
টাইমস ২৪ ডটনেট: বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে আগামীকাল বুধবার চীন সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চলমান রাজনৈতিক সংকট বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে কোনো প্রভাব পড়বে না। ড. ইউনূসের প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর হবে ঐতিহাসিক। প্রধান উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর নিয়ে এমন কথাই জানালেন সহকারী প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার। আর ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এই সফরকে দু’দেশের জন্য মাইলফলক উল্লেখ করে বলেছেন, সফরে বড় ঘোষণা আসতে পারে। সফরে বেশ কিছু এমওইউ এর ব্যাপারে আশাবাদী পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এছাড়াও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে আলোচনা হবে ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের উদ্বেগজনক অবনতি ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশে যখন আলোচনা তুঙ্গে তখনই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের চীন সফরের পরই আলোচনায় আসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের বিষয়। সফরের খুঁটিনাটি নিয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন পররাষ্ট্র সচিব ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গেও কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
ঢাকা ও চীনের বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্র বলছে, প্রধান উপদেষ্টার এই সফরে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসতে পারে। যার মধ্যে বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন, চীনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও চিকিৎসা সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও স্থান পাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও তিস্তা ইস্যু। দু দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে এই সফর ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক হবে বলেও প্রত্যাশা করা হচ্ছে। দুই দেশ কীভাবে পারস্পরিক লাভবান হতে পারে সেটাই চীনের প্রধান লক্ষ্য। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল বুধবার চীনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। তিনি ২৭ মার্চ চীনের হাইনান প্রদেশে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া সম্মেলনে যোগ দেবেন। তিনি এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। ২৮ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি হুয়াওয়ের একটি উচ্চ প্রযুক্তির উদ্যোগ পরিদর্শন ও চীনের শীর্ষস্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২৯ মার্চ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেবে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি সেখানে বক্তব্য দেবেন। এরপর ওইদিনই প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরবেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে যে কমপক্ষে ৮-১০ ইস্যুতে দুইপক্ষের মধ্যে সমাঝোতা স্মারক সই হতে পারে। চীন চায় যে বাংলাদেশ তাদের বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ (জিডিআই), বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ (জিএসআই) এবং বৈশ্বিক সভ্যতা উদ্যোগ (জিসিআই) যোগ দিক। আসন্ন সফরে চীন এগুলো আলোচনা তুলতে পারে। তবে ঢাকা এখনই চীনের এসব উদ্যোগে যুক্ত হতে চায় না। এসব উদ্যোগের পেছনে ভূ-রাজনীতি জড়িত থাকায় ঢাকা পরিস্থিতি আরো পর্যবেক্ষণ করতে চায়।
ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে ঘোষণা আসতে পারে। কেননা এ বছর দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ সফর ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক হবে বলে প্রত্যাশা করছি। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর সামনে রেখে আমরা এখনো কাজ করছি। দুদেশ কীভাবে পারস্পরিক লাভবান হতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটা বৈশ্বিক ম্যানুফেকচারিং হাব (উৎপাদন কেন্দ্র) হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। সে লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার সফরে চীনের কারখানাগুলোকে কীভাবে বাংলাদেশে স্থানান্তর করা যায়, সে বিষয়টি আলোচনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেন, দেশের অভ্যন্তরের রাজনীতি। সেখানে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকমের মত থাকবে সেটা এক জিনিস। এই চীনে প্রধান উপদেষ্টার যে সফর হচ্ছে সেটা একটা দ্বিপাক্ষিক সফর। মূলত এখানে অর্থনীতির বিষয় প্রাধান্য পাবে। এইটার সাথে রাজনীতিকে খুব বেশি জড়ানোর সুযোগ নেই।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, অর্ন্তবর্তী সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীন সফরে যাচ্ছেন আগামীকাল বুধবার। আগামী ২৮ মার্চ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্টের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তাৎপর্যপূর্ণ এই সফরের মধ্য দিয়ে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে কোনো চুক্তি সই হবে না। তবে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। চীনের জিএসআই, জিডিআিই এবং জিসিআই ইস্যুতে যোগদান সম্পর্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি নিশ্চিত নই। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। জিডিআইতে যুক্ত হতে আমাদের আপত্তি নেই, তবে আমরা এর অংশ হবো কি না তা এখনো নিশ্চিত নই।