টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: রাজধানীতে ময়লা পরিষ্কারের নামে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা ফেঁতে বসেছেন একটি প্রভাবশালী চক্র। এই চক্রটি যখন যে রাজনৈতিক দল থাকে ওই রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ফায়দা লুটে নেয়। সিটি কর্পোরেশনকে তোয়াক্কা না করেই নিজেদের নির্ধারণ করা ময়লার বিল তুলে নিচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ড জুড়ে ময়লা পরিষ্কারের রয়েছে শক্তিশালী একটি চক্র। অথচ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ময়লা পরিষ্কারে ওয়ার্ড ভিত্তিক ঠিকাদার নিয়োগ করলেও, উত্তর সিটি কর্পোরেশনে রয়েছে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম।
জানা গেছে, রাজধানীর উত্তর সিটির ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৭টি সেক্টরে বাসা প্রতি মাসিক ময়লার বিল ২৫০ আর বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বাবদ নেয়া হচ্ছে ১৫শ থেকে ৩৫শ টাকা পর্যন্ত। সে হিসেবে এই ওয়ার্ডেই টাকা উঠে মাসিক ৮০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা। এইভাবে উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডেই টাকা উঠাচ্ছেন একটি চক্র। যার অর্ধেকও খরচ হয়না বর্জ্যকর্মীদের বেতনে। এতে সেবার আড়ালে চলছে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আরাফাত হোসেন দায়িত্বের বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও পরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার প্রতিশ্রুতি দেন। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় একই অবস্থা চলছে।
সূত্র জানায়, গত ২০০০ সালে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সময় প্রথম বর্জ্য পরিষ্কারের অনুমতি দেয়া হয়। পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশন উত্তর ও দক্ষিন দুইটি ভাগ হয়। তখন উত্তর সিটি কর্পোরেশন এ ওয়ার্ড হয় ৩৬টি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর অনুমতি নিয়ে ৩৬টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পরিষ্কার করে আসতেছিল। পরর্বতীতে আরও ১৮টি ওয়ার্ড ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এ অর্ন্তভুক্ত হয়। বর্তমানে মোট ৫৪টি ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি নিবন্ধন এর জন্য উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক সিডিউল বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিদিন বাসা-বাড়ী থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে উত্তর সিটি কর্পোরেশান নির্ধারিত স্থানে অপসারন করে করতে হবে। বর্তমানে উত্তর সিটি কর্পোরেশন ভ্যান সার্ভিস নিবন্ধন এর কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে সমস্যা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান আবেদন ফরম পূরণ ও জমা দিয়েছে। যাহারা কাজ করে তারাও জমা দিয়েছে আবার যারা কাজ করে না বা নামমাত্র এই কাজের সাথে সম্পৃক্ত তারাও আবেদন দিয়েছে। একটি চক্র সেবা করার নামে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ এই পেশার সাথে যারা জড়িত তারা কোন কাজ পাচ্ছে না। কাজ না পাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে প্রতি বছর ১০ লাখ টাকা জামানত ও ১০ লাখ টাকা রাজস্বসহ মোট ২০ লাখ টাকা জমা দিয়ে এই ময়লা পরিষ্কারের কাজ করতে হবে। তাই এই কাজের যারা প্রকৃতভাবে জড়িত তারা কাজ পাচ্ছে না। যারা বর্তমানে ময়লা পরিষ্কার করছে তারা ভালভাবে ময়লা পরিষ্কার করতে পারছে না। এতে ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা নষ্ট হচ্ছে, বিভিন্ন স্থানে ময়লার জমে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের মহানগর-এর নেতা পরিচয়ে বিএনপি’র নাম ভাঙ্গিয়ে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকতাদের চাপ দিচ্ছেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাজ নেয়ার জন্য। অথচ এই সব লোজনের নেই কোন পিকআপ ভ্যান ও লোকজন। তারা লোকজন ও পিকআপ ভ্যান ভাড়া করে এনে ময়লা পরিষ্কার করে। এর পিছনে কারন হলো তারা চাঁদাবাজি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
উত্তর সিটি কপোরেশনের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, যারা ময়লা পরিষ্কার করে তারা দক্ষ নয়। তারা প্রতিমাসেই আমার কাছ থেকে ২০০০ টাকা করে নিচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন ময়লা ফেলে না। তারা সপ্তাহে একবার বা দুই সপ্তাহে একবার এসে ময়লা নিয়ে যায়। তাদের কিছু বলা যায় না, বললে উল্টো-পাল্টা কথা বলে। এটা একটি সঠিক সমাধান প্রয়োজন।
উত্তর সিটি কপোরেশনের উপ প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মফিজুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, চলতি বছর বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য কোন লটারি বা টেন্ডার হবে না। মূল্যয়ন কমিটির মাধ্যমে নির্ধারতন করা হবে কে কে ময়লা পরিষ্কারের দায়িত্ব পাবেন। তবে কত তারিখ থেকে মূল্যয়ন কমিটি ময়লা পরিষ্কারের ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিবেন তা পরিষ্কার করে তিনি জানাননি।