topআন্তর্জাতিক

জীবন-মৃত্যু-আশ্রয় আল-শিফা হাসপাতাল

টাইমস ২৪ ডটনেট: জীবন-মৃত্যু-আশ্রয়। সবকিছুতেই আল-শিফা। আহতদের সেবা, বাস্তুহারাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই, মৃত স্বজনের লাশঘর-সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলের হামলায় ক্ষতবিক্ষত গাজার প্রতিমুহূর্তে আল-শিফাই শেষ ভরসা। যুদ্ধাক্রান্ত রোগীদের বাঁচাতে প্রতিদিন যেন আরেক যুদ্ধ শুরু হয় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার গাজা সিটির এই হাসপাতালে। আল শিফা হাসপাতালে এখনো সরাসরি কোনো হামলা হয়নি। আশপাশে প্রতিদিন প্রচুর বিস্ফোরণ হচ্ছে। আমরা শুনছি, ভয় পাচ্ছি। মাঝে মাঝে একেবারেই কাছে এসে পড়ছে বোমা। হাসপাতালের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। কথাগুলো আমি খুব সাধারণভাবে বললেও গাজার সর্ববৃহৎ হাসপাতাল আল-শিফার পরিস্থিতিও ভিন্ন কিছু নয়। বিভীষিকাময় এক আক্রমণের শিকার হয়েছি আমরা। আল-আহলি হাসপাতালে চালানো ভয়াবহ হামলার পর অসংখ্য রোগীকে এখানেই স্থানান্তর করা হয়েছে। বিশাল সংখ্যক রোগীকে সামাল দিতে প্রতিনিয়তই হিমশিম খাচ্ছি। রোগীদের তুলনায় ডাক্তার এবং নার্সদের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। নিজ বাসা থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন তারা। আমাদের প্রায় ৬০ জন হাসপাতাল কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। নিরাপত্তার অভাবে অনেকেই রাস্তায় বের হতে চাচ্ছেন না। অনেকের মা-বাবা, আত্বীয়স্বজন নিহত হওয়ায় তারা শোকাহত।হাসপাতালের পরিবেশ-পরিস্থিতি সবকিছুই এখন বেশ জটিল। আহতের মধ্যে অধিকাংশই নারী এবং শিশু। আমার মনে হয় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী শিশুরাই। তাদের কষ্টটা বর্ণনা করার মতো না। ৭০ শতাংশ শিশুই ১০ বছরের নিচে। নবজাতক শিশুদের জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন নেই। যেদিকেই চোখ যায় শুধু দেখি প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মানুষ। রক্তমাখা শরীরে কেউ কেউ আবার স্বজন হারানোর বেদনায় হতবিহ্বল। অবুঝ শিশুদের চিৎকারে আশপাশ আরও বিষণ্ণ হয়ে পড়েছে। যারা ভাগ্যের জেরে বেঁচে গিয়েছেন তাদের পরিস্থিতি আরও কঠিন। কেউ কেউ তাদের একটি পা হারিয়েছেন, কারও আবার দুটি পা নেই।
কারও কারও ক্ষতে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। আকস্মিক হামলায় অনেকে আবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্বজন এবং প্রিয়জন হারিয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে মানুষের মনে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৭০ শতাংশ মানুষেরই গভীর ক্ষত দেখা দিয়েছে, যা আমরা আগে কখনো দেখিনি। শুধু শিফা হাসপাতালেই ৬,০০০ রোগী রয়েছেন। রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে যারা গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন আমরা তাদেরই চিকিৎসা দিচ্ছি। তার মানে এই নয় আমরা অন্যদের দিকে নজর দিচ্ছি না। পাশাপাশি আমাদের হাসপাতালে আগত ডায়ালাইসিস, কার্ডিয়াক, কিডনি সমস্যা এবং গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসায়ও আমরা তৎপর। ২০১৪ সালে শিফা হাসপাতালে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছিল ইসরাইলি বাহিনী। সে বছর ৫১ দিনের হামলায় ২,২০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং আহত হন প্রায় ১০,০০০। তবে এবারের হামলা পূর্বের তুলনায় আরও বেশি ভয়ংকর। মাত্র ৬ দিনের ব্যবধানে ৬০০০ মানুষ নিহত হন এবং আহত হন প্রায় ১৭,০০০ জন।এবারের হামলায় আহতদের ক্ষত ২০১৪ সালের তুলনায় অনেক বেশি জটিল। আহতদের সরকারিভাবেই সব চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা হচ্ছে।
এছাড়াও কিছু এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ডব্লিউএইচও, রেড ক্রস বিভিন্নভাবে আমাদের সাহায্য করছে। হাসপাতালে এখন ঠিক কতজন কর্মী আছেন সঠিক তথ্য আমার জানা নেই। তবে ধারণা করছি, এখনো ২০০ জন ডাক্তার এবং ৩০০ জন নার্স রয়েছেন। এছাড়া ল্যাবরেটরি, প্যাথলজি এবং ফিজিওথেরাপি ডিপার্টমেন্টসহ অন্য বিভাগে মোট ৬০০ জন কর্মরত রয়েছেন। যুদ্ধের আগে হাসপাতালে ৫০০টি বেডের ব্যবস্থা ছিল, এখন বেডের সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় ১০০০টি। হাসপাতাল চত্বরে তাঁবু ফেলা হয়েছে।
কারণ, ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষ শিফা হাসপাতালে আশ্রয় নিচ্ছেন। তারা মনে করেন গাজায় শিফা হাসপাতাল সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।তবে শুধু থাকার জায়গাটুকুই, তাদের খাবারের ব্যাপারে হাসপাতাল কিছু করতে পারছে না। শুধু গুরুতর আহত রোগী এবং হাসপাতাল কর্মীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছে কর্তৃপক্ষ।

Related Articles

Back to top button