বিনোদন

ভালোবাসার দিন বসন্ত জাগ্রত দ্বারে

টাইমস২৪ ডটনেট, ঢাকা: গাছের পাতা ঝরতে শুরু করেছে আরও কয়েকদিন আগেই। ইট-পাথরের রাজধানীতেও শোনা যাচ্ছিল কোকিলের কুহুতান। আর শীতের খোলস পাল্টে প্রকৃতি তার রূপ বদলাতে শুরু করেছে তারও আগে। তবে দিন তারিখের হিসেবে সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) শীতের শেষ দিন। কবির ভাষায়- ‘জাগ্রত বসন্ত দ্বারে’ সমাগত প্রায়। আগামীকাল পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন এবং বাংলা সনের একাদশ মাস। বসন্ত মানে পূর্ণতা। বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব। মাঘের ‘বাঘ পালানো’ শীত বিদায় নিয়েছে, সে–ও সপ্তাহখানেক আগেই। জানুয়ারিতেই বইতে শুরু করে বসন্তের বাতাস। মার্চের মতো খানিক উষ্ণ আর খানিক হালকা হিমেল বাতাস ইতোমধ্যে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বইতে শুরু করেছে। দেশের কোথাও কোথাও তো রীতিমতো গ্রীষ্মের কাছাকাছি উত্তাপের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। সোমবার শীতের শেষ দিন, কাল বসন্ত। অমর একুশে গ্রন্থমেলায়ও এর দোলা লাগবে। মেলায় থাকবে বাসন্তী রঙের উৎসব। তরুণীরা এ রঙের পোশাক আর গাঁদা ফুলে নিজেদের সাজিয়ে মেলায় আসবেন। তরুণরা পরবেন বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি-ফতুয়া। আরও ভালোবাসার পরশ। কারণ, আগামীকালকের দিনটি ভালোবাসার মানে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। প্রেমিকযুগল হাতে হাত ধরে শহরে নানা জায়গায় ঘোরাঘুরি শেষে আসবেন বইমেলায়। মনের মানুষটিকে লাল গোলাপের সঙ্গে উপহার দেবেন প্রিয় লেখকের বই। এদিন মেলা রাঙাবে লাল রঙে। দু’দিনই মেলায় থাকবে উৎসবের আমেজ। ফাল্গুনের প্রথম দিনকে বাংলাদেশে পহেলা ফাল্গুন ও বসন্ত বরণ উৎসব হিসেবে উদযাপন করা হয় যা ১৯৯১ সালে সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ কর্তৃক আয়োজন করা হয়।
শীতের রুক্ষতাকে পেছনে ফেলে প্রকৃতিকে আবার নতুন রূপে সাজিয়ে তোলার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে বসন্ত। গাছে গাছে নতুন পাতা গজায়। ফুলের মুকুল আসে। পাখি গান গায়। আর বাতাসে ভাসে মিষ্টি ফুলের ঘ্রাণ। প্রজাপতিরা রঙিন ডানা মেলে জানায় ঋতুরাজের আগমনী বার্তা। বসন্ত শুধু প্রকৃতিতেই নয় মানুষের মনেও জাগায় প্রাণের ছোঁয়া। তাই বসন্তের প্রথম দিনটিকে উদযাপন করতে সবাই মেতে ওঠে উৎসবে। নিজেকে সাজিয়ে তোলে বসন্তের রঙে। ফাল্গুন নামটি এসেছে মূলত ফাল্গুনী নামে নক্ষত্র থেকে। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকে চন্দ্রবর্ষ ও সৌরবর্ষ উভয়ই মেনে চলা হতো। ফাল্গুন ছিল পূর্ণ চন্দ্রের মাস। ১৯৫০-১৯৬০ দশকেই আনুষ্ঠানিকভাবে পহেলা ফাল্গুন পালন শুরু হয়। সেসময় বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের সংস্কৃতি থেকে নিজেদের আলাদা করতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার পাশাপাশি বাঙালি নিয়মে পহেলা ফাল্গুন পালন শুরু করে। বসন্ত নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক গান, অনেক কবিতা। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায় ‘ ফুল ফুটুক, আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ‘বসন্ত নিয়ে জনপ্রিয় একটি গান হচ্ছে ‘বসন্ত বাতাসে সই গো বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে সই গো, বসন্ত বাতাসে’। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্ত নিয়ে লিখেছেন অনেক কবিতা এবং গান।

পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ যেমন, তেমনি এ মাসের রাজনৈতিক গুরুত্বও অসীম। ফাগুনে শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙ মনে করিয়ে দেয় বায়ান্নর ফাগুনের শহীদদের কথা। মনে করিয়ে দেয় ভাষাশহীদের রক্তের ইতিহাস। এ মাসেই মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন রফিক, বরকত সালামরা। তাদের রক্তের সোপান বেয়ে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তাই ফাগুন বাঙালির দ্রোহেরও মাস।

এদিকে আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত উদযাপন করলেও ২০২০ থেকে পাল্টে গেছে নিয়ম। এখন ভালোবাসা দিবস আর বসন্ত দুটোই পালিত হয় ১৪ ফেব্রুয়ারিতে। নতুন সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জিতে পহেলা ফাল্গুন অর্থাৎ বসন্তের প্রথম দিনেই হচ্ছে ভালোবাসা দিবস। ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয় সারা বিশ্বে। আর বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন পালিত হয় বসন্ত উৎসব।

১৯৭১ সালের কয়েকটি ঐতিহাসিক দিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি। যার ফলে ইংরেজি দিন ঠিক থাকলেও কিছুটা এদিক সেদিক হয়েছে বাংলা মাসের তারিখ। নতুন এই বর্ষপঞ্জিতে জাতীয় দিবসের বাংলা তারিখ এখন থেকে একই থাকবে প্রতিবছর।

বাংলা একাডেমির তথ্য অনুসারে, সংশোধিত বর্ষপঞ্জিতে বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাস ৩১ দিন, কার্তিক থেকে মাঘ মাস ৩০ দিন এবং ফাল্গুন মাস ২৯ দিন ধরে গণনা করা হবে। তবে গ্রেগরীয় পঞ্জিকার অধিবর্ষে (লিপ ইয়ার) ফাল্গুন মাস ২৯ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন গণনা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই সেভাবেই সাজানো হয়েছে নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি।

এবছরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে ‘বসন্ত বরণ’ উৎসব। সকালে শুরু হওয়া এই উৎসবের মধ্য দিয়েই বাঙালি বরণ করে নেবে তার প্রিয় ঋতুটিকে।

Related Articles

Back to top button