টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা বাংলাদেশ ও ভারত এবং জনগণের কল্যাণের জন্য আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি। আমরা পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততার পথ এবং কার্যপন্থা-এগিয়ে নেওয়ার রূপকল্প প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশ বিক্রির কথা বলে, তারাই আসলে ভারতে বিক্রি করা। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ওপরে ভারত বিরোধিতা করলেও ভারতে গিয়ে পা ধরে বসে ছিল। শেখ হাসিনা দেশ বিক্রি করে না, কারণ আমরাই এই দেশ স্বাধীন করেছি। যারা বিক্রির কথা বলে, তারাই ৭১ এ পাকিস্তানের দালালি করেছে। তিনি বলেন, একটি দেশের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট দিলে ক্ষতি। ইউরোপে কোনো বর্ডারই নাই। তারা কি একে অন্যের কাছে দেশ বিক্রি করে দিয়েছে? দক্ষিণ এশিয়ায় কেন বাধা দিয়ে রাখবো। মানুষ কি দরজা-জানালা বন্ধ রাখবে? এ কানেক্টিভিটির ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে। দেশের মানুষই লাভবান হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ ও ২২ জুন আমি রাষ্ট্রীয় দ্বিপাক্ষিক সফর করেছি। একই মাসে সরকার প্রধান হিসেবে দুইবার দিল্লি সফর আমার জন্য এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এসবই আমাদের দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে একে অপরের সঙ্গে কাজ করার প্রমাণ বহন করে। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের নতুন সরকার গঠনের পর এটিই ছিল কোনো দেশে আমার প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। একইসঙ্গে ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠনের পর ভারতেও ছিল এটি প্রথমবারের মত কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানের দ্বিপাক্ষিক সফর। এটি অবশ্যই আমার এবং বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সহযোগিতামূলক বিশেষ সম্পর্কেরই বহিঃপ্রকাশ। ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও নিকটতম প্রতিবেশী, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং আঞ্চলিক অংশীদার। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে সম্পর্কের সূচনা হয় তাকে বাংলাদেশ সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়সহ উচ্চপর্যায়ের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ভারতের টানা তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার নবগঠিত মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান গত ৯ জুন অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমি ৮ থেকে ১০ জুন নয়াদিল্লি সফর করি। সেখানে প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি আমন্ত্রিত ছিলেন। সেই সফরে আমি ভারতের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত দক্ষিণ এশিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলোর একাধিক সরকার প্রধানের সঙ্গে মতবিনিময় করি। পাশাপাশি আলাদাভাবে আমার সঙ্গে ভুটান এবং শ্রীলঙ্কার সরকার প্রধানদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। এসব আলোচনা ও বৈঠক আমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ককে সুদৃঢ করতে সহায়ক হবে। সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট-লার্জ, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও একটি সাংবাদিক প্রতিনিধিদল আমার সফরসঙ্গী ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
ইউরোপে বর্ডার নেই, তারা কি বিক্রি হয়ে গেছে: বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের রেলপথ ব্যবহারের সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা নিয়ে কেন সমালোচনা হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না। ইউরোপে তো এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের কোনো বর্ডার নেই, তারা কি বিক্রি হয়ে গেছে? এতে বরং তাদের যোগাযোগ সুবিধা বেড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়েছে। তিনি বলেন, যারা বলে দেশে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, তারা বলুক বিক্রিটা কিসের মাপে হচ্ছে? মাপটা কিসের মাধ্যমে হচ্ছে? বাংলাদেশে স্বাধীন দেশ, আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি। সারাবিশ্বে একটিমাত্র মিত্র শক্তি ভারত, যারা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে আমাদের স্বাধীন করে দিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই কোন দেশ যুদ্ধে সহযোগিতা করতে এলে তারা সেখানেই থেকে যায়। বিজয়ী হওয়ার পরও তারা দেশ ছাড়ে না। এরকম অসংখ্য নজির আমরা দেখেছি। অথচ ভারত আমাদের মিত্র হিসেবে যুদ্ধ করেছে এবং জাতির পিতার আহ্বানে আবার তারা ফিরেও গেছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তাহলে বাংলাদেশ কীভাবে বিক্রি হয়? আমি বলবো যারাই বলছে দেশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, তারাই বরং দেশকে বিক্রি করতে চেয়েছে। আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রেখেছি। এখন যারা দেশ বিক্রির কথা বলে, তারাই মুক্তিযদ্ধের সময় পাকিস্তানের দালালি করেছে। তিনি বলেন, রেলপথ ব্যবহারের ফলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হচ্ছে। ওইসব এলাকার মানুষের জন্য যোগাযোগ সহজ হচ্ছে। ইউরোপে তো বর্ডারই নেই, তারা কি তাহলে বিক্রি করে দিচ্ছে? প্রত্যেকটা দেশই তো স্বাধীন দেশ, তারা তো বিক্রি হয়নি। তাহলে সাউথ এশিয়ায় কেন এটা বাঁধা হয়ে থাকবে?
নরেন্দ্র মোদিকে মমতার চিঠি নিয়ে যা বললেন শেখ হাসিনা: ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ফারাক্কা চুক্তির নবায়ন ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অভিযোগ, আন্তঃরাষ্ট্রীয় এ দুই ইস্যুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে উপেক্ষা করে ঢাকার সঙ্গে সমঝোতা করেছে নয়াদিল্লি। বিষয়টি নিয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও দিয়েছেন মমতা। তবে সেই চিঠিটি ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি নিয়ে তার কিছু বলার নেই বলেও জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মমতা ব্যানার্জি যে চিঠি তিনি তার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছেন, এটা তাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে আমার কিছু বলার নেই। এটা সম্পূর্ণ ভারতের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমাদের নাক গলানোর কোনো দরকার নেই। কিছু বলার দরকার নেই। আমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালো। মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো, আবার প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও। অন্যান্য সব দলের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক ভালো। ভারতের দল মত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে আমার একটা সুসম্পর্ক আছে। তিনি বলেন, তিস্তা প্রজেক্ট কিন্তু আজকের না। আমার মনে হয় যুক্তফ্রন্টের সেই ২১ দফার মধ্যেও এটা ছিল। আমাদের আওয়ামী লীগের বিভিন্ন আলোচনার মধ্যে কিন্তু এটা ছিল যে তিস্তা প্রজেক্ট করতে হবে। সেই তিস্তা প্রজেক্ট করার জন্য ভারত সহযোগিতা করবে। আমাদের যৌথ কমিটি হবে। শুধু পানি ভাগাভাগি বিষয় না, গোটা তিস্তা নদীকে পুনর্জীবিত করে সেই উত্তরাঞ্চলে সেচের ব্যবস্থা করা, সেটাই আমরা করব। তিনি বলেন, গঙ্গা পানি চুক্তির জন্য আলোচনা হবে, টেকনিক্যাল গ্রুপ আসবে দেখবে, তারপর এটা হবে। নীল নদীর ড্রেজিং করলেই পানি সমস্যার সমাধান হয়। আমরা আমাদের দেশে শুরু করেছি। নদীর ড্রেজিং করার কারণে বন্যা হলেও এখন আগের মতো ক্ষতি হয় না।
মানুষকে ভয়, সাপ-জীবজন্তুকে নয় : পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জীবজন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সাপ বরং মানুষকে ভয় পায়। ভয় বা আতঙ্ক থেকেই মানুষকে কামড় দিতে আসে। তাই সাপকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ভয় করলে মানুষকেই করতে হয়, জীবজন্তু বা সাপকে নয়। তিনি বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্যই জীবজন্তু। যেহেতু সাপের উপদ্রব বেড়েছে, এখন চলাফেরায় সতর্ক হতে হবে। আমি একটা বিষয়ে বিশ্বাস করি, জীবজন্তু-সাপ যাই বলেন, এরা কোনোদিন খামাখা কোনও মানুষকে আক্রমণ করে না, যদি না তারা ভীত হয়ে যায় বা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে থাকে। তাছাড়া তারা কোনোদিন কারও ক্ষতি করে না। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন মাছ ধরতে বসি, তখন দেখি পাশ দিয়েই সাপ যাচ্ছে। একদিন দেখি আমার বসার স্থানের পাশেই একটা সাপ মুখ বের করে আছে। কই, কোনোদিন আমাকে সাপে কাটেনি তো। কোনোদিন ভয়ও পাইনি।
সংক্ষিপ্ত সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে ঢাকা ও দিল্লি নতুনভাবে পথচলা শুরু করেছে। সে ধারাবাহিকতায় ‘রূপকল্প ২০৪১’ এর ‘স্মার্ট-বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’ নিশ্চিত করার জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করার ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেছি। এ সফর ছিল সংক্ষিপ্ত কিন্তু অত্যন্ত ফলপ্রসূ। আমি মনে করি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে এ সফর সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিগত ১৫ বছরে একটি অনন্য উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। যার সুফল দুই দেশের জনগণ ভোগ করছেন। বিশেষ করে ২০২৩ সালে দুই দেশের সম্পর্কে নতুনমাত্রা যুক্ত হয়েছে। গত বছর আমি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে যোগাযোগ ও বিদ্যুৎখাতে চারটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছি। বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে আমি ভারতের আমন্ত্রণে জি-২০ সম্মেলনে যোগদান করেছি। বাংলাদেশ এবং ভারত দুই দেশেই নতুন সরকার গঠনের পর এ সফর অনুষ্ঠিত হলো। এ সফরকালে ভারতের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল নব-নির্বাচিত দুটি সরকার কীভাবে সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে একটি রূপকল্প প্রণয়ন। তিনি বলেন, সমঝোতা স্মারক বিনিময় শেষে আমি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখি। পরে আমার ও আমার সফরসঙ্গীদের সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিই। দিল্লি ছাড়ার আগে আমি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করি। ভারতের রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতকালে আমরা দুই দেশের বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করি। তারা বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
পুরস্কার নিয়ে আমার কোনো আকাঙ্খা নেই: তিনি বলেন,ইউনুসের বিরুদ্ধে আমরা বা আমাদের সরকার লাগেনি। গ্রামীণ ব্যাংকটা তৈরি করেছিলো জেনারেল এরশাদ সরকারের আমলে। তখন একজন এমডি খোজা হচ্ছিল এবং ড. ইউনুসকে এনে ব্যাংকের এমডি করা হয়। এই ব্যাংক কিন্তু তার নিজের করা না। সে সেখানে এমডি হিসেবে চাকরি করতেন এবং বেতন তুলতেন। গ্রামীন ব্যাংক হচ্ছে সরকারের সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। ওই টাকা বেতন কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকেই দেয়া হতো। তিনি এমনভাবে প্রচার করেছেন যেন, এটা তার নিজেরই করা। ওই ব্যাংকের আইন ছিলো যে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত একজন এমডি হিসেবে থাকতে পারেন। এর উর্ধ্বে আরো দশ বছর তিনি আইন ভঙ্গ করে ছিলেন। যখন বাংলাদেশ ব্যাংখ তার নজরে এনে তৎকালীণ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মহিত এবং উপদেষ্টা গওহর রিজভী সাহেব তাকে অনুরোধ করেছিলেন, বয়স হয়ে গেছে, তাছাড়া দশ বছল আইন ভঙ্গ করে আছেন, এখানে আপনি উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন। কিন্তু তিনি এমডি পদ ছাড়বেন না। ড. ইউনস কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যায়কের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন। দুটি মামলাতেই তিনি হেরে যান। মামলা কিন্তু কখনো সরকার করেনি। এখনও তার বিরুদ্ধে যে মামলা এটা সরকার করেনি। গ্রামীন ব্যাংক বাঁচাতে তার সরকারের সহযোগিতার কথা তুলে দরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীন ফোনের ব্যবসাটা আমিই তাকে দিয়েছিলাম। এটাও মনে রাখা উচিত। কারন গ্রামীন ব্যাংক তার আমলে প্রায় ক্লপ্স (বন্ধ) করে যাচ্ছিল। তখন আমার সরকার প্রথমে একশ কোটি টাকা পরে দুই শত কোটি টাকা, এরপর আরো একশ কোটি টাকা সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকটি চালু রাখতে সহায়তা করি। তখন উনি প্রস্তাব দেন যে, ফোনের ব্যবসাটা পেলে এর যে মুনাফাটা হবে, সেটি গ্রামীণ ব্যাংকে জমা হবে এবং সেটা দিয়ে ব্যাংক চলবে। তাকে জিজ্ঞসা করা উচিত আজ পর্যন্ত ওই গ্রামীণ ফোনের একটি টাকা ব্যাংককে দেয়া হয়েছে কি না? গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে অনুদান এসেছে, তার কয়টি টাকা ব্যাংকে গিয়েছে? প্রতিটি সময় ওই টাকা দিয়ে নতুন ব্যবসা খুলে ব্যবসা করে গেছে। কোনো ট্যাক্স দেয়নি। যখনই মামলা হয়েছে তিনি কিছু টাকা শোধ দিয়েছে। তার মানে কি, প্রমান হয়ে গেলো যে সে ট্যাক্স ফাকি দেয়। ড. ইউনুস শ্রমিক কল্যান ফান্ডে ২০০৬ সাল থেকে একটি টাকাও দেয়নি, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেজন্য শ্রমিকরা তার নামে শ্রমিকদের কোর্টে মামলা করেছে। সেই মামলায় সে শাস্তি পেয়েছে। এখানে আমার কি দোষ? তাকে তো সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা তো আমি করেছিলাম। তার মাইক্রোক্রেডিট আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহনযোগ্য ছিলো না। আমি কো চেয়ার হিসেবে অংশগ্রহন করি, জাতিসংঘে প্রস্তাব আনি। আমি সবাইকে বোঝাইৃআমি ভাবতাম এটা বোধহয় ভালো মানুষকে দারিদ্রমুক্ত করে। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝলাম এটা দারিদ্রমুক্ত না দারিদ্র লালন-পালন করে। আর ওই গরীব মানুষগুলো দিনভর কষ্ট করে উচ্চ হারে সুদ দিতে হয়। যশোরে যে পরিবারগুলোকে হিলারি ক্লিনটনকে এনে লোন দিয়েছিলো, সেই পরিবারগুলো কোথায় এখন। জমিজমা সব বেঁচে দিয়ে পালিয়েছে এই সুদের চাপে, কেউ আত্মহত্যা করেছে। আমি বলেছিলাম এতো সুদ না নিয়ে তার যেন সহনশীল করে দেয়, যাতে মানুষ দারিদ্রতা থেকে উঠে আসতে পারে। এতো যদি করে থাকে বাংলাদেশে দারিদ্র বিমোচন হলো না কেন। দারিদ্র বিমোচন করলাম তো আমি। আজকে ৪১.৬ ভাগ থেকে নামিয়ে আমি ১৮.৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি সাত ১৫ বছরে। সেই ক্রেডিটও নেয়। সেটা কোনো কোনো আন্তর্জাতিক পত্রিকায় লিখে ফেলে এটা গ্রামীন ব্যাংক, ওই ব্রাক, অমক করে ফেলেছে। আমার প্রশ্ন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে দারিদ্রের হার কতো ছিলো। আর শেখ হাসিনা আসার পর কতো কমেছে সেটা একটু হিসেব করে বলুক না। মাথাপিছু আগে কতো ছিলো এখন কতো কমেছে? ভুমিহীন-গৃহহীন মানুষের সংখ্যা আগে কতো ছিলো এখণ কতো কমেছে, সেটা লিখুক।
ড. ইউনূস মর্যাদাপূর্ণ নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় শেখ হাসিনা তার বিরোধিতা করেন বলে যারা অভিযোগ তোলেন তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি কাউকে ঈর্ষা করেন না। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কোনো আকাঙ্ক্ষাও তার নেই। লবিস্ট নিয়োগের মতো অর্থ তার নেই বলেও জানান তিনি। ড. ইউনূসের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তার কোম্পানির শ্রমিকরা। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। সরকার শ্রমিক অধিকার রক্ষার ব্যাপারে আন্তরিক। এখানে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। এ সময় তিনি নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় ড. ইউনূসের বিরোধিতার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে আলাদা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। এই পুরস্কার নিয়ে আমার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। এর জন্য লবিস্ট নিয়োগ করার টাকাও নেই আমার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির পর অনেক নোবেল জয়ী আমার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। ভেবে দেখেন, আমি আসার আগে কয়জন পার্বত্য চট্টগ্রাম যেতে পেরেছেন? ড. ইউনূসের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ড. ইউনূস রাজনৈতিক দল গঠন করতে চেয়েছিল। কিন্তু সে দল গঠন করতে পারে নাই। সে যদি গ্রামের মানুষকে এত কিছুই দিয়ে থাকে, তাহলে তো সেই মানুষগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা। কই, কেউ তো ঝাঁপিয়ে পড়েনি। তিনি বলেন, ড. ইউনূসের সাথে হিংসা করার কী আছে। সে পারলে আমার সাথে বিতর্কে আসুক। আমেরিকায় যেভাবে ডিবেট হয়, সেভাবে ডিবেট করুক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। এই জায়গায় কেউ আসতে পারবে না। আমি কারও সাথে জেলাসি করি না। আমি এর, ওর কাছে ধরনা দিয়ে বেড়াই না। দেশ বেচি না, দেশের স্বার্থও বেচি না। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার লাগতে যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক জেনারেল এরশাদের আমলে হয়েছে। ড. ইউনূস সেখানকার এমডি ছিলেন। সেখানের শ্রমিকদের বেতন তুলতেন। বয়স ৬০ বছরের বেশি হওয়ায় তাকে ওই পদ থেকে সরে যেতে বলা হয়েছিল। তিনি সরে যাননি। সে সময় তিনি অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করে হেরে গেছেন।তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে মামলাও সরকার করেনি। গ্রামীণফোনের ব্যবসা আমি তাকে দিয়েছিলাম। একটি টাকাও তিনি ব্যাংককে দেননি। তিনি সব টাকা নিজের করে নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের মামলায় ড. ইউনূস সাজা পোয়েছেন। ইউনূসকে উঠিয়েছিলাম আমি। এতই যদি করেছেন তবে দারিদ্র্যমুক্ত হলো না কেন। দেশে দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি আমি। ড. ইউনূস শেখ হাসিনার হাতেই সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
ড. ইউনুস রাজনৈতিক দল করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ড. ইউনুস ২০০৭ সালে রাজনৈতিক দল করতে গিয়ে ব্যর্থ হলো কেন। যে যদি গ্রামের মানুষদের জন্য করে তাহলে সেই মানুষ তো তার জন্য ঝাঁপিয়ে আসার কথা। আসলো না কেন। কারন সুদের চাপে তারা মৃতপ্রায় ছিলো। তাহলে সেই দায়িত্বও কি আমার। আমি তো তখন জেলে। সে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও প্রেসিডেন্টকে এ ডাবল প্লাস দিয়ে আসছে। এ সময় ড. ইউনুসের বিদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা করা টাকার উৎস কোথায়, প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে বিদেশে এতো বিনিয়োগ করেছে। কার টাকা? কিভাবে এতো টাকা আয় হলো? কিভাবে বিনিয়োগ করলো? এই প্রশ্ন কি কেউ কখনো করেছে। কাদের টাকা? সে জবাবটা দিক। একটা সরকারি চাকরি, সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় চাকরি করে বিদেশে ব্যবসা করে ..আমাদের আইন কি করে? তাকে আমরা সকলে মিলে তুলেছি এটা ঠিক। এখন সব দোষ আমার। কারন সবথেকে বেশি যাকে আমি দিলাম সেটুকু কৃতজ্ঞতা তো থাকা উচিত। সে আসুক মাঠে। আমেরিকায় ডিবেট হয় না? চলুক কথা বলবো। সব সুযোগ তো পেয়েছে আমার হাত ধরে। আমি তো তাকে প্রমোট করেছি। তার কথা হলো উপকারীকে বাঘে খাক। যাতে উপকারটা স্বীকার করতে না হয়। এখন ওনার পয়সা আছে উনি লেখাচ্ছে। নোবেলপ্রাপ্তদের যে বিবৃতিটা এটা কি। এটা তো বিজ্ঞাপন আকারে চাপিয়েছে। উনি যদি এতোই জনপ্রিয় হবেন তাহলে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। তার জন্য কেউ তো আমাকে কিছু বললো না।