এনামুল হক, টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: বাংলাদেশ ছাত্রলীগই এ দেশের সব সংকটে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকের ছাত্রলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম, প্রতিটি অর্জনের সঙ্গে ছাত্রলীগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শুক্রবার বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি শহীদের খাতায় চোখ বোলাই তাহলে দেখব ছাত্রলীগই বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিটি অর্জন আদায়ের সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস-এই কথা বলে গিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ কথাটা অক্ষরে অক্ষরে সত্য। আমরা যে বিদেশে ছিলাম দেশে আসতে পারিনি, তখন আমাদের ফিরে আসার দাবিটা প্রথমে ছাত্রলীগ করে। এভাবে বাংলাদেশের যেকোনো দুর্যোগে ছাত্রলীগ সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। পাকিস্তানের শাসকরা আমাদের মাতৃভাষা কেড়ে নেওয়ার জন্য উর্দু আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। প্রথমে আঘাত আসলো আমাদের ভাষার ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এটার প্রতিবাদ করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার মা সবসময় আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে ছিলেন। প্রেরণা যুগিয়েছেন, শক্তি যুগিয়েছেন। সংসার কাজের জন্য কখনো বিরক্ত করেননি। জাতির পিতা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছেন, সেটা আমার মা খুব ভালোভাবে জানতেন। তাই প্রতিটি কাজে তিনি সহযোগিতা করে গেছেন। তিনি খুব দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে, বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন হবে। সে কারণে আমার বাবার পাশে তিনি সব কিছু দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। ৭৫ সালে মৃত্যুকালে তিনি তার সাথী হলেন। জীবন ভিক্ষা চাননি, খুনিদের প্রতিবাদ করেছিলেন। তাকেও ঘাতকেরা নির্মমভাবে হত্যা করে। সরকারপ্রধান বলেন, আমিও একসময় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম। আমার কেবিনেটে এখনো যারা আছে তারা সবাই ছাত্রলীগ করে আসা। আমরা যে প্রত্যেকটা কাজে দেশের অগ্রণী ভূমিকা করতে পেরেছি সেটাতে ছাত্রলীগের ভূমিকা রয়েছে। একটি আদর্শ নিয়ে এই সংগঠন তৈরি হয়, সেই সংগঠনই পারে একটি দেশে এগিয়ে নিয়ে যেতে। এক/এগারোতে ছাত্রলীগ আপস করেনি। সে সময় আমাদের ছাত্ররাই প্রথমে মাঠে নেমে এর প্রতিবাদ করেছে।তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে গর্বে আমার বুক ভরে যায়। যদি তারা আদর্শ নিয়ে চলতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, শহীদের খাতায় নাম দেখতে চাইলে দেখবো-ছাত্রলীগই বুকের রক্ত দিয়ে সব সংগ্রামে ছিল। ২০০৭ সালে আমাকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন ছাত্রলীগই মাঠে নেমেছিল। এ ছাত্রলীগই হচ্ছে সেই শক্তি, যারা একদিন এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে।করোনায়ও ছাত্রলীগ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিপদের সময় আমার নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কাস্তে হাতে কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছে। এজন্য তাদের প্রতি আমার অনেক বিশ্বাস এবং আস্থা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে অনেক সংগঠন মানবাধিকারের কথা বলে। ৮১ সালে যখন আমি ফিরে এসেছি, তখন তো আমি মা-বাবা-ভাইবোন হত্যার বিচার চাইতে পারিনি। জিয়াউর রহমান খুনিদের ক্ষমতায় বসায়। প্রতি পদে পদে বাধা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু কোনো বাধাই আমাকে আটকাতে পারেনি। আমি বাবার স্বপ্নপূরণ ও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞা করে দেশে এসেছি। মাঠের পর মাঠ হেঁটেছি। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছি। দেখতে চেয়েছি, এদেশের মানুষের কী অবস্থা? আমার বাবা-মার রক্ত নিয়ে তারা দেশের কী করেছে?
স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে সক্রিয় থাকার শপথ ছাত্রলীগের: স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে সক্রিয় থাকা, অপশক্তি ধ্বংস ও শেখ হাসিনা প্রশ্নে আপসহীন থাকার শপথ নিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। শুক্রবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ছাত্রসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যের শেষ দিকে এ শপথ পড়ান ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। শপথের অনুষ্ঠানে তারা ঘোষণা দেন-আমরা বাঙালির মহান স্বাধীনতা ও পূর্ব পুরুষের পবিত্র রক্তভেজা প্রিয় মাতৃভূমির তরুণ প্রজš§। তারুণ্যের স্বপ্নের স্বদেশ, পিতার কাঙ্খিত সোনার বাংলা এবং কন্যার পরিকল্পিত স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে আমৃত্যু সক্রিয় থাকবো। তারুণ্য সব অপশক্তিকে পিতার তর্জনীর দাপটে ধ্বংস করবে। জাতির পিতার আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও শেখ হাসিনা প্রশ্নে কেউ আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। এসময় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, খুনিদের রাজনীতি, জঙ্গিদের রাজনীতি বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ সমর্থন করে না। হত্যাকারীদের সঙ্গে কোনো আপস নয়। মিলিটারি ডিক্টেটরদের পোস্টারবয় গণতান্ত্রিক রাজনীতির উপযুক্ত হতে পারে না। তিনি বলেন, ২১ আগস্টের ঘাতককে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার কার্যকর করতে হবে। বন্যেরা যেমন বনে সুন্দর, খুনি তারেক কারাগারেই সুন্দর।
শেখ হাসিনা কখনো পদত্যাগ করবেন না: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ শেখ হাসিনাকে ভোট দেওয়ার জন্য উš§ুখ হয়ে আছে। সেটা জেনে বিএনপি বিদেশি যড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। তাদের (বিদেশি) দিয়ে ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বলেন, আজ দেশ-বিদেশে কত চক্রান্ত, কত যড়যন্ত্রের খেলা হচ্ছে এ সরকারের পতনের জন্য। বিএনপি বিদেশি মুরব্বিদের ডাকছে। তাদের আবারো দরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু আদালতের আদেশে এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার মরে গেছে। ওটা আর হবে না, শেখ হাসিনা কখনো রিজাইন (পদত্যাগ) করবেন না। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা ১/১১ ভুলিনি। আর কোনো অস্বাভাবিক সরকার হবে না এ দেশে। এখন খেলা হবে ভোটচুরির বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা (বিএনপি) ১০ ডিসেম্বর ক্ষমতায় আসবে দিবাস্বপ্ন দেখেছিল। শেখ হাসিনা নেই, পালিয়ে গেছে এমন দেখেছে। তাই অন্দোলন শুরু করে। সে আন্দোলন এখন গোলাপবাগে গিয়ে হেলে পড়েছে। গর্তে পড়ে গেলো। এখন তাদের পদযাত্রাও নেই; শুরু হয়েছে শোকযাত্রা। তাই কালো কাপড় পরে রাস্তায় নেমেছে। দেশের উন্নয়ন দেখে বিএনপির নেতাকর্মীরা অন্তর্জ্বালায় ভুগছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা ভেবেছে পদ্মা সেতু ভেঙে যাবে। এখন সেতু দিয়ে মানুষ দুই ঘণ্টায় বাড়ি যাচ্ছে। তাই অন্তর্জ্বালায় জ্বলছে বিএনপি, জ্বলছে তারেক রহমান। কীভাবে হলো এ সেতু, মানতে পারছে না। এরপর ঢাকায় মেট্রোরেল হয়েছে, সেটা কে করেছে? শেখ হাসিনা, জ্বালা তো জ্বলবেই। তারা (বিএনপি) নিজে কিছুই করতে পারেনি, শেখ হাসিনা করছে সেটা তাদের কষ্ট। তিনি বলেন, এখন মানুষ কেন উন্নয়নে খুশি? এটাই তাদের দলের লোকদের কষ্ট। ব্যথার জ্বালায় জ্বলছে। শতভাগ বিদ্যুৎ হয়েছে এটা কষ্ট। তাদের সময় কথায় কথায় বিদ্যুৎ যেত, এখন থাকছে এটাই কষ্ট। গত ৪৮ বছরের মধ্যে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা শেখ হাসিনা দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর গত ৪৮ বছরে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা কে? শেখ হাসিনা। সবচেয়ে সৎ নেতা, সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসক, সবচেয়ে সফল কূটনৈতিক, সবচেয়ে সাহসী নেতা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা আছেন বলেই এ বাংলাদেশের মানুষ কখনো একা হয়নি। তিনি বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন বলে এ দেশে গণতন্ত্রের মুক্তি ঘটেছিল। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে। তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল। তিনি যদি বাংলায় না আসতো, সেটা কি হতো। বাংলার মানুষ এমন মুক্তির স্বপ্নে কখনো বিভোর হতে পারতো না। তার নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে এ দেশে এটি বিশাল রূপান্তর হয়েছে। যার রূপকার শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করতে ছাত্রলীগকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজকের এ তারণ্য নিয়ে যেতে হবে শেখ হাসিনার জয় পর্যন্ত। এবার মাতৃভূমি রক্ষায় খেলা হবে, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে খেলা হবে, মুক্তিযুদ্ধ বাঁচাতে খেলা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আর বেশি সময় নেই। প্রস্তুত হয়ে যান। ছাত্ররাজনীতিকে আকর্ষণীয় করে আরও বেশি মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। এর আগে সমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে তিনি সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশে যোগ দেন। এসময় তাকে স্বাগত জানান ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা মঞ্চে আসনগ্রহণ করেন।