভিস বলেছে মার্কেটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া এমন বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে যে কোনও ছোট্ট দুর্ঘটনায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা সবগুলোবিষয় খতিয়ে দেখছি। এগুলো নিছক দুর্ঘটনা নাকি অন্য কোনও কারণ আছে সেটাও দেখা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এর আগে বঙ্গবাজারে একটি বড় ধরনের আগুনের ঘটনা ঘটেছে। গত রাতে হাজারীবাগের ট্যানারিতেও আগুনের ঘটনা ঘটেছে। সুরিটোলায় গুদামে আগুন লেগেছে। সিদ্দিকবাজারের ক্যাফে কুইন ও নিউমার্কেটের পাশের শিরিন ম্যানশনে বিস্ফোরণের ঘটনা দুটোতেও মামলা নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবাজারের ঘটনায় পুলিশ কমিটি না করলেও তদন্তকাজ চালিয়েছে।’
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নিউমার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে র্যাবের ঢাকার ব্যাটালিয়নগুলোর টহল দল ও সাদা পোশাকে র্যাব সদস্যদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করে। উক্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনও ধরনের নাশকতা রয়েছে কিনা- এ বিষয়েও র্যাবের গোয়েন্দারা কাজ করছেন।’
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ বলেন, ‘নাশকতা মনে করলে আগে দেখতে হবে, এ ঘটনায় কে বা কারা লাভবান হচ্ছে। আর যদি কেউ লাভবান না হয় তাহলে এটা নাশকতা নয়। তবে শুনেছি কিছুদিন আগে ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। সেই ক্ষোভ থেকে কেউ এমন করেছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে।’ প্রায় সবগুলো ঘটনায় ভোরের দিকে এমন আগুন লাগার ঘটনা ‘অস্বাভাবিক’ মনে করেন ফায়ার সার্ভিসের সাবেক এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘নাশকতা হলে এক সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা বড় ধরনের আগুনের উৎপত্তি হয়। তেমন কোনও আলামত এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আর মার্কেটগুলো যখন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়, তখন কোন কোন বিষয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। ভবন, ফায়ার অ্যারেজমেন্ট নাকি ইলেকট্রিক সরঞ্জাম বিষয়ে? কোন ঝুঁকিতে আছে সেটা ক্লিয়ার থাকতে হবে।’ আর কোনও ঘটনা ঘটলেই রাজনৈতিক লোকরা একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলেন। সেটা তাদের রাজনৈতিক চাল বলে মনে করেন তিনি।
এর আগে গত ৪ এপ্রিল ভোর ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর দলও। সবার চেষ্টায় বঙ্গবাজারে লাগা ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর। আর পুরোপুরি আগুন নেভে ৭৫ ঘণ্টা পর অর্থাৎ ৭ এপ্রিল সকাল ৯টায়। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ক্ষতি হয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। এ অগ্নিকাণ্ডের জন্য ব্যবসায়ীদেরকে পরোক্ষভাবে দায়ী করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তদন্ত কমিটি। ডিএসসিসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কেটের এক প্রহরীর ধূমপানের অভ্যাস ছিল। তিনি লুকিয়ে সিগারেট খেতেন। এ অবস্থায় সেহরির সময় তার ফেলে দেয়া সিগারেটের অংশ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রাপত হতে পারে বলে ধারণা করছে কমিটি। এছাড়া সাক্ষীদের ভাষ্যমতে, বঙ্গবাজার মার্কেটে মশার উপদ্রব ছিল। যে কারণে নিরাপত্তা প্রহরীদের ব্যবহার করা মশার কয়েল থেকেও আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। আগুন লাগার আর কোনও কারণ পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর নিউ মার্কেট সংলগ্ন নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও উদ্ধার কাজে জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদার সদস্যরা। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রত্যক্ষভাবে তত্ত্বাবধান করছেন। আইজিপির নির্দেশে পুলিশ অফিসার্স ও ফোর্স সবাই মিলে একযোগে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মনজুর রহমান জানান, শনিবার ভোরে নিউ মার্কেট সংলগ্ন নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট কাজ করছে। রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ সদস্যরা আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, উৎসুক জনতা যেন ভিড় করে ফায়ার সার্ভিসের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য দায়িত্ব পালন করছেন।
অপরদিকে, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত রাজধানীর নিউমার্কেট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম। এছাড়াও আগুনের কারণে শনিবার সকাল থেকে আশেপাশের চাঁদনি চক ও গাউছিয়া মার্কেটও বন্ধ রয়েছে। শনিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে রাজধানী নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে সকাল ৯টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণের তথ্য জানায়। তবে এখনও আগুন নেভেনি। পুরোপুরি আগুন নেভাতে আরও কিছু সময় লাগবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানান, ঈদের আগে বঙ্গবাজারের পর রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগায় সারাদেশের ঈদবাজার শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেছেন, আতঙ্ক নিয়ে, সন্দেহ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা যায় না। নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের ঘটনায় শুধু নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা নন, সারাদেশে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বঙ্গবাজারের আগুনের পর নিউমার্কেটের আগুনের ঘটনাকে কীভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে হেলাল উদ্দিন বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য। আমাদের দুর্ভাগ্য। তিনি বলেন, করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এমনিই আমাদের নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এরমধ্যে এ ধরনের ঘটনা সারাদেশের ব্যবসায়ী, বিশেষ করে পুরো ঈদবাজারকে চরম ক্ষতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। পরপর দুটি ঘটনা আমাদের চরম ক্ষতির মধ্যে ফেলে দিলো। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবাজার এবং নিউমার্কেটের আগুন লাগার সময় একই। তবে আমি মনে করছি না এটা কোনো ষড়যন্ত্র। তারপরও তদন্ত কমিটি হবে, তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেবে। এর আগে তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট (বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ে) দিলো তাতে আমরা দেখলাম মশার কয়েল বা সিগারেটের আগুন থেকে। এখন তদন্ত ছড়া হঠাৎ কোনো কিছু বলা মুশকিল। হেলাল উদ্দিন বলেন, পরপর দুটি মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনাকে আমরা মোটেও স্বাভাবিক মনে করছি না। মনে করছি আমাদের কপাল পুড়ছে। তিনি বলেন, এই আগুনের ঘটনায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনই অনুমান করা সম্ভব না। কাপড়ে আগুন লাগা মানে দুই-তিনদিন পর্যন্ত জ্বলে। ভেতর থেকে হঠাৎ আগুন বেরিয়ে আসে। ঈদের আগে এই আগুনের কারণে সারাদেশের ঈদবাজার শেষ। আতঙ্ক নিয়ে, সন্দেহ নিয়ে তো আর ব্যবসা পরিচালনা করা যায় না।