topআন্তর্জাতিকপ্রবাস

কলকারখানার বর্জ্যের আধুনিক ও নিরাপদ অপসারণ ব্যবস্থা অপ্রতুল

প্রতি বছর বর্জ্যের পরিমাণ প্রায় ২২.৪ মিলিয়ন টন, ২০২৫ সালে ৪৭০৬৪ টন বর্জ্য উৎপন্ন হবে

দীপু সারোয়ার, টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: অপরিকল্পিত নগরায়ন প্রক্রিয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা। এসব অবকাঠামোর জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্জ্য নিষ্কাশনের আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। ফলে অসংখ্য মানুষের বাসগৃহ থেকে প্রচুর পরিমাণ গৃহস্থালি বর্জ্য প্রতিদিন এখানে-সেখানে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। কঠিন বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থাও অত্যন্ত নাজুক ও সেকেলে। বর্জ্য পদার্থকে রাস্তার পাশে এখানে-সেখানে স্তূপ করে রাখা হয়, এবং তা পচে-গলে বাতাসকে মারাÍক দূষিত করে। ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে রাজধানী ও এর আশে পাশের এলাকা তার মধ্যে নারায়নগঞ্জ অন্যতম। বর্তমানে সময়ে কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার এবং আধুনিক জীবনযাপনে ব্যবহƒত অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল প্যাকেটজাত খাবারের কৌটার ব্যবহারে পুরো বর্জ্য ব্যাবস্থাপনার পরিধি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে রোগ বিস্তারকারী ব্যাকটেরিয়া ও বিষাক্ত ধাতব পদার্থগুলো জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের মারাÍক ক্ষতি করে চলেছে। আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত এরকম উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন বর্জ্য হচ্ছে- পৌর এলাকার বর্জ্য, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকার বর্জ্য, পচনশীল ও অপচনশীল আর্বজনা, রান্নাঘরের বর্জ্য, পারমাণবিক আর্বজনা ইত্যাদি। এসব বর্জ্যের কারণে পরিবেশ দূষিত হওয়ার মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। শিল্প বর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য, প্রাণীজ বর্জ্যসহ বিভিন্ন রাসায়নিক বর্জ্যে দুষিত হচ্ছে বায়ু, পানি ইত্যাদি। এর প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্যের ওপর। পড়ছে জলবায়ুর ওপর প্রতিকূল প্রভাব। জলবায়ু পরিবর্তনে বিভিন্ন প্রাণীর জটিল ও কঠিন রোগ দেখা দিচ্ছে। পরিবেশের ওপর জলবায়ুর প্রভাবের জন্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত, খাদ্যাভাবজনিত রোগসহ নানা জটিল ও অপরিচিত রোগ হয়ে থাকে। বেড়ে গেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আমাদের চারপাশের পরিবেশের এ বিপর্যয়ের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে বায়ু দুষণ। এটি দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে ২২ শতাংশ মানুষ বাতাসে ভাসমান বস্তুকণা ও ৩০ শতাংশ মানুষ জ্বালানি সংশ্লিষ্ট দূষণের শিকার। সরকারী কোনো নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই কারখানা মালিকরা এইসব কল-কারখানাগুলো পরিচালনা করে আসছে। স্টীলসহ বিভিন্ন মিলের বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষের। কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা সম্ভব হয় না। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্টীল মিল হলেও প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের বিষয়টি অজ্ঞাত কারণে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এ বি সিদ্দিক জানান, এইসব স্টীল মিলের কালো ধোঁয়া পরিবেশকে মারাত্বকভাবে দূষণ করছে। এলাকাবাসীর উচিত তাদের সমস্যাগুলো প্রশাসনের নিকট তুলে ধরা। সেজন্য তাদেরকে একত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে হবে। তাতেও কাজ না হলে তাদের উচিত হবে রহিম স্টীল মিলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করা। আমাদের যা সাহায্য লাগবে আমরা তা করবো। এক সময় প্লাস্টিক বলতে শুধু পলিথিন ব্যাগ, বোতল ইত্যাদিকে ধরা হত। কিন্তু এখন প্ল­াস্টিকের ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্লাস্টিকের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর হল মাইক্রোপ্লাস্টিক। ফেইসওয়াস, ডিটারজেন্ট, সাবান, বডিওয়াস, টুথপেস্ট ইত্যাদিতে প্রচুর মাইক্রোবিড পাওয়া যায়। এর ফলে মানুষ থাইরয়েড, হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণ, কিডনি রোগ, চর্মরোগ ইত্যাদি সমস্যাতে ভোগে। প্লাষ্টিক দূষণের ফলে নদী তার নাব্যতা হারায়, ভূ-গর্ভস্থ পানি দূষিত হয়, মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়। ৭০-৮০ ভাগ শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করে। কর্তৃপক্ষের পরিশোধন ছাড়া পয়ঃপ্রণালীর বর্জ্য নদীতে ফেলার ফলে নদী দূষিত হচ্ছে। নদী পথে চলাচলকারী জাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার, ডকইয়ার্ডের বর্জ্য, ট্রলারের লিকেজের ফলে কয়লা ও তেল, কঠিন বর্জ্য, কৃষিকার্যক্রমের ফলে আগত রাসায়নিক এবং নদীর পাশে গড়ে ওঠা অপরিকল্পিত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও গৃহস্থালী বর্জ্য, গবাদি পশুর বাসস্থান নির্মাণ ইত্যাদি নদী দূষণের জন্য দায়ী। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে, কার্বন নিঃসরণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ১২ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে দাবানল, খরা, বন্যা ও ভয়াবহ তাপপ্রবাহের মতো মহাবিপর্যয় নেমে আসতে পারে। জাতিসংঘের আবহাওয়া পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেল এক বিশেষ প্রতিবেদনে এমন সতর্কবাণী দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়ে, এখনই পদক্ষেপ না নিলে ২০৩০ থেকে ২০৫২ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করবে। উষ্ণতা বৃদ্ধির বিপর্যয়পূর্ণ এ মাত্রা এড়াতে সমাজের সর্বক্ষেত্রে দ্রুত, সুদূর প্রসারী ও নযীরবিহীন পরিবর্তনের অপরিহার্যতা তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা। দূষণের জন্য মূলতঃ শিল্পোন্নত ধনী দেশগুলো প্রধান দায়ী। তারা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পরিবেশ দূষণের বর্জ্য উৎপন্ন করে থাকে।

এদিকে সনাতন পদ্ধতির ইটাভাটা সৃষ্ট ধোঁয়া বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হওয়ায় সরকার এ-জাতীয় ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে বহু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। এর অংশ হিসেবে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯)’ কার্যকর করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অধিকাংশ সনাতন পদ্ধতির ইটভাটাকে কম দূষণকারী আধুনিক ইটভাটায় রূপান্তর করা হয়েছে। এছাড়া বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সমন্বিতভাবে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলো এখানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিধিমালায় বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি দেখভালের জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি নির্বাহী পরিষদ গঠনের কথা বলা আছে। অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ ও নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে এবং মোবাইল কোর্ট ও এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে ওই প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

 

 

 

Related Articles

Back to top button