আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ শি জিনপিং শুক্রবার (১০ মে) টানা তৃতীয় মেয়াদে চীনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন। আগামী পাঁচ বছর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশের শাসনভার পরিচালনা করবেন তিনি।নতুন শাসনামলে শি জিনপিংকে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে সে বিষয়টি তুলে ধরেছে বার্তাসংস্থা এএফপি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বর্তমান কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রায় তলানিতে রয়েছে। করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি, মানবাধিকার ও বাণিজ্য ইস্যু নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। গত মাসে গোয়েন্দা নজরদারি বেলুন পাঠানোর অভিযোগে শেষ মুহূর্তে চীন সফর স্থগিত করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন। তবে নজরদারি বেলুন পাঠানোর বিষয়টি কঠোরভাবে অস্বীকার করেছে চীন।ব্লিংকেন সফর বাতিল করার পরই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিভিন্ন মন্তব্য করা শুরু করে বেইজিং। গত সপ্তাহে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুইন গ্যাং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আগ্রাসী মনোভাব পরিহার না করে তাহলে দুই দেশের মধ্যে ‘দ্বন্দ্ব ও বিবাদ’ লেগে যেতে পারে; যার ‘পরিণতি’ হবে ভয়াবহ।প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা চীনের উত্তরণ বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে।
শি জিনপিং ২০১৩ সালে প্রথমবার চীনের প্রেসিডেন্ট হন। শুক্রবার তিনি তৃতীয়বার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও শক্তিশালী হয়েছেন শি। নিজের হাতে নিয়েছেন শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ।ফলে শি জিনপিং আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে তাইওয়ানকে একত্রীকরণ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।সাম্প্রতিক সময়ে তাইওয়ানের দিকে নিজেদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে বেইজিং।গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফরে আসার পর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় চীন। পেলোসি চলে যাওয়ার পরই পরই ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে ঘিরে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া চালায় বেইজিং।
তাইওয়ানকে কখনো শাসন না করলেও চীন দাবি করে এটি তাদেরই অঞ্চল। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গতবছরও বলেছেন, তাইওয়ানকে প্রথমে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একত্রীকরণ করার চেষ্টা করবেন তিনি। এতে কাজ না হলে শক্তি ব্যবহার করবেন।তবে তাইওয়ানে যদি কোনো ধরনের হামলা হয় তাহলে স্থবির হয়ে যাবে পুরো বিশ্ব। কারণ বিশ্বের বেশিরভাগ ইলেকট্রিক পণ্যের যন্ত্রাংশ তাইওয়ানে উৎপাদিত হয়।এছাড়া তাইওয়ানে যে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রকেও ক্ষুব্ধ করে তুলবে।চীনের ধীরগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়টি আগামী পাঁচ বছরের জন্য শি জিনপিংয়ের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চপদগুলোতে যেভাবে নিজেদের বিশ্বস্তদের তিনি সুযোগ করে দিয়েছেন, সে বিষয়টি ইঙ্গিত দিচ্ছে তিনি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রাধান্য দেওয়ার বদলে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থটি দেখছেন।বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনের গত বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৫ শতাংশ। যা গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।শি জিনপিংয়ের আমলে চীনের বেশিরভাগ মানবাধিকার কর্মী হয় দেশ ছেড়েছেন না হয় চুপ হয়ে গেছেন।দেশটির সুদুর পূর্বাঞ্চল জিনজিয়াংয়ের উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক ধরপাকড় এবং নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশগুলো দাবি করে থাকে, জিনজিয়াংয়ে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, এটি অনেকটা গণহত্যারই সামিল।শি-র ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে আগামী পাঁচ বছরে চীনে মানবাধিকারের এ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এছাড়া তাকে কেউ চ্যালেঞ্জ জানাবে এমন কিছুও হয়ত হবে না।
সূত্র: এএফপি।