রাজনীতি

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ‘সাময়িক’

টাইমস ২৪ ডটনেট: ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাম হামলা কেন্দ্র করে বাড়ছে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনার পারদ। ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পর পাকিস্তানের অন্তত নয়টি স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারত। পাল্টা হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানও। হতাহতও হয়েছে দুই দেশের শতাধিক মানুষ। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন পুরো বিশ্ব। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশসহ গোটা দক্ষিণ এশিয়া এ হামলা নিয়ে আতঙ্কে। এরই মধ্যে উদ্বেগ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্ব নেতারা। জাতিসংঘের মহাসচিবও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প এ হামলাকে ‘লজ্জাজনক’ বলেছেন।
তাহলে কি যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে দুই দেশ? এটা নিয়ে চলছে জোর চর্চা। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নিছক ‘সাময়িক উত্তেজনা’ এবং ভারতের ভোটের রাজনীতি। এরা যুদ্ধের দিকে যাবে না। কারণ প্রত্যেকে নিজেদের সক্ষমতা জানে। তবে এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায়।গত রাতে (৬ মে দিনগত রাত) পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ভারত। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানান, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ভাওয়ালপুরের আহমেদপুর শারকিয়া, মুরদিক, শিয়ালকোট ও শকরগড় এবং পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কোটলি ও মুজাফ্ফরাবাদে এসব হামলা হয়েছে।ভারত দাবি করছে, এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৭০ জন নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এ সময় ভারতের অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমান ‘ভূপাতিত’ করা হয়েছে। আবার পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ভারতে অন্তত ১০ জন নিহত ও ৩২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।এ হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। তিনি উভয় দেশের সর্বোচ্চ সামরিক সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাত বিশ্বের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি। গুতেরেস জানিয়েছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের এই সামরিক অভিযান নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছে। পাকিস্তান পাল্টা স্ট্রাইক করলে পরিণতি কী হয়, তার ওপর নির্ভর করবে কী হতে যাচ্ছে! তবে দুই দেশের মধ্যে যেভাবে বলা হয় যুদ্ধ, সেটা এখনো শুরু হয়নি। আক্রমণের প্রভাব তো শুরু হয়ে গেছে। সকালে বাংলাদেশের দুটো ফ্লাইট ফেরত গেছে। যেখানে মিসাইল হামলা হয়, দুটো দেশই অন্য এয়ারলাইন্সকে বলবে এই উপমহাদেশের আকাশসীমা থেকে দূরে থাকতে।’‘দেখা যাক, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকটা কোন টেকনোলজি দিয়ে হয়। এভাবে করতে করতে যদি যুদ্ধ লেগেই যায়, তাতে শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, সবারই ঝামেলা তৈরি হবে। সাপ্লাই চেন ব্যাহত হবে। জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে।’
বাংলাদেশের করণীয় কী হতে পারে? জবাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই শিক্ষক বলেন, ‘আপাতত হয়তো বাংলাদেশ বিবৃতি দেবে- দুই দেশকেই কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিয়ে আসার জন্য। বাংলাদেশের বড় আকারে কিছু করারও নেই। মধ্যস্থতায় ভূমিকায় যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই। কারণ বাংলাদেশে যে সরকারই আসুক না কেন, হয় দিল্লি না হয় ইসলামাবাদকেন্দ্রিক হয়ে যায়।’তিনি বলেন, ‘বড় আকারে বাংলাদেশকেন্দ্রিক যদি থাকতো, পেশাদারত্ব যদি তৈরি করতে পারতাম, যাতে অন্য দেশগুলো আস্থায় নেয়। যেটা নরওয়ে, টার্কি, কাতার, সৌদি আরব করতে পেরেছে। এ ধরনের দেশ হলে মধ্যস্থায় ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের মনে হয় না, সেটা আমরা পারবো। সর্বোচ্চ আমরা বলতে পারি, তারা যেন যুদ্ধে না থাকে, কূটনীতির পথে চলে আসে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খালিদ কুদ্দুস বলেন, ‘যেটি মনে হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়াবে। আসলে সেটি হবে না। এটি সাময়িক উত্তেজনা। কারণ দুই দেশই পারমাণবিক শক্তিধর। তারা নিজেদের সক্ষমতা জানে। একটা পারমাণবিক শক্তিধর দেশ অপর একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না। এই সাময়িক উত্তেজনা খুব শিগগির কেটে যাবে। দীর্ঘস্থায়ী হলে এটার ধাক্কা কমবেশি এই উপমহাদেশে পড়বে।’তিনি বলেন, ‘ভারতে নির্বাচন হয়, দেখবেন প্রায়ই হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্ব সামনে নিয়ে আসে। এই উপমহাদেশের বড় সমস্যাই হলো- হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্ব। পহেলগামে যেটা হয়েছে, সেটা তো ভালো কিছু হয়নি। পাকিস্তান বলছে, এটা তারা করেনি। কিন্তু ভারতেও হিন্দুত্ববাদী সরকার, তারা তার জনগণকে দেখানোর জন্য এ কাজ করেছে। পাকিস্তানও পাল্টা জবাব দেবে। পরে এটা থেমে যাবে।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ জমির বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান যদি এই পরিস্থিতি চলমান রাখে, তাহলে এটার নেতিবাচক প্রভাব শুধু ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় পড়বে। তাদের এটা বোঝা উচিত। আমার কাছে মিসাইল আছে, আমি মিসাইল ব্যবহার করতে পারি, এটা সমস্যা সমাধানের পথ নয়। সার্ক আছে, আসিয়ান ও বিমসটেক তো আছে।’
তিনি মনে করেন, ‘আমেরিকাকে এখানে পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি আমেরিকা পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তারা মনে করবে পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে এবং তারা আরও গুরুতর হয়ে উঠবে। আর আমেরিকা যদি বলে বহুত হয়েছে, বন্ধ করো এখন। তাহলে বন্ধ হবে।’

Related Articles

Back to top button