
মো. আ. জব্বার, ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : গাজিপুরের চান্দীনা চৌরাস্তায় কুপিয়ে ও জবাই করে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবীতে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন করেছে ফুলবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দ। এ সময় ফুলবাড়িয়া ছাড়াও জেলার প্রিন্ট ইলেকট্রনিক এবং অনলাইন মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা মানববন্ধনে অংশ নেয়। শুক্রবার (৮আগষ্ট) সকালে ঘন্টাব্যাপী চলা মানববন্ধনে সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন হত্যাকন্ডের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দেখা গেলেও এখনো কোন আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। অথচ পুলিশ বলছে তারা সিসিটিভির ফুটেজ দেখছে, কেমন দেখা কেমন দেশ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার না করলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিদের সাংবাদিকরা।
অকাল প্রয়াত এই সাংবাদিকের মৃত্যুতে পুরো ফুলবাড়িয়ায় গভীর শোক নেমে এসেছে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায় গাজীপুর ঈদগাঁ মাঠে জুমার নামাজের পর সাংবাদিক তুহিনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাদ মাগরিব নিজ বাড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়িয়া ভাটিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সাংবাদিক তুহিনের বাবা পুত্রশোকে আহাজরি করে বলেন, আমার বাবারে (তুহিন) কই থুইয়া (রেখে এসেছ) আইছ? ৯০ বছর বয়সে আর কত পরীক্ষা? আল্লাহ গো আল্লাহ, আমারে লইয়া যাইতা গা, কয়দিন আগে বড় ছেলেটা মারা গেল, ক্যান্সারে! এই বয়সে কয়টা সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়া যায়? এখন আমার সবচেয়ে প্রিয়, যেসব সময় আমার খোঁজ খবর রাখত। ঘটনার দিনও সকাল বেলা কথা হয়েছে। বলেছে, ঔষধ কিনেছি কি না? তার আগের দিন বুধবার বিকালে বিকাশে ১ হাজার টাকা পাঠিয়েছে। জীবনে আমি কী করলাম! আমি সন্তান হত্যার সর্বোচ্চ বিচার চাই!
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের বাবা হাসান জামাল নিজ বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া ভাটিপাড়া মৌলভী বাড়িতে আহাজারি করে এমন বিলাপ করছেন।
মা সাবিহা খাতুন বকুল (৭৫) কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার বাবা আমারে চোখের অপারেশনের জন্য ঢাকায় নেওয়ার কথা ছিল। আমার বাবারে কেডা লইয়া আইতাছে? তোমরা আমার বাবা তুহিনরে কই থুইয়া আইছ? আমার বাবার কী অপরাধ ছিল? কিভাবে মারছে তোমরা দেখছো?
বড় বোন সাইদা আক্তার রত্না বলেন, মাঝে মাঝে আমাদের খোঁজ খবর নিত, সে আমাদের সবার ছোট, অনেক আদরের ছিল। আমার ভাই কোন দিন কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিন না, কখনো খারাপ ছেলেদের সাথে আড্ডা দিত না, কেন আমার ভাইকে হত্যা করা হলো আমার ভাইয়ের কি অপরাধ আমরা বিচার চাই? আমার ভাইয়ের দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে, তাদের কী হবে?
উল্লেখ্য, পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তুহিন সবার ছোট। ২০০৫ সালে ফুলবাড়ীয়া আল হেরা একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি, ২০০২ সালে সিলেট এম সাইফুর রহমান কলেজে থেকে এইচএসসি পাশ করে, ঢাকায় গাজীপুর ভাওয়াল কলেজে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে। বড় ভাই জসিম উদ্দিন ব্যবসা করতেন ঢাকায়, সেই সুবাধে ভাইয়ের বাসায় থেকে লেখাপড়া করতো তুহিন। এরপর ঔষধ কোম্পানি চাকুরি করেন পাশাপাশি ২০১২ সালে সংবাদপত্র কাজ শুরু করেন। স্ত্রী স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন চাকুরি করত। তুহিনের রয়েছে তৌকির ৭ বছর (নার্সারি পড়ে), ফাহিম ৩ বছর নামের দুটি ছেলে সন্তান।