
টাইমস ২৪ ডটনেট: গত ২২ এপ্রিল পহেলগামের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয় প্রায় ২৭ জন। সেই হামলা, তারই বদলা নিতে গতকাল মঙ্গলবার (৬ মে) গভীর রাতে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালায়। আর এই অভিযানের সামরিক ব্যাখ্যা দিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন দেশটির তিন বিশেষ প্রতিনিধি—পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি, উইং কমান্ডার ভ্যোমিকা সিং এবং কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। সংবাদসম্মেলনে তার বক্তব্য ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া স্ট্যাইল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। নেটিজেনরা বলছেন, সোফিয়ার বক্তব্য ও তার ব্যক্তিত্বসম্পন্ন তাদের তার প্রতি আকৃষ্ট করেছে। তাই হামলার পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে এই সোফিয়াকে মেতেছে নেটিজেনরা। সোফিয়া কেবল একজন সেনা কর্মকর্তা নন, তিনি এক অনুপ্রেরণার নাম। গুজরাটের মেয়ে, যিনি বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর শেষ করে বেছে নিয়েছিলেন যুদ্ধের কঠিন পথ। সিগন্যাল কর্পসের সিনিয়র অফিসার এই কর্নেল সেই বিরল নারী, যিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর হয়ে বহুবার নেতৃত্ব দিয়েছেন আন্তর্জাতিক মিশনে। ২০০৬ সালে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কঙ্গোতে নিযুক্ত হন। এরপরে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আয়োজিত বহুজাতিক সামরিক মহড়া ‘ফোর্স ১৮’-তে ২০১৬ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ দলকে নেতৃত্ব দিয়ে হয়ে ওঠেন ইতিহাসের প্রথম ভারতীয় নারী অফিসার।
তিনি সেনাবাহিনীতে এসেছেন উত্তরাধিকার সূত্রেও—তাঁর দাদা ছিলেন সেনাসদস্য, তাঁর স্বামী মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রির একজন মেজর। কিন্তু তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছিল কেবল নারী বলে নয়, বরং তাঁর দুর্দান্ত সামরিক দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা ও নেতৃত্বগুণের জন্য। তৎকালীন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত একবার বলেছিলেন, “তিনি নারী বলেই নির্বাচিত হননি, তিনি নির্বাচিত হয়েছেন তাঁর যোগ্যতার জন্য।”‘অপারেশন সিন্দুর’ ছিল প্রতিশোধের সেই কঠিন ভাষা, যেখানে শব্দ ছিল ক্ষেপণাস্ত্রের গর্জনে, আর বার্তা ছিল জঙ্গিদের উদ্দেশে—ভারতের সিঁদুর মুছে গেলে, জবাব আসবেই। নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি—পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে ৪টি, আর পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ৫টি—টার্গেট করে চালানো এই অপারেশনে ব্যবহার করা হয় অত্যাধুনিক স্মার্ট মিসাইল প্রযুক্তি। ভারতীয় বিমানবাহিনীর মতে, বেসামরিক প্রাণহানি এড়াতে নেওয়া হয় সর্বোচ্চ সতর্কতা।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি কমব্যাট ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এই দাবির স্বাধীনভাবে যাচাই হয়নি এখনো।এই মুহূর্তে উপমহাদেশ দাঁড়িয়ে আছে এক বিপজ্জনক দ্বন্দ্বের চূড়ায়। কিন্তু সেই উত্তপ্ত মঞ্চে দাঁড়িয়ে কর্নেল সোফিয়া কুরেশির উপস্থিতি যেন বলে দেয়—ভারতীয় নারীর হাতে এখন শুধু সংসারের ভার নয়, আছে সীমান্তের প্রতিরক্ষাও। ‘অপারেশন সিন্দুর’ ছিল শুধু একটি সামরিক অভিযানের নাম নয়, এটি ছিল প্রতিশোধ আর সম্মানের মিলিত এক প্রতিধ্বনি।
সূত্র: জি নিউজ।