টাইমস ২৪ ডটনেট: ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনে প্রচারণার ধরনে বড় পরিবর্তন এসেছে, যেখানে টিকটক, ইনস্টাগ্রাম রিলস এবং ইউটিউব শর্টস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সহ-প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও এই শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে ভোটারদের মনোভাব গঠন করতে চেষ্টা করছেন।
এই ছোট ভিডিওগুলোর ব্যবহার রাজনৈতিক বার্তা, প্রার্থীদের ব্যক্তিত্ব এবং ভোটারের মতামত গঠনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে, যা শুধু তরুণ ভোটারদেরই নয়, সব বয়সের ভোটারদের কাছে আকর্ষণীয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক জনমত জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমেরিকার প্রায় ৬০ শতাংশ তরুণ ভোটার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের শর্ট ভিডিও দেখে তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করছে।ছোট ভিডিওগুলো খুব দ্রুত মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে, যা বড় বক্তৃতা বা লম্বা পোস্টের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ভোটাররা মাত্র ১৫-৩০ সেকেন্ডে প্রার্থীদের বার্তা বুঝতে সক্ষম হয় এবং একাধিক ভিডিও দেখে একটি প্রার্থীর সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা গড়ে তুলতে পারে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, ছোট ভিডিওগুলোর এই সহজলভ্যতা বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে বেশ প্রভাব ফেলছে।“আমি দীর্ঘ রাজনৈতিক বক্তৃতা দেখতে চাই না। তবে টিকটকে প্রার্থীদের ছোট ছোট ভিডিওগুলো থেকে আমি সহজেই বুঝতে পারি, তারা কীভাবে কথা বলছেন”, বলছেন ২২ বছর বয়সী কেটি।
টিকটক নির্বাচনী প্রচারণার জন্য একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে, যেখানে প্রার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত জীবন ও দিকগুলো তুলে ধরে ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে পারেন। হাস্যরসাত্মক ভিডিও, বিভিন্ন ট্রেন্ড ফলো করা এবং ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে প্রার্থীরা জনপ্রিয়তা অর্জন করছেন বলে পলিটিকোর এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে। এই ধরনের কন্টেন্ট ব্যবহার করে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আরও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করছেন।“আমরা এমন কিছু ট্রেন্ডিং ভিডিও তৈরি করছি যা শুধু আমাদের প্রচারণা চালায় না, বরং আমাদের কথা মনে রাখে,” বলেছেন একজন প্রার্থীর ক্যাম্পেইন ম্যানেজার।ছোট ভিডিওগুলি সব সময় ঘটনাটি পুরোপুরি তুলে ধরতে পারে না এবং এটি মাঝে মাঝে ভুল বোঝাবুঝি বা তথ্য বিকৃতির কারণ হতে পারে। কিছু ভিডিও নির্দিষ্ট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করে বলে ওয়াশিংটন পোস্টের এক খবরে বলা হয়। এই ধরনের বিভ্রান্তিকর ভিডিও অনেক সময় ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে, যা রাজনৈতিক পরিবেশে একটি হুমকি হিসেবে দেখা যাচ্ছে।টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে শর্ট ভিডিওগুলো “বাইট-সাইজড ইনফরমেশন” পৌঁছাতে কার্যকর। এখানে রাজনৈতিক বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের মধ্যে এটি জনপ্রিয়, যারা রাজনৈতিক বিষয়ে দ্রুত ধারণা নিতে চান এবং দীর্ঘ বক্তৃতার পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত কন্টেন্ট পছন্দ করেন বলে জানিয়েছে ফোর্বস। “সামাজিক মাধ্যমে ছোট ভিডিও দেখে আমি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারি। বড় পোস্ট বা বক্তৃতা পড়ার সময় নেই,” বলছেন কেভিন নামে এক কলেজছাত্র।
প্রার্থীরা এখন বিভিন্ন ধরনের ভিডিও তৈরি করে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করছেন। সরাসরি ভোট চাওয়া, সমর্থকদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, এবং প্রাসঙ্গিক ট্রেন্ড ফলো করা—এই কৌশলগুলো শর্ট ভিডিওর মাধ্যমে সহজেই সম্পন্ন করা যায়। ভিডিওর কন্টেন্ট স্টাইল পরিবর্তন করে প্রার্থীরা বিভিন্ন গ্রুপের ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারছেন বলে দ্য আটলান্টিকের এক প্রতিবেদনে জানা যায়।ইনফ্লুয়েন্সাররা রাজনৈতিক প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। প্রার্থীরা তাদের ভিডিওর মাধ্যমে রাজনৈতিক বার্তা ছড়াচ্ছেন, যাতে ভোটারদের উপর আরও বেশি প্রভাব ফেলা যায়। একটি গবেষণার বরাত দিয়ে ইনসাইডার জানিয়েছে, নির্বাচনী প্রভাব তৈরিতে ইনফ্লুয়েন্সারদের এই ভূমিকা তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচন যে ডিজিটাল যুগে একটি ভিন্ন মোড় নিয়েছে, তা এই ছোট ভিডিও কন্টেন্টের প্রভাবেই স্পষ্ট। টিকটক, ইনস্টাগ্রাম রিলস এবং ইউটিউব শর্টসের মাধ্যমে রাজনৈতিক বার্তা দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে, যা শুধুমাত্র প্রচারণায় গতিশীলতা আনছে না, বরং ভোটারদের সিদ্ধান্ত নিতেও প্রভাবিত করছে। এবারের নির্বাচনে টিকটক, রিলস, এবং শর্টস যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তা মার্কিন গণতন্ত্রের প্রচারণায় ডিজিটাল যুগের শক্তিশালী অংশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তবে এর পাশাপাশি বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থেকেও সাবধান থাকা জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।