topআন্তর্জাতিক

ইকোওয়াসের হামলার শঙ্কায় নাইজারে ‘সর্বোচ্চ সতর্কতা’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রতিবেশী দেশগুলোর আক্রমণের আশঙ্কায় সেনাবাহিনীকে ‘সর্বোচ্চ সতর্কতায়’ রেখেছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজার। মূলত সামরিক অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতা দখলে নেওয়ার জের ধরে নানা ঘটনার ধারাবাহিকতায় দেশটিতে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর জোট ইকোওয়াসের হামলার সম্ভাবনা বেড়েছে।রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাইজারের নতুন সামরিক শাসকরা প্রতিবেশী দেশগুলোর আক্রমণের ক্রমবর্ধমান হুমকির কথা উল্লেখ করে দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। নাইজারে গত ২৬ জুলাই সেনা অভ্যুত্থানের পর ইকোওয়াস সেনা শাসনের অবসান দাবি করে এবং দেশটির সামরিক জান্তাকে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়।সময়সীমা পার হলেও ইকোওয়াস নাইজারের অভ্যুত্থানকারী নেতাদের সাথে আলোচনার চেষ্টা করছে। অবশ্য এই জোটটি বলেছে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করতে তারা নাইজারে সেনা মোতায়েন করতে প্রস্তুত।
আল জাজিরা বলছে, নাইজারের প্রতিরক্ষা প্রধানের জারি করা একটি অভ্যন্তরীণ নথি শনিবার ব্যাপকভাবে অনলাইনে শেয়ার করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যেকোনও আত্রমণের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রাখতে হবে।এতে বলা হয়েছে, ‘(নাইজারের) জাতীয় ভূখণ্ডে আগ্রাসনের হুমকি ক্রমবর্ধমানভাবে অনুভূত হচ্ছে।’ইকোওয়াস অবশ্য এই ধরনের যেকোনও হুমকিকে উপেক্ষা করেছে এবং শুক্রবার বলেছে, সংকটের মিটমাট করার জন্য তারা ‘কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব দিচ্ছে’, যদিও প্রয়োজনে সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়টিও তাদের হাতে অন্যতম বিকল্প হিসেবে থাকবে।
ইকোওয়াস কমিশনের সভাপতি ওমর আলিউ তোরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সন্দেহ এড়ানোর জন্য, আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই- ইকোওয়াস নাইজারের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি, বা দেশটিতে আক্রমণ করার জন্য কোন পরিকল্পনাও (ইকোওয়াসের) নেই।’তবে পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটিতে সম্ভাব্য হস্তক্ষেপের জন্য তথাকথিত স্ট্যান্ডবাই ফোর্স সক্রিয় করার জন্য চলতি আগস্টের শুরুতে এই জোট যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা বিদ্রোহে-বিপর্যস্ত সাহেল অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে এমন আশঙ্কাও বাড়ছে।
এদিকে, গত মাসের অভ্যুত্থানের পেছনে থাকা সামরিক নেতাদের সমর্থনে শনিবার নাইজারের রাজধানী নিয়ামেতে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশ করেছে।নিয়ামে থেকে আল জাজিরার আহমেদ ইদ্রিস বলেন, ‘এটি গত মাস থেকে রাজধানীতে সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আয়োজকরা বলছেন, তারা এখানে ১০ লাখ লোকের প্রত্যাশা করছেন। সমাবেশে অংশ নেওয়া মানুষ সামরিক বাহিনী এবং অভ্যুত্থানের নেতাদের বক্তৃতা শুনবে।’মাথা থেকে পা পর্যন্ত নাইজেরিয়ান পতাকা পরা রামাতু ইব্রাহিম বুবাকার নামে একজন মডেল বলছেন, ‘আমাদের অংশীদার কে হবে তা বেছে নেওয়ার অধিকার আমাদের আছে, ফ্রান্সকে অবশ্যই আমাদের এই পছন্দকে সম্মান করতে হবে।’তার দাবি, ‘৬০ বছর ধরে, আমরা কখনোই স্বাধীন ছিলাম না। শুধুমাত্র অভ্যুত্থানের দিন থেকে (আমরা স্বধীন)’। বুবাকার আরও বলেছেন, সারা দেশের মানুষ ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর দ্য সেফগার্ড অব দ্য হোমল্যান্ড (সিএনএসপি)-কে পুরোপুরি সমর্থন করছে।মূলত গত ২৬ জুলাই প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমের সরকার উৎখাত হওয়ার পর তারাই ক্ষমতা দখল করে।আল জাজিরা বলছে, সিএনএসপির নেতৃত্বে আছেন জেনারেল আব্দুরহামানে তচিয়ানি। তিনি সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সকে তার নতুন লক্ষ্য বানিয়েছেন। গত শুক্রবার নাইজারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফরাসি রাষ্ট্রদূত সিলভাইন ইত্তেকে দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়।
নাইজারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, ফরাসি এই দূত দেশটির নতুন শাসকদের সাথে দেখা করতে অস্বীকার করেছেন এবং ফরাসি সরকারের পদক্ষেপগুলো ‘নাইজারের স্বার্থের পরিপন্থি’ বলেও উল্লেখ করেছে।প্যারিস অবশ্য এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
সিএনএসপি সদস্য ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ইদ্রিসা হালিদুউ বলছেন, ‘দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরিবর্তে ফরাসি রাষ্ট্রদূত মনে করেন এটি তার পিতামাতার জমি। আমরা যুদ্ধের মানুষ, আমরা (ইকোওয়াসের) বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত।’
আল জাজিরা বলছে, পশ্চিম আফ্রিকান দেশগুলোর এই জোট নাইজারের নতুন শাসকদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছে এবং নতুন শাসকরা ক্ষমতাচ্যুত বাজুমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে তাদের অপসারণের জন্য সামরিক পন্থা ব্যবহার করার হুমকি দিয়েছে।
এছাড়া নিয়ামের নতুন শাসকরা ইকোওয়াস জোট ফ্রান্সের পকেটে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।নাইজারে ফ্রান্সের ১৫০০ সৈন্য রয়েছে এবং তারা বছরের পর বছর ধরে দেশে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাজুমকে সহায়তা করে এসেছে।আফ্রিকা ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া গ্রুপের মেরি-রজার বিলু বলেছেন, নাইজারের অভ্যুত্থানটি মালি এবং বুরকিনা ফাসোর সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানগুলোর থেকে আলাদা। কারণ ওই দুটি দেশের সেনা অভ্যুত্থান খুব বেশি আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া পায়নি।তিনি বলছেন, ‘গল্পটা এখনও শেষ হয়নি। দেখা যাক ফরাসি রাষ্ট্রদূত চলে যায় কিনা। আমি মনে করি তারা (সামরিক শাসকরা) তাদের অবস্থান থেকে নড়বে না এবং অপেক্ষা করবে ও দেখবে কী হয়।’

 

Related Articles

Back to top button