মতামত

বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সংকট: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন

আমি মিয়ান আরেফি, ওয়াশিংটন ডিসি মেট্রো এলাকার বাসিন্দা। অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয় আপনাদের অবগত করার জন্য এই লেখা। বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে, যা ’২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের জরুরি হস্তক্ষেপ ও সহায়তা কামনা করেছিলাম।
আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশ, যা একসময় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকার রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করত। কিন্তু স্বৈরাচার সরকারের অরাজকতা, দুঃশাসন এবং অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত ছিল। বাংলাদেশের জনগণ ভয়, অনিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন পার করেছেন।

শাসন ব্যবস্থা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালে ৫ আগস্ট পর্যন্ত একটানা ক্ষমতায় ছিল। এই দীর্ঘ সময়ের শাসনকাল গণতন্ত্রের মৌলিক নিয়ম ও মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার একের পর এক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছে। ভোটবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর তারা বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধে নানাবিধ অগণতান্ত্রিক পন্থা গ্রহণ করেছে।
প্রতিদিন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও নিরীহ জনগণ গুম করেছে। এসব গুমের ঘটনায় সাধারণ জনগণ আতঙ্কিত ছিল। এ ছাড়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

Bangladesh Discussed At The U.S. National Security Council Press Conference

অর্থনৈতিক সংকট ও দুর্নীতি
বাংলাদেশ ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। দেশের ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে এবং বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে। সরকারি প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে প্রকল্প ব্যয় ৫ থেকে ৬ গুণ বেশি দেখানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি সাধারণ বালিশের দাম $১২০ দেখানো হয়েছে, যা প্রকৃত মূল্যের তুলনায় ৫০০ গুণ বেশি।
এছাড়া, সরকারি কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আর্থিক অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে।

গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি ও ভয়াবহ পরিস্থিতি
বাংলাদেশের সরকার জনগণের ভোট ছাড়াই ক্ষমতা ধরে রেখেছিল দীর্ঘদিন। ভোটের অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাংলাদেশে কেবল স্বপ্ন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন করার জন্য পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করেছে। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিরোধী দলের ‘মিলিয়ন মার্চ’ দমন করতে তিনি আবারও হেফাজত হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তির হুমকি দিয়েছিলেন।
২০১৩ সালের হেফাজত হত্যাকাণ্ডে নিরীহ কিশোর ও যুবকদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল। ঢাকা শহরে প্রবেশের সকল রাস্তা বন্ধ করে জনগণের ওপর সহিংসতা চালানোর প্রস্তুতিও নিয়েছিল সরকার।

Demonstration In Front Of The United Nations For The Return Of The Missing

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
আমি ২২ সালে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করেছি। প্রায় ৬ মাস বাংলাদেশে অবস্থান করার ফলে আমি যে ভয়াবহ বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করেছি, তা অকল্পনীয়। দেশের মানুষের মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। তাদের জীবনের নিরাপত্তা এবং মৌলিক অধিকার বর্তমানে শাসক দলের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।

Letter to Secretary of State Antony Blinken


মানবাধিকার রক্ষায় এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রয়োজন।

UN Human Rights Chief To Visit Bangladesh


মিয়ান আরেফি, ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির সদস্য, ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র।

Related Articles

Back to top button