topআন্তর্জাতিক

ইউক্রেনের কি পারমাণবিক অস্ত্র থাকা উচিত

টাইমস ২৪ ডটনেট: এমন বামপন্থীদের ক্ষেত্রেও প্রশ্ন তুলতে পারি যারা ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি রাশিয়াকেও সমর্থন করে। যেখানে রাশিয়া ইউক্রেনের শহরগুলোকে গাজার মতো বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। ইসরায়েলের ডানপন্থী সরকার যেমন ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে, তেমনি ক্রেমলিনও ‘বৃহত্তর রাশিয়া’ গড়ার পরিকল্পনা করছে।ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ীয় হওয়ার পর নিউইয়র্কের ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্তেজ সেই ভোটারদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়েছিলেন যারা, একই সঙ্গে তাঁকে ও ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, কী কারণে তাঁরা এমন আপাত স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জবাবে তিনি শুনেছেন, তাঁকে ও ট্রাম্পকে তাঁদের কাছে বেশি আন্তরিক মনে হয়েছে। যেখানে কমলা হ্যারিসকে চতুর মনে হয়েছে।ওকাসিও কর্তেজের এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ ছিল। একইভাবে, আমরা এমন বামপন্থীদের ক্ষেত্রেও প্রশ্ন তুলতে পারি যারা ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি রাশিয়াকেও সমর্থন করে। যেখানে রাশিয়া ইউক্রেনের শহরগুলোকে গাজার মতো বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। ইসরায়েলের ডানপন্থী সরকার যেমন ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে, তেমনি ক্রেমলিনও ‘বৃহত্তর রাশিয়া’ গড়ার পরিকল্পনা করছে। তাই, রাশিয়ার এই নির্মূল প্রচেষ্টা ইউক্রেনের পরিস্থিতি বিশ্লেষণে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইউক্রেনকে ১৯০ মাইল পাল্লার মার্কিন এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পরপর ক্রেমলিন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা অস্ত্রের যেকোনো ব্যবহার তাদের নতুন পরমাণু নীতির আওতায় পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার কারণ হতে পারে। তা সত্ত্বেও পরদিনই ইউক্রেন রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে একটি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ছয়টি এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।
রাশিয়া দাবি করেছে, এই হামলায় উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি—পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে, কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। তবে রাশিয়ার নতুন পরমাণু নীতি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার অধিকার এখন তাদের আছে। এরই মধ্যে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথে বিপজ্জনক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মনে রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে মূলত কুরস্ক অঞ্চলে হামলার অনুমতি দিয়েছে। এখান থেকেই রাশিয়া ইউক্রেনের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদায়ী পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, ‘আমরা ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়েছি শুধু তাদের (রাশিয়ার) তির (ক্ষেপণাস্ত্র) আটকানোর জন্য নয়, তীরন্দাজকেও (ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা) আঘাত করার সক্ষমতা দেওয়ার জন্য।’
এ ছাড়া মনে রাখতে হবে, রাশিয়া কয়েক দিন আগেই ইউক্রেনের ওপর নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে। শীত আসার ঠিক আগে বেসামরিক জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দেশজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।পরিস্থিতি যেমন জঘন্য, তেমনই অদ্ভুত! রাশিয়া তার শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে দখলদার যুদ্ধ শুরু করেছে। অথচ, এখন নিজ ভূখণ্ডকে যুদ্ধের আওতামুক্ত রাখতে চায় এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে, অর্থাৎ ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধেই সংঘাত ‘বিস্তৃত’ করার অভিযোগ তুলছে। যদি রাশিয়া তার নতুন পারমাণবিক নীতিকে সিরিয়াসলি নেয়, তবে আমাদেরও সমান গুরুত্বপূর্ণ পাল্টা নীতি থাকা উচিত: ‘কোনো স্বাধীন দেশ যদি একটি পারমাণবিক পরাশক্তির অপারমাণবিক আক্রমণের শিকার হয়, তবে ওই দেশের মিত্রদের অধিকার ও দায়িত্ব আছে দেশটিকে পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ করার, যাতে দেশটি আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।’প্রায়ই বলা হয়, পুতিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও স্তালিনবাদে ফিরতে চান। তবে এটি সঠিক নয়, বরং তাঁর শাসন টিকে আছে ১৯১৭ সালের আগের সাম্রাজ্যবাদী যুগের স্বপ্নে, যখন জার শাসিত রাশিয়ার প্রভাব বলয়ে শুধু পোল্যান্ড নয়, ফিনল্যান্ডও ছিল। পুতিনের এই নব্য জারবাদ কেবল কল্পনা নাকি বাস্তবায়নযোগ্য, তা সময়ই বলবে। উদীয়মান বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে, শক্তিশালী সাম্রাজ্যের উত্থান এবং তাদের নিজ নিজ প্রভাব বলয়ের বিস্তার অস্বাভাবিক নয়।পুতিন ২০২২ সালের জুনে সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে বলেছিলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে সার্বভৌমত্ব আংশিক বা খণ্ডিত হতে পারে না।’ তিনি বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় পরিচয় বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে একই সঙ্গে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক, আর্থিক, পেশাগত এবং প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা নির্ধারণ করে এমন সবকিছু শক্তিশালী করাও সমানভাবে জরুরি।’
(পুতিনের মনোভাবে) স্পষ্ট, একমাত্র নতুন সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া—ইউক্রেন, বেলারুশ বা ফিনল্যান্ড নয়—এই সার্বভৌমত্বের পরিপূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।অবস্থা আরও খারাপ হয়ে উঠেছে—যেদিন পুতিন নতুন পারমাণবিক নীতি ঘোষণা করলেন, সেদিনই বিবিসি জানিয়েছে, ‘ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বায়ুদূষণ অত্যন্ত গুরুতর মাত্রায় পৌঁছেছে। বাসিন্দারা শ্বাসকষ্টে ভুগছে, শহর ঘন ধোঁয়াশায় ঢেকে গেছে। বিমান চলাচল ব্যাহত, স্কুল বন্ধ এবং নির্মাণকাজ স্থগিত।’ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।রাশিয়া যখন সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে লিপ্ত এবং তাদের পারমাণবিক অস্ত্র প্রদর্শন করছে, তখন শত শত কোটি মানুষের শ্বাস নেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ছে। আমাদের গণমাধ্যম রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহারের খবরকে প্রথম পাতার ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে তুলে ধরছে, আর আমাদের ক্ষীণদৃষ্টির বামপন্থীরা ইউক্রেনের ‘বাড়তি প্রতিরক্ষা’ প্রচেষ্টাকে একটি বিপজ্জনক উসকানি হিসেবে দেখছে। অথচ আমাদের টিকে থাকার জন্য সত্যিকার হুমকিগুলো তাদের কাছে অতি সামান্য গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য বলে মনে হচ্ছে।

Related Articles

Back to top button