topআন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে হামাসের সম্মতি, যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু

টাইমস ২৪ ডটনেট: ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি সহিংসতা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছে হামাস। যেটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাস হওয়া প্রস্তাবের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল।তিন ধাপের ওই প্রস্তাবের শুরুতে ইসরায়েল ও হামাস একটা সাময়িক যুদ্ধ বিরতি এবং বন্দি বিনিময়ের কথা বলা হয়। কিন্তু হামাসের পক্ষ থেকে প্রস্তাব গ্রহণ করলেও স্থায়ী যুদ্ধ বিরতির উপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল। এবার সেই প্রস্তাবের প্রাথমিক ধাপ কার্যকরে আলোচনার জন্য আনুষ্ঠানিক সম্মতি জানিয়েছে হামাস। হামাস বলছে, প্রাথমিক পর্যায়ে সাময়িক যুদ্ধ বিরতি কার্যকরের ১৬দিন পর জিম্মি বিনিময় করবে।শনিবার হামাসের দায়িত্বশীল সূত্রের বরাতে এ খবর দিয়েছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স।
এই প্রস্তাব অনুযায়ী হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলি সৈন্য ও বেসামরিক পুরুষদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।মূলত, হামাস দাবি করছে— প্রাথমিক পর্যায়ের এই চুক্তি কার্যকরের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে সব জিম্মি বিনিময় এবং তৃতীয় পর্যায়ে স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি কার্যকরের প্রতিশ্রতি নিশ্চিত করতে হবে। কেননা প্রাথমিক বন্দি বিনিময়ের পর ইসরায়েল পুনরায় হামলা করলে শান্তি আলোচনা পুরোপুরি ভেস্তে যাবে। এই আশঙ্কায় তারা এর আগে স্থায়ী যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব নিশ্চিত করতে বলেছিল। বিপরীতে ইসরায়েল চাচ্ছে প্রাথমিক বন্দি বিনিময়ের পর আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রস্তাবে এমনটাই বলা হয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়, প্রথম ধাপে জিম্মি-বন্দি বিনিময় ও গাজায় ত্রাণ সহযোগিতা উন্মুক্ত এবং সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করবে ইসরায়েল। দ্বিতীয় ধাপে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। আর তৃতীয় ধাপে গাজা পুনর্গঠনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি কার্যাকর হবে।

ইসরায়েলের বর্বরতায় আস্থাহীনতার কারণে হামাস অনিশ্চিত এই প্রক্রিয়ায় এগোতে চাইছিল না। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মধ্যস্ততাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় অবশেষে হামাস রাজি হয়েছে প্রাথমিক আলোচনার শুরু করতে। যেটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

ইসরায়েলের আলোচনাকারী দলের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেছে, ‘এখন চুক্তি অর্জনের সত্যিকারের সুযোগ রয়েছে। এটি গাজায় নয় মাসব্যাপী যুদ্ধের অতীতের দৃষ্টান্তের বিপরীতে, যখন ইসরায়েল বলেছিল যে— হামাস দ্বারা সংযুক্ত শর্তগুলি অগ্রহণযোগ্য।’

শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ প্রধান কাতারে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে একটি প্রাথমিক বৈঠক করে দেশে ফিরেছেন এবং আগামী সপ্তাহে পুনরায় আলোচনা হবে।

অর্থাৎ হামাসের পূর্বের অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিতকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত সময় বলে অভিহিত করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেন চাচ্ছেন একটা যুদ্ধ বিরতির প্রাথমিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে। এজন্য মার্কিন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের সাহায্যে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ওয়াশিংটন, ইসরায়েল এবং কাতারের মধ্যকার সক্রিয় কূটনীতির মাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরেই গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে। দোহা থেকে মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছে নির্বাসিত হামাস নেতৃত্ব।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। পাশাপাশি ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।

তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। আট মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৮৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।

গত বছরের নভেম্বরে কাতারের মধ্যস্থতায় প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৭১ জন নারী এবং ১৬৯টি শিশু রয়েছে। বিনিময়ে ২৪ বিদেশিসহ মোট ১০৫ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। হামাসের কাছে এখনো প্রায় ১৩০ জন জিম্মি রয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের।

Related Articles

Back to top button