topআন্তর্জাতিক

জেলনস্কির হিসেব কি মিলবে?

টাইমস ২৪ ডটনেট: মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে নেওয়ার প্রলোভনে অন্ধ হয়ে পড়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলনস্কি। সে অন্ধত্বে অনেকটা অসম একটি যুদ্ধে নামিয়ে দেয় ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটিকে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পাশে থাকার আশ্বাসে যে যুদ্ধে জাড়িয়েছিল ইউক্রেন, সে যুদ্ধই এখন তার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর আশ্বাস দেওয়া মিত্ররাও এখন দেখাতে শুরু করেছে আসল চেহারা।
তিন বছর পূর্ণ হতে চলেছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত। এরই মধ্যে দুই পক্ষের বহু সেনা নিহত হয়েছে, প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ। ইউক্রেনের একটি বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে রাশিয়া এবং রুশ সেনাদের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পূর্ব ইউরোপের দেশটির সাজানো-গোছানো শহরগুলো।
বলা হয়ে থাকে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর বড় ভূমিকা রয়েছে। এমনকি এই যুদ্ধ দীর্ঘদিন ধরে চলছে সেটাও যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহের কারণেই। বিগত তিন বছরে ইউক্রেনকে হাজার হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র জোগান দিয়েছে ওয়াশিংটন। জো বাইডেন প্রশাসনের আমলে এই অস্ত্রের জোগানকে বন্ধু রাষ্ট্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা হিসেবে দেখানো হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হওয়ার পর সেই খোলস এখন উন্মোচিত।ইউক্রেন যখন ধ্বংসপ্রায়, যুদ্ধবিরতি বা শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য যখন পাশে প্রকৃত বন্ধু প্রয়োজন, যখন পুনর্গঠনের জন্য অর্থ প্রয়োজন ঠিক তখন ইউক্রেনের পাশে না থেকে বরং তার খনিজসম্পদ দখলের পরিকল্পনায় ব্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। কিয়েভের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া অন্য পশ্চিমা দেশগুলোও মুখের কথা ছাড়া কাজে এগিয়ে আসছে না।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের সব খনিজসম্পদের ৫০ শতাংশ মালিকানা দাবি করেছেন। ইউক্রেনকে দেওয়া অস্ত্রের মূল্য হাজার হাজার কোটি ডলার ফেরত চাইছেন তিনি। আর এই বিপুল অর্থ ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের মাধ্যমে পরিশোধের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।


ট্রাম্প তার অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টকে কিয়েভে পাঠিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছে এ সংক্রান্ত বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, বেসেন্টকে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করার চুক্তি স্বাক্ষরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, এই খনিজসম্পদগুলো যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেওয়া সহযোগিতার বিনিময়ে চায়।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করার পর থেকে বিগত তিন বছরে বাইডেন প্রশাসন কিয়েভকে অন্তত ৩০ হাজার কোটি ডলারের অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে। ট্রাম্প এখন বলছেন, ইউক্রেনকে ৫০ হাজার কোটি ডলার ফেরত দিতে হবে; যদিও সাহায্য দেওয়ার সময় এমন কোনো শর্ত দেয়নি বিগত বাইডেন প্রশাসন। ইউক্রেনের এক কর্মকর্তা এবং এক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন শুধু ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নয়, তেল ও গ্যাসসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদও চেয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মতে, এ প্রস্তাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সম্পদ আহরণ থেকে অর্জিত আয়ের ৫০ শতাংশের অধিকারী হবে, যা বর্তমানে ইউক্রেনের সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। তবে সে আলোচনাতেই নেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলনস্কি। তাই তিনি হয়তো খাতা-কলম নিয়ে হিসেব কষতে বসেছেন- যুক্তরাষ্ট্রের কথায় যুদ্ধে জড়িয়ে কী পেলেন আর কতটুকু হারালেন? তার এই হিসেবের উত্তর মেলাও খুব কঠিন হবে না।

Related Articles

Back to top button