জাতীয়বাংলাদেশ

বেইলি রোডে বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুনে নিহত ৪৬ জন

টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রিন কোজি কটেজ বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার হয়েছে। অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় আরও ৪২ জনকে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এখনো ১২ জন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জালড়ছেন।নিহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৫ জন, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০ জন এবং রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইনস হাসপাতালে ১ জনের মরদেহ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একই পরিবারের পাঁচজন।
জানা গেছে, ঢাকার মন্ত্রীপাড়া হিসেবে খ্যাত বেইলি রোডের একাধিক রেস্তোরাঁয় ভরা সাত তলা ভবনে আগুনে মৃত ৪৬ জনের মধ্যে দুই সাংবাদিকেও রয়েছেন।তাঁরা হলেন-তুষার হালাদার (২৬) ও অভিশ্রুতি শাস্ত্রী।তারা দু’জনই দ্য রিপোর্টের সাংবাদিক।তুষার ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভে যোগ দেন। সম্প্রতি তিনি স্টারটেক নামে অনলাইন মাল্টিমিডিয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন।
শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তুষারের বাবা দীনেশ চন্দ্র হাওলাদার বলেন, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছেলের মৃত্যুর খবর পাই। আমার স্ত্রী অসুস্থ। তাকে জানানো হয়নি। এদিকে অভিশ্রুতি ইডেন কলেজের দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ঢাকার থাকতেন মৌচাকের সিদ্বেশ্বরী কালী মন্দির এলাকায়। তার বাড়ি কুষ্টিয়ায়। গত জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য রিপোর্ট ডট লাইভে কর্মরত ছিলেন তিনি। চলতি মাসেই নতুন একটি কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তার। মূলত তুষারের নতুন চাকরি পাওয়া উপলক্ষে এ আয়োজন ছিল।এখন পর্যন্ত ৪৬ জন মারা গেছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সৈয়দ মোবারক ইটালি প্রবাসী। ছুটিতে তিনি দেশে এসেছিলেন। এ মাসেই তাঁর ইটালি ফিরে যাওয়ার কথা। ঢাকার বেইলি রোডে সাততলা রেস্তোরাঁয় আগুনে পুড়ে পরিবারসহ মারা গিয়েছেন।তাঁর সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছেন স্ত্রী স্বপ্না আক্তার, মেয়ে সৈয়দা তুজ জোহরা (১৯), আমিনা আক্তার (১৩) ও ছেলে আবদুল্লাহ (৮)।সবাইকে তাঁদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুরে সমাহিত করা হয়। ঢাকার মধুবাগে তাঁদের নিজস্ব ফ্ল্যাট রয়েছে।
স্বপ্না আক্তারের বোন আয়েশা আক্তার বলেন, তাঁদের পরিবারের পাঁচজনকে হারিয়েছেন। মোবারক কিছুদিন পরেই ইটালি চলে যেতেন। তাই সবাই মিলে খেতে বের হয়েছিলেন। এক মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা চলছিল। সবারই ভিসা প্রসেসিং হচ্ছিল ইটালি যাওয়ার জন্য।
মেয়ের ইচ্ছেতেই তাঁর জন্মদিন উদযাপন করতে রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বেইলি রোডের পাঁচতলার জেস্টি রেস্তোরাঁয়।শুক্রবার সকালে জানালেন ভয়াবহ আগুনের হাত থেকে বেঁচে আসার কথা। খাবার অর্ডার দেওয়ার পর শোনেন আগুন লাগার কথা।একপর্যায়ে বেড়ে যায় চিৎকার-চেচামেচি। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় অন্ধকার নেমে আসে। তিনতলা থেকে নীচে নামতে গিয়ে দেখেন, লোকজন উপরে উঠছন। তিনিও পরিবার নিয়ে সাত তলার ছাদে ওঠেন।ছাদে ওঠার পর ধোয়া ও আগুন ছাদে ধেয়ে যায়। ‘তখন তাঁর বড় মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বলছিল, বাবা, আমার জন্মদিন কি মৃত্যুদিন হয়ে যাচ্ছে? রাত ১২ টার দিকে উদ্ধারের জন্য ক্রেন গেলে তাঁরা তাতে করে নেমে জীবনে রক্ষা পান। আহমেদ কামরুজ্জামান বলেন, দমকলের সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাঁদের উদ্ধার করেছে। তারা সময়মতো না এলে আজ হয়তো এসব কথা বলতেই পারতাম না। আমার মেয়ে দুটো এখনো কোনো কথা বলতে পারছে না, ভয়ে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ঢাকার বেইলি রোডে গ্রিন কজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নারী-শিশুসহ এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ৪১ জনের মরদেহ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত হয়নি আরও ৫ জনের মরদেহ। পরিচয় নিশ্চিত হয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে ৩৮টি মরদেহ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০টি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৬টি মরদেহ এসেছে। এ দুই হাসপাতালে আরও ১২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা কেউই শঙ্কামুক্ত নন। আরও ৫টি মরদেহ আছে যেগুলো শনাক্ত করা যায়নি।
তিনি বলেন, পুড়ে যাওয়া সবাই কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ায় মারা গেছে। একটা বদ্ধ ঘরে থেকে প্রবেশ করতে না পারায় ধোঁয়া শ্বাসনালীতে চলে যায়। মারা যাওয়া প্রত্যকেরই এমনটা হয়েছে। যাদের বেশি হয়েছে, দুঃখজনকভাবে তারা বাঁচতে পারেননি। এখনো যারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন, কেউই শঙ্কামুক্ত নন। বিষয়টি নিয়ে আমরা আবারও বসবো।
এলিটবাহিনী র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশিদ আলম জানান, নিচের একটি ছোট দোকানে প্রথমে আগুন লেগেছিল। সেখানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে তারা প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন। তবে পরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ মানুষই ধোঁয়ার কারণে শ্বাসরোধে মারা গেছেন।একাধিক রেস্তোরা থাকায় প্রতিটি কক্ষ ও সিড়ি জুড়ে ছিল গ্যাস সিলিন্ডার।যা ছিল একটা নড়ককুণ্ড।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, এ ঘটনায় মামলা হবে। বিল্ডিং কর্তৃপক্ষ রাজউকের পরিকল্পনা অনুসরণ করেছে কি না এবং প্রয়োজনীয় অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ছিল কি না এটি তদন্ত করে দেখা হবে।
অপরদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। আহতদের খোঁজ রাখছেন প্রধানমন্ত্রী। চিকিৎসায় যা যা দরকার সব ব্যবস্থা নিতে বলেছেন ডাক্তারদের।

 

Related Articles

Back to top button