টাইমস ২৪ ডটনেট: টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল রেঞ্জর আওতাধীন বনবিভাগের জমি ও আজগানা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বনের জায়গা দখল করে নির্মিত হচ্ছে ঘরবাড়ি। বনের জমি রাতের বেলায় দখল করে ঘর বাড়ি নির্মাণ ও মূল্যবান গাছ কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে বনাঞ্চল উজার হয়ে ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। বন বিভাগের জায়গায় অবাধে ঘরবাড়ি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে এলাকার সরকারি দলের রাজনৈতিক নেতা এবং বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার বিরদ্ধে। এতে করে বনবিভাগের কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টাঙ্গাইল উপজেলার হাটুভাঙ্গা এলাকায় বনবিভাগের গাছ কেটে ও জমি দখল করে শত শত আধাপাকা ঘর বানানো হয়েছে। গত ৫ আগস্ট ৪০টির মতো ঘর বানানো হয়েছে বনের জমি দখল করে। এসব এলাকায় জমি বনবিভাগের নামে থাকলেও দিনের পর দিন অবৈধ দখলদারদের কাছে চলে যাচ্ছে। নির্মাণ হচ্ছে অবৈধ বসতবাড়ি।
বনবিভাগের রেঞ্জ অফিস দায়িত্বে আছেন রেঞ্জার ও বিট কর্মকর্তা শরীফ খান চৌধুরী। আছেন বেশ কয়েকজন বন পাহারাদার। তাদের অফিসের পাশের শতাধিক মূল্যবান শালগাছ বিষাক্ত ওষুধ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আধাপাকা শত শত ঘরবাড়ি।
টাঙ্গাইল উপজেলার মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম এক মাস আগে চন্দ্রা রেঞ্জ অফিসের এক কর্মকর্তাকে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে ঘর নির্মাণ করেন। কিন্তু এলাকাবাসী ও সংবাদকর্মীদের অভিযোগের কারণে বাধ্য হয়ে অভিযান চালিয়ে সেই ঘরের কিছু অংশ ভেঙে দিয়েছে বনবিভাগ।
উপজেলার বক্তারপুর এলাকায় বনের জমি কেটে রাস্তা করে ফ্যাক্টরি করছে সোহাগ পল্লীর সাবেক মালিক আবদুল জলিল। উপজেলার ছাপরামসজিদ এলাকার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, তাদের এলাকায় কয়েকশত ঘর আছে বনের জমিতে। প্রতিটি ঘর নির্মাণের জন্য বনবিভাগের কর্মকর্তাদের ১ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে। কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাদের ঘর ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এলাকায় সোহান নামের একজন বনবিভাগকে ম্যানেজ করে টিনশেট দোকান তৈরি করছেন। তিনি বলেন, বনের জমিতে আগে থেকে আমার ঘর ছিল। সেই ঘর ইট দিয়ে একটু বড় করেছি।
অপর একটি সূত্র জানায়, মির্জাপুরের আজগানা ইউনিয়নের আজগানা, হাঁটুভাঙা, কুড়িপাড়া, বেলতৈল ও চিতেশ্বরী এলাকায় বন বিভাগের দুই হাজার ২৯৭ একর জমি রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আগে লোকজন ঘর তুললেও তা আটিয়া অধ্যাদেশের আওতায় রয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে ঘর তোলার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ইউনিয়নটিতে বন বিভাগের প্রায় ৬১৭ একর জমি জবরদখলে রয়েছে। যেখানে আট বছরে নতুন করে দুই শতাধিক বাড়ি করা হয়েছে। এগুলোসহ ইউনিয়নটিতে প্রায় চার হাজার বাড়ি জবরদখলকৃত জায়গায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসী জানায়, ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণ হলেও চিতেশ্বরী, টেকিপাড়া, আজগানা, হাটখোলা, ভেলকার চালা, জয়নারসিট ও বেলতৈল মধ্যপাড়া এলাকায় নতুন ঘরবাড়ির সংখ্যা বেশি রয়েছে। গত আট বছরে ইউনিয়নটিতে নতুন করে দুই শতাধিক বাড়ি নির্মিত হয়েছে। এদের মধ্যে স্থানীয়রা ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজনও রয়েছেন।
আজগানা ও হাটখোলা এলাকায় দেখা গেছে, পাহাড়ের উপরে ও ঢালে টিন ও ইটের দেয়ালে নির্মিত ঘর গড়ে উঠেছে। রফিকুল ইসলামের স্ত্রী সুফিয়া বেগম জানান, বন বিভাগের জায়গায় গত আট বছরে কমপক্ষে ৫০টি বাড়ি হয়েছে। এতে স্থানীয় এক নেতা সহযোগিতা করেছেন। কি কারণে ও কী ধরনের সহযোগিতা করেছেন তা জানতে চাইলে তিনি নীরব থাকেন। শফিকুল ইসলামের স্ত্রী আছমা বেগম জানান, ঘর তুলতে ফরেস্ট গার্ডসহ অনেকেই টাকা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে চন্দ্রা বিট অফিসের অফিসার শরিফ খান বলেন, বনের জমি দখল করে যারা ফ্যাক্টরি তৈরি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে বনবিভাগ মামলা দায়ের করেছেন। পরে তারা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এসেছেন। ঘর ভাঙতে গেলে নানা ধরনের তদবির করেন। তাহলে উচ্ছেদ করবো কীভাবে? মাটিকাটা রেললাইন এলাকার দোকান নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা একটি টিনসেট বিল্ডিং করছিলেন, সেটার কিছু অংশ ভেঙে দিয়েছি। এছাড়া ঘর তৈরির সময় কখনও টাকা নেয়া হয় না। প্রতি মাসে টাকা নেয়ার কথাও সত্য নয়। তিনি দাবী করেন সততার সাথে বনবিভাগে চাকরি করছেন।