অর্থনীতিজাতীয়

স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বাজেট

টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: বৈশ্বিক বাস্তবতা আর নানামুখী চাপের মধ্যে দাঁড়িয়েও স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাত্রার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভোটের আগে নতুন অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা) চেয়ে ১৫.৩৩ শতাংশ বেশি। টাকার ওই অংক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫.২১ শতাংশের সমান। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মুস্তফা কামালের দেওয়া বাজেটের আকার ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ১৪.২৪ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৫.২৩ শতাংশের সমান। আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পেশকৃত বাজেটের শিরোনাম ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেক ধাপ ওপরে হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ। বর্তমানে নানা রকম সঙ্কটের মধ্যেও স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১-এর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে বাজেটের ডিজিটাল উপস্থাপনা প্রদর্শিত হয়। স্মার্ট বাংলাদেশের প্রথম ধাপ হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী। এটি জিডিপির ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। উচ্চপ্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা নিয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রাক্কলন করা হয়েছে এবারের বাজেটে। আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৬ শতাংশ। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার কিছু সময় পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। এরপর অর্থমন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন। একটি প্রামাণ্য চিত্র আকারে উপস্থাপন শুরু করা হয় বাজেট। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয় এতে। এরপর মূল বাজেট উপস্থাপন শুরু হয়। বাজেট অধিবেশনে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, চিফ হুইপসহ বিরোধী দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নতুন বাজেট অনুমোদন করা হয়। সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত বিশেষ এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদ সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে বাজেট অনুমোদনের পরে সংসদ ভবনের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে অপেক্ষমাণ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নতুন বাজেট সংসদে উপস্থাপনের জন্য সম্মতিসূচক সাক্ষর করেন। সময় বাঁচাতেই এই দিন রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনের পরিবর্তে সংসদ ভবনের কার্যালয়ে অফিস করেন। নতুন বাজেটে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে সঙ্গে নিয়ে সংসদ অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তাদের স্বাগত জানান। অর্থমন্ত্রী সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি এবং কালো মুজিব কোট পরে সংসদে আসেন। হাতে ছিল লাল ব্রিফকেস। এই ব্রিফকেসে করেই বাজেট বই বহন করেন তিনি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলার সঙ্কটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা। এছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভর্তুকির চাপ সামলানো এবং রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বাজেটে। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কৃষি, খাদ্য, নতুন কর্মসংস্থান সৃজন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা।
বাজেটের আয়-ব্যয়: প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের চূড়ান্ত আকার (ব্যয়) ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আয় ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ ৫ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর কর ছাড়া আয় ৫০ হাজার কোটি টাকা এবং বহির্ভূত আয় ২০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
ঘাটতি পূরণ করা হবে যেভাবে: আগামী অর্থবছরের বাজেটে মোট ঘাটতি ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক অনুদান বাদে ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৫৭ লাখ ৮৮৫ কোটি টাকা। ঘাটতি বাজেট পূরণের সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। আর বিদেশ থেকে ঋণ নিচ্ছে ১ লাখ ২ হাজার হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ঋণ নেওয়া হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অনান্য খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা এবং স্বল্পমেয়াদী ঋণ ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
ইসি’র জন্য বরাদ্দ বেড়েছে ৭০ শতাংশ: নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দ বেড়েছে ৭০ শতাংশ। এই বাজেটের বড় অংশ ব্যয় করা হবে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচনে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী, ইসির বরাদ্দ রয়েছে এক হাজার ৪২৩ কোটি ১৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে তা ২ হাজার ৪০৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা করা হয়েছে।
ইসির বরাদ্দের প্রধান প্রধান খাতের মধ্যে রয়েছে-দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন, ৬টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন, পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন ৯টি, উপজেলা পরিষদে সাধারণ নির্বাচন ৪৫৪টি, ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন ১০০টি এবং জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের উপনির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পাদন, কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ে জাতীয় ভোটার দিবস উদযাপন, ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণের কার্যক্রম গ্রহণ, পেপার লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত, মুদ্রণ ও বিতরণ, উন্নতমানের (স্মার্ট) জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান, শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়সের নিচে নাগরিক নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান, এনআইডি সিস্টেমের (সিএমএস, বিভিআএস,এএফআইএস, স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিং সফটওয়্যার) অডিট (আইএসও /সমপর্যায়ের) ও ডকুমেন্টশন, প্রবাসে অবস্থিত বাংলাদেশি নাগরিকদেরকে প্রবাসেই নিবন্ধনকরণ ও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান, এনআইডি মিনি আর্কাইভ/লাইব্রেরি স্থাপন, বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, কালিয়াকৈরে ডিআরএস (ডিজাস্টার রিকভারি সিস্টেম) স্থাপন, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই/শনাক্তকরণ সংক্রান্ত পার্টনার সার্ভিস অব্যাহত রাখা এবং নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।
করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা: প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনও ব্যক্তির বার্ষিক আয় যদি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হয়, তাহলে তাকে আয়কর দিতে হবে। গত অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা ছিল ৩ লাখ টাকা। এবার ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব ছিল ৪ লাখ টাকা করার। করমুক্ত আয়সীমার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে ব্যক্তির আয়ের প্রথম ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত। পরবর্তী এক লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ৫ শতাংশ, এর পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ২০ শতাংশ এবং এর চেয়ে বেশি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নারী ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতাদের জন্য ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করছি। প্রতিবন্ধীদের ব্যক্তি করদাতা সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা ও গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করছি। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং কোনও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের ক্ষেত্রে এমন প্রত্যেক সন্তানের জন্য ৫০ হাজার টাকা বেশি করমুক্ত আয় সীমা রাখার প্রস্তাব করছি। নতুন এই বাজেট বাংলাদেশের ৫৩তম বাজেট। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ৭৮৬ কোটি টাকার প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি পঞ্চম বাজেট এবং আওয়ামী লীগ সরকারের এটি ২৪তম বাজেট। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। বাজেটের এই ব্যয় মেটাতে মোট আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রা ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ৬৭ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা বেশি। নতুন বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। করমুক্ত আয়ের সীমা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে সরকারের মোট ব্যয় মেটাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়াও সরকারের আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রণীত নতুন বাজেটে সরকারের পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। ঋণ ও অগ্রিম পরিশোধ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বিশেষ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা।
কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি বাস্তবায়নে নতুন বছরের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। খাদ্য আমদানি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫০২ কোটি টাকা। এডিপির বাইরে বিভিন্ন স্কিম বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। সরকারের মুলধনী ব্যায় বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৯ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এছাড়া সরকারের অন্যান্য ব্যয় নির্বাহে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৫ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশের ঘরে রাখা হয়েছে। টাকার অঙ্কে ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ (অনুদানসহ) ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে বিদেশি ঋণ বাবদ পাওয়া যাবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। সরকার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন খাত থেকে ঋণ নেবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে নেবে ১ লাখ ২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে নেবে ৫ হাজার কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা বেশি বৈদেশিক ঋণ আগামী অর্থবছরে নেওয়া হবে। আর ঋণগ্রস্ত বেশি হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য বেশি টাকা গুনতে হবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। এছাড়া বাড়ছে সরকারের মূলধনি ব্যয়ও।
আগামী অর্থবছরে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ আয়ের প্রধান উৎস জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। এছাড়া কর ব্যতীত প্রাপ্তি (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্য হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি বৈদেশিক অনুদান থেকে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বৈদেশিক অনুদান সরকারকে পরিশোধ করতে হয় না। ফলে এ খাত থেকে আয়কে রাজস্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৮৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। এছাড়া অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেওয়া হচ্ছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পেশ করা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এই বাজেট পাস হবে আগামী ২৬ জুন। কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে।
একের বেশি গাড়ি থাকলেই বাড়তি কর: যত বেশি জ্বালানি ব্যবহার হয় পরিবেশের ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। আবার ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি আমদানিতে সংকট রয়েছে। এ রকম অবস্থায় একের বেশি গাড়ি নিরুৎসাহিত করতে আগামী ২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবেশ সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একের অধিক প্রতিটি গাড়িতে সিসি অনুযায়ী ২৫ হাজার টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা বাড়তি কর দিতে হতে পারে। প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, একের বেশি ১৫শ সিসি পর্যন্ত প্রতিটি গাড়িতে দিতে হবে ২৫ হাজার টাকা। ১৫শ সিসির বেশি থেকে ২ হাজার সিসি পর্যন্ত ৫০ হাজার, আড়াই হাজার সিসি পর্যন্ত ৭৫ হাজার, তিন হাজার সিসি পর্যন্ত দেড় লাখ, ৩৫০০ সিসি পর্যন্ত ২ লাখ এবং সাড়ে তিন হাজার সিসির বেশি হলে সাড়ে তিন লাখ টাকা দিতে হবে।

Related Articles

Back to top button