
টাইমস ২৪ ডটনেট: ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ এর প্রতিশোধ হিসাবে পাকিস্তানও অভিযান শুরু করেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে, ‘অপারেশন বুনিয়ান-মারসুস’। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও সেনাবাহিনীর জনসংযোগ বিভাগ আইএসপিআর দাবি করেছে, ভারত নতুন করে তাদের তিনটি বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর জবাবে ভারতের পাঠানকোট, উধমপুর, জম্মু-কাশ্মীর ও পাঞ্জাবসহ উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিস্তৃত অঞ্চলে পাকিস্তান ৩৬টি স্থানে ড্রোন ও আর্টিলারি হামলা চালিয়েছে। বারামুলা থেকে ভূজ পর্যন্ত বিস্তৃত এই হামলায় অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারতের সেনাবাহিনী। গত শুক্রবার রাতে পাকিস্তান এই হামলা চালায় বলে জানিয়েছে ভারতের সেনাবাহিনী।
ভারত দাবি করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পাকিস্তান প্রায় ৪০০টি তুর্কি নির্মিত ‘সোনগার’ ড্রোন দিয়ে ৩৬টি স্থানে হামলা চালায় এবং ভারি কামান ব্যবহার করে গোলাবর্ষণ করে, যার ফলে কিছু সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। এর পরপরই নতুন করে ড্রোন হামলার তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে। হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল জম্মু, সাম্বা, পাঠানকোট, উধমপুর, নাগরোটা, বারামুলা, শ্রীনগর, আওয়ান্তিপোরা, অমৃতসর, ফিরোজপুর, ফাজিলকা, জয়সলমের, লালগড় যতন, বর্মের, ভূজ, কুয়ার বেট ও লক্ষী নালা। কাশ্মীর ও রাজস্থানের পোখরান অঞ্চলেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। শ্রীনগর বিমানবন্দর ও আওয়ান্তিপোরা বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে এবং সব ড্রোন হুমকি মোকাবিলায় অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম ব্যবহার করছে। এলওসি’র কাছে পাকিস্তানী বাহিনীর একাধিক যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জবাবে পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আকাশে একাধিক ড্রোন ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে এবং বিস্ফোরণ ও অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট গান ছোড়ার শব্দ শুনতে পাওয়া গেছে। নিরাপত্তার জন্য অনেক জেলায় ব্ল্যাকআউট জারি করা হয় এবং সাইরেন বাজিয়ে সতর্ক করা হয়। ফিরোজপুরের খাই ফেমে কে গ্রামে একটি বিস্ফোরণে তিনজন আহত হয়েছেন, যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রী বলেন, পাকিস্তান বেসামরিক বিমানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং উপাসনালয়ের ওপর হামলা চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক নিয়মের লঙ্ঘন।
উইং কমান্ডার বিয়োমিকা সিং জানান, ভারত পালটা জবাবে পাকিস্তানের চারটি এয়ার ডিফেন্স ঘাঁটিতে সশস্ত্র ড্রোন হামলা চালায়, যার মধ্যে একটি রাডার ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
তিনি জানান, টাংধার, উরি, পুঞ্চ, মেন্ধার, রাজৌরি, অখনুর এবং উধমপুরে হামলায় আমাদের সেনাদের কিছু ক্ষতি হয়েছে, তবে পাকিস্তান আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে।
কলোনেল সোফিয়া কুরেশি বলেন, সীমান্তের কাছাকাছি বেসামরিক বিমান ব্যবহারের মাধ্যমে পাকিস্তান ঝুঁকিপূর্ণ ও দায়িত্বহীন আচরণ করেছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানালেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের নিরাপত্তা বজায় রাখতে সংযম দেখিয়েছে।
এদিকে গতকাল শনিবার ভোর পৌনে ছয়টার দিকে শ্রীনগরে কয়েকটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। শহরজুড়ে এখন পুরোপুরি ব্ল্যাকআউট চলছে। এর আগে ভারত এবং পাকিস্তান দুই দেশই দাবি করেছে যে, শুক্রবার দিবাগত রাতে তাদের ওপরে অপর দেশ থেকে হামলা হয়েছে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বলছে, ভারত তাদের তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। রাওয়ালপিন্ডি এবং ইসলামাবাদেও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তবে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় নি বলে দাবি করেছেন দেশটির সেনা মুখপাত্র।
অন্যদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে উত্তর থেকে পশ্চিম বিভিন্ন রাজ্যে সন্দেহভাজন সশস্ত্র ড্রোন দেখা গেছে। পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে এরকমই একটি ড্রোন হামলায় কয়েকজন নাগরিক আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের ৩২টি বিমানবন্দর থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের আকাশসীমা শনিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
তবে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ভারতে হামলার বিষয়ে একের পর এক দাবি করে যাচ্ছে। সর্বশেষ তারা ভারতের এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়ার দাবি করেছে। এই উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত কিনেছে। একই সঙ্গে তারা সাইবার হামলা করে বিজেপিসহ ভারতের শীর্ষস্থানীয় ওয়েবসাইটগুলো হ্যাক করার দাবি করেছে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও সেনাবাহিনীর জনসংযোগ বিভাগ দাবি করেছে, ভারত নতুন করে তাদের তিনটি বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর জবাবে ভারতের পাঠানকোট, উধমপুরসহ বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে তারা।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি জানিয়েছেন, পাকিস্তান ভারতের বিমানঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে উচ্চগতির ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। পাকিস্তানের তিনটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, পাকিস্তান এমন অভিযোগ তোলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতের বিমানঘাঁটিতে হামলার খবর এলো। এর আগে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ বলেছেন, তাদের তিনটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ভারত। যদিও ভারত এই দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী ভারতকে সতর্ক করে বলেছেন যে ভারতের উচিত পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করা। তিনি দাবি করেন যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভারতের বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে। তিনি বলেন যে তার দেশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
এদিকে পাকিস্তানের হামলায় ভারতশাসিত কাশ্মীরের অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট ডেভেলপমেন্ট কমিশনার রাজ কুমার থাপ্পা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া পোস্টে তিনি এ তথ্য দিয়ে শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, ভারতের হামলায় গত ১২ ঘণ্টায় পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরে ১৩ বেসামরিক নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার দুপুরের দিকে এ তথ্য জানায় অঞ্চলটির বিপর্যয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার সকালে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা চালায়। এতে আজাদ কাশ্মিরে ১৩ জন নিহত হওয়ার তথ্য জানা গেলো। এছাড়া একই সময় সেখানে ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
আজাদ কাশ্মিরের তথ্যমন্ত্রী পীর মাজহার সাঈদ শাহ জানিয়েছেন, গত শুক্রবার রাতে ভারতীয় গোলাবর্ষণে এক শিশু, নারীসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ভারতের গোলায় ২৩৬টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। যারমধ্যে ২৯টি বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। বাড়িতে হামলার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে দুটি ছোট হাসপাতালেও ভারতীয় বাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে জানান আজাদ কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী। তবে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে কতজন নিহত হয়েছেন সে ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য জানায়নি ভারত। বার্তাসংস্থা পিটিআই অবশ্য এক কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে, জম্মুর আরএস পুরাতে পাকিস্তানিদের গোলার আঘাতে বিএসএফের ৮ সদস্য আহত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে পাকিস্তানের তিনটি বিমানঘাঁটিতে মিসাইল হামলা চালায় ভারত। এর কিছুক্ষণ পর পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালানো শুরু করে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেছেন, ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শনিবার পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী সমন্বিত শক্তিশালী হামলা চালিয়েছে। তিনি জানান, ভারত যেসব সামরিক অবকাঠামো ব্যবহার করে পাকিস্তানের ওপর হামলা চালিয়েছে সেগুলো লক্ষ্য করেই পাকিস্তান হামলা চালিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ আরও বলেন, পাকিস্তান তাদের নিরীহ মানুষের রক্তের বদলা নিয়েছে।
অপরদিকে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই পাশের বিভিন্ন শহর এবং গ্রামে বসবাস করা সাধারণ মানুষের দিন কাটছে আতঙ্কে। বহু মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। দুদেশের শহর এবং গ্রামগুলোতে বসতবাড়ির মধ্যে গোলা পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে অনেক বাড়ি। কোথাও আবার পুরো শহরই প্রায় খালি করে মানুষ পালিয়ে গেছে।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি আর কুপওয়ারার স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই অঞ্চলের স্থানীয় মানুষ সীমান্তের অপর দিক থেকে গোলাগুলির ঘটনায় অভ্যস্ত। তবে কুপওয়ারা ক্রালপোরা গ্রামের মানুষ কখনো দেখেননি যে, তাদের গ্রামে গোলা এসে পড়েছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা তানভির আহমেদ বলেন, জীবনে এই প্রথম আমাদের গ্রামে গোলা এসে পড়লো। গত শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে তাদের বাড়িতে একটি গোলা এসে পড়ে। এতে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার একটি ট্রাক ও মাটি কাটার যন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন কারণ পরিবারের সবাই মাত্র ৫০০ মিটার দূরে একটা আশ্রয় কেন্দ্রে চলে গিয়েছিলেন। তাদের গ্রামে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য কোনো বাঙ্কার বানানো হয়নি।
উরি শহরের বাসিন্দারাও বলছেন, এত বেশি সংখ্যায় গোলা পড়তে তারা কখনো দেখেননি। বিবিসিকে পাঠানো এক টেলিফোন ভয়েস মেসেজে উরির বাসিন্দা নিসার হুসেইন বলেন, আমরা একটা মসজিদের বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এটা ১০ বছর আগে বানানো হয়েছে। সকালে যখন বাড়ির দিকে যাই দেখতে পাই আমার বাড়ির আশপাশেই তিনটা গোলা পড়েছে। বাড়ির কিছুটা অংশ ভেঙ্গে গেছে। একই দৃশ্য দেখেছেন বিবিসির আরেক সংবাদদাতা ডেভিনা গুপ্তা। তিনি ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার সুরানকোটে গিয়েছিলেন। তিনি বলছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ব্যাপক গোলাবর্ষণের ফলে পুঞ্চ জেলার বহু মানুষ এখন ঘরছাড়া। গত বুধবার মাঝরাতের পর পাকিস্তানে ভারতীয় হামলার পর থেকে গোলাবর্ষণ বহুগুণ বেড়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সোবিয়া নামের এক বাসিন্দা বিবিসিকে বলেছেন, হঠাৎ একটা বিস্ফোরণের শব্দ শুনে একমাসের বাচ্চাটাকে কোলে নিয়েই দৌড়াই আমি। সুরফিন আখতারের বাড়ির সামনেই একটা গোলা এসে পড়েছিল। তারপরেই ঘর থেকে পালিয়েছেন তারা। তিনি বলেন, একটাও গাড়ি পাওয়া যায়নি। বহুদূর পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়েছে। এত গোলাবর্ষণ হচ্ছিল যে, পুরো রাস্তা আমি ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে হেঁটেছি। নিয়ন্ত্রণ রেখার ভারতীয় অংশে যেমন সুরফিন আখতার সারা রাস্তায় কেঁদেছেন, পাকিস্তানের দিকে চাকোঠি গ্রামের বেশির ভাগ কমবয়সী নারী আর বাচ্চারাও একই ভাবে সারারাত কেঁদেছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা কিফায়াত হুসেইন জানান, তারা জীবনে এত বেশি গোলাবর্ষণ দেখেননি। এর আগে সবচেয়ে বেশি গোলাবর্ষণ হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। তিনি জানিয়েছেন, ৬ তারিখ রাতটা তিনি পরিবারকে নিয়ে একটা সিমেন্ট ঢালাই করা বাথরুমে বসে কাটিয়েছেন। চাকোঠিসহ পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বেশিরভাগ গ্রামের বাড়িতে ২০০৫ সালে ভূমিকম্পর পর থেকেই টিনের ছাদ দেওয়া হয়। ওই সব ছাদ গোলাগুলি একেবারেই আটকাতে সক্ষম নয়। হুসেইন বলেন, গোলাগুলি শুরু হতেই সব বাসন আর অন্যান্য জিনিষপত্র মাটিতে আছড়ে পড়তে শুরু করে এবং বাচ্চারা খুব জোরে কাঁদতে শুরু করে।
পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে বিবিসির এক সংবাদদাতা জানান, সেখানেও একই ধরনের পরিস্থিতি। নিয়ন্ত্রণ রেখার ধারে নীলম উপত্যকা থেকে সম্প্রতি মুজফ্ফরাবাদ শহরে পরিবার নিয়ে চলে এসেছেন মুহাম্মদ শাগির। বাড়ির সামনে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার পরেই তিনি পরিবারকে সরিয়ে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, বাচ্চারা বিশেষ করে ছোট শিশুরা বেশ ভয় পেয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ওদের শুধু বোঝাচ্ছিলাম যে একটা নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাব। রাতটা খুব ভয়াবহ ছিল। পরের দিন সকালেই আমি বাচ্চাদের নিয়ে পাশের শহরে বোনের বাড়িতে চলে যাই। শাহরিয়ার অবশ্য এখনও শহর ছেড়ে যাননি, তবে তার পরিবার ব্যাগপত্র গুছিয়ে রেখেছে, যদি কিছু হয় তাহলে যেন সঙ্গে সঙ্গেই পালাতে পারেন তারা। তিনি বলেন, আগে থেকে তো বলা যায় না কখন কী হয়। আমরা শহরে থাকি আর চারদিকে প্রচুর সামরিক স্থাপনা রয়েছে। আমরা তো বাড়ি থেকে বের হচ্ছি না, এমনকি বাজারেও যাচ্ছি না।