মতামত

মিয়ান আরেফির জবানবন্দি (৫)

মিয়ান আরেফি:আমি, মিয়ান আরেফি (মেম্বার, ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটি, ইউএসএ)। ২৮ অক্টোবর ২০২৩-এ ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে বিশাল সমাবেশের পর আমাকে ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) ড. সরওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আমরা প্রায় সাড়ে ৯ মাস কাশিমপুর ও ঢাকা কারাগারে বন্দি ছিলাম। কারাগারের জীবন অত্যন্ত কঠিন ও ভয়াবহ।

৫ অগাস্ট ২০২৪-এ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর আমরা মুক্তি পাই।

কাশিমপুর কারাগারে বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়েছি। জেল সুপারিনটেনডেন্ট সুব্রত বালা আমাকে এমন ভয়ংকর কষ্ট দিয়েছে, যা আমি জীবনে ভুলব না। এই অহংকারী সুব্রত বালাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হওয়া উচিত।

২৮ অক্টোবর সমাবেশে সহিংসতার পর আমি ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) ড. সরওয়ার্দীসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি সদর দপ্তরে (নয়াপল্টন) যাই। সেখানে আমি গণমাধ্যমের সামনে একটি প্রেস ব্রিফিং করি।

৩০ অক্টোবর ২০২৩-এ ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওয়ামী লীগের দালাল অহংকারী আলী হায়দার আমাকে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে রাখার আদেশ দেয়। এরপর আমাকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। এই ‘রক্তপিপাসু’ আলী হায়দারকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং তারও মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।
আমার ও ড. সরওয়ার্দীর বিরুদ্ধে প্যানাল কোডের ১০৯ ধারা অনুযায়ী ৪১৯ ধারায় মামলা হয়। এ অপরাধের শাস্তি ৩ বছরের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার সরকার আমাকে প্রতিদিন হুমকি দিত। তারা পরিকল্পনা করেছিল আমাকে কাশিমপুর কারাগারের ভেতরে ধীরে ধীরে হত্যা করার।
আমি ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) ড. সরওয়ার্দী অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে পরিকল্পনা করে ২৮ অক্টোবর ২০২৩-এর বিশাল সমাবেশের আয়োজন করি।
আমরাই প্রথম ব্যক্তি যারা ফ্যাসিস্ট হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানাই। আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের বিপ্লব শুরু হয়। অবশেষে অহংকারী ফ্যাসিস্ট হাসিনা ১৬ বছর পর পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় ও ৫ অগাস্ট ২০২৪-এ ভারত পালিয়ে যায়।
বাংলাদেশের জনগণ চায়, আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ করা হোক।
বাকশালই যথেষ্ট ছিল, কিন্তু আমরা তাদের দাফন করিনি। ফলে ড্রাকুলা হাসিনাকে লালন করেছি, যে ১৬ বছর আমাদের রক্ত শুষেছে।
দেশকে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে। তার দল, প্রশাসন, জেনারেলরা ও ভারতীয় স্বার্থান্বেষীরা ওত পেতে ছিল।

বাংলাদেশের জনগণ চায়Ñ ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার সরকারকে সামরিক ট্রাইব্যুনালের আওতায় আনা হোক; বেসামরিক আদালতে বিচার না করে সামরিক আদালতে দ্রুত বিচার করা হোক; বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন প্রশাসন থেকে হাসিনার লোকদের দ্রুত অপসারণ করে।
২০০৯ সাল থেকে ফ্যাসিস্ট হত্যাকারী হাসিনা কঠোরভাবে ক্ষমতায় ছিল। তাকে স্বৈরাচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বাকস্বাধীনতার দমন ও বিরোধীদের জেলে পোড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
২০২৪ সালের নির্বাচন যেন ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ’ হয়, সে জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ করে।
মে মাসে ওয়াশিংটন ঘোষণা করে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোট কারচুপি, বিরোধীদের দমন ও দাঙ্গার অভিযোগ হাসিনার সরকার অস্বীকার করেছিল।
এখন আর হাসিনা নেই! আমরা পেয়েছি নতুন বাংলাদেশ! আমি ও সরওয়ার্দী ৯.৫ মাস জেল খেটেছি মাতৃভূমি ও নিরীহ মানুষের জীবন রক্ষার জন্য।
কারাগারের জীবন চরম কঠিন ও ভয়ানক, কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছেন।
আমি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাই।
বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের জন্য সব সেক্টরে দ্রুত পরিবর্তন আনুন। কারণ এখনও প্রশাসনে আওয়ামী লীগের দোসররা রয়ে গেছে, যারা আমাদের ক্ষতি করতে পারে।
এই পরিবর্তন জরুরি, দেরি করা যাবে না!

লেখক: ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির সদস্য, ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র

Related Articles

Back to top button