আন্তর্জাতিকবাংলাদেশ

নারী’সহ বাংলাদেশী অপরাধী চক্র গ্রেফতার

সোহেল হোসাইন, নিউ ইয়র্ক থেকে : সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের ছয় বাংলাদেশি সদস্যকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাংলাদেশি পরিচয় না দিয়ে আদালতে এসব লোকজনকে একই কমিউনিটির লোকজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে দুই ব্যক্তিকে অপহরণ, মারধর ও যৌন নীপিড়ণের অভিযোগ আনা হয়েছে। সরকারি আইনজীবী আদালতে দায়ের করা প্রতিবেদনে বলেছেন, এদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠনের নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিচারে এসব লোকজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

ব্রুকলিনের ইস্টার্ন ডিসট্রিক্ট আদালতে দায়ের করা মামলায় অভিযুক্তরা হচ্ছেনঃ রুবেল আহমেদ, শাহেদ আলম, আবু চৌধুরী, আনজু খান, সুলতানা রাজিয়া ও ইফফাত লুবনা। এদের মধ্যে আবু চৌধুরী ও লুবনা স্বামী-স্ত্রী।

গত বৃহস্পতিবার ১১ জানুয়ারি, আদালতে উক্ত ছয়জনের নামে অভিযোগ গ্রহণ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আদালতের নথি অনুযায়ী, উক্ত ছয় জনের বিরুদ্ধেই এক ব্যক্তিকে অপহরণ ও অপহরণের ষড়যন্ত্রের একটি অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া আবু চৌধুরী ও তার স্ত্রী লুবনার বিরুদ্ধে পৃথক একটি অপহরণের অভিযোগ রয়েছে।

উক্ত অপহরণের ঘটনায় আবু-লুবনা দম্পতি আগেই দোষী সাব্যস্ত ছিলেন। বাংলাদেশি কমিউনিটিরই অপর ব্যক্তিকে তারা অপহরণ করেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। অভিযুক্তরা অপহৃত ব্যক্তিদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায় ও যৌন নিপীড়ণ করে।

ইস্টার্ন ডিস্ট্রক্ট অব নিউইয়র্কের রাষ্ট্রীয় কৌসুলি ব্রেয়ন পিস বলেছেন, একই কমিউনিটির মানুষের মধ্যে এই জঘন্য অপরাধ পরিচালিত হয়েছে এবং একটির পর একটি অঘটন ঘটিয়েছে চক্রটি। প্রথম অপহরণের ঘটনাটি ঘটে ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ। সেদিন রুবেল আহমেদ, শাহেদ আলম, আবু চৌধুরী, আনজু খান ও সুলতানা রাজিয়া একযোগে ষড়যন্ত্র করে ঘটনার শিকার ব্যক্তিকে অপহরণ করেন। জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউর ১৮১ স্ট্রিটের কাছ থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। আবু চৌধুরী এসময় অপহৃত ব্যক্তিকে জোরপূর্বক একটি হোন্ডা এসইউভি গাড়িতে তুলে নেন এবং বেদম মারধর করতে থাকেন। এসময় তার স্ত্রী গাড়ি চালিয়ে নিচ্ছিলেন। পরে গাড়ি থেকে নামিয়ে অপহৃত ব্যক্তিকে উলঙ্গ করে তা ক্যামেরায় ধারণ করেন তারা। রুবেল, শাহেদ, আনজু ও রাজিয়ার সঙ্গে তাদের ফোনে যোগাযোগ হচ্ছিলো। অপহৃত ব্যক্তিকে তারা মারধর করেন ও হত্যার হুমকিও দেন। এমনকি অপহৃত ব্যক্তি পানি পান করতে চাইলে তারা পানির মধ্যে চেতনানাশক মিশিয়ে দেন। এতে ঐ ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে পড়লে, পরের দিন স্থানীয় একটি হাসপাতালে তার ঘুম ভাঙ্গে।

ব্রুকলিন ফেডারেল কোর্টে গত বৃহস্পতিবার বিবাদী পক্ষের আইনজীবি সারাহ স্যাকস সুলতানা রাজিয়ার হয়ে আদালতে শুনানি করেন। তিনি দাবি করেন, অপহৃত ওই ব্যক্তির হাতে তার মক্কেল বিগত ৫ বছর ধরে হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন। আর সে কারণে আত্মরক্ষায় রাজিয়া এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে যুক্তি তুলে ধরেন আইনজীবি। সারাহ দাবি করেন, অপহৃত ব্যক্তি রাজিয়ার চুল ধরে টানছিলেন আর তিনি আত্মরক্ষা করতে চেষ্টা করছিলেন।

অপহরণের দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ১১ মে ২০২৩ তারিখে। সেদিন আবু চৌধুরী ও লুবনা অপর একজনকে অপহরণ করে। অপহৃত ব্যাক্তিটি উডসাইডের ব্রডওয়ে এভিনিউর ৭২ স্ট্রিটের কাছে লুবনার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। এসময় আবু চৌধুরী জোরপূর্বক অপহৃতকে একটি মিনিভ্যানে তুলে নেন এবং তৎখনিক পেটাতে শুরু করেন। পরে তারা অপহৃতকে একটি হোটেলে নিয়ে যান এবং আবু চৌধুরী তার সঙ্গে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক করেন। অপহৃত ব্যক্তির বাবার কাছে ফোন করে ২০ হাজার ডলার মুক্তিপণ দাবি করা হয় বলেও আদালতের নথিতে উল্লেখ রয়েছে। অপহরণে তৃতীয় দিনে আবু চৌধুরী অপহৃত ব্যক্তিকে চোখ বেঁধে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ফেলে রেখে যান বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। পরে অপহৃত ব্যক্তি তার চোখ খুলে একটি জানালা দিয়ে বাইরে আসেন এবং নেইবারহুডের লোকজনের কাছে ৯১১ কল করতে বলেন।

রুবেল আহমেদ, শাহেদ আলম, আনজু খান ও সুলতানা রাজিয়াকে ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার আটক করা হয়। আর আবু চৌধুরী ও ইফাত লুবনাকে আগেই আটক করা হয়। এই ঘটনায় ৭ম একজন আসামি পলাতক রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।

অপরাধীরা কমিউনিটিতে পরিচিত হওয়ায় গ্রেফতারের পর তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। নিউইয়র্ক সিটির মুল ধারার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিউজটি এসেছে। বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে এমন ভয়ংকর অপরাধের সংবাদে কমিউনিটিতে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। যদিও এর পেছনে কোন পারিবারিক সহিংসতা বা কোন পূর্ব ঘটনার জের আছে কি না, তা জানা যায়নি।

Related Articles

Back to top button