টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকাঃ প্রায় শীত বিদায়ের লগ্নে পাতাঝরা শুষ্ক শেষে আসে রঙে রঙিন বসন্ত। চারদিকে নতুন পাতা আর ফুলের সমাহার। মাঝে-মধ্যেই শোনা যায় কোনো এক গাছের ফাঁকে লুকিয়ে থাকা কোকিলের কুহু ডাক। বসন্ত আসেই যেন আমাদের হৃদয়ে অকারণ খুশির দোলা দিতে। যেদিকে চোখ যায়, যেন রঙের বাহার। আজ বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন। তদুপরি ভালবাসা দিবস। তাই দিনটি ছিল অন্যরকম। বাঙালি মুখিয়ে থাকে অন্যরকম ভালোলাগায় দিনটি উদযাপনের প্রতীক্ষায়। আর এমন দিনটি তো আসলে উৎসবে মেতে ওঠার।
বসন্তের প্রথম দিনে রঙিন হয়ে উঠেছিল রাজধানী ঢাকার দৃশ্যপট। ঋতুরাজকে বরণ করতে উৎসবের আয়োজন তো ছিলই, পাশাপাশি বাসন্তী, লাল হলুদ পোশাকে সেজে পথে নেমে নগরবাসী যেন জানান দিয়ে গেলেন, যতই দুঃসময় আসুক, তাতে জীবনের জাগরণ, আনন্দের ধারা, প্রাণের স্পন্দন কিছুতেই থেমে যায় না।
আগে পয়লা ফাল্গুন ১৩ ফেব্রুয়ারি এবং ভালোবাসা দিবস পড়ত পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু বাংলা দিনপঞ্জিকা সংশোধন করে গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জির সঙ্গে সমন্বয় করায় পয়লা ফাল্গুনও পড়ছে ১৪ ফেব্রুয়ারিতেই। ফলে এক দিনে দুই আনন্দ উৎসবের উপলক্ষ থাকায় সাকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় আনন্দের রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল। সকালেই বসন্ত উৎবের আয়োজন ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চে। বসন্তের ঐতিহ্যবাহী বাসন্তী রঙের শাড়ি আর হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে নানা বয়সী নরনারী উৎসবে অংশ নেন। জীবিকার অনিবার্য প্রয়োজনে এই নববসন্তের দিনেও যারা কর্মক্ষেত্র এড়াতে পারেননি তারা অফিস–দপ্তরে গেছেন বসন্তের বাহারি সাজেগুজে।
আর বিকেল থেকে দলবেঁধে অনেকেই বেড়াতে বের হন। বিকেলের দিকে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় এলাকা, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ধানমন্ডির লেকের পাড়, জাতীয় সংসদের সামনের মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও চন্দ্রিমা উদ্যান, হাতিরঝিল এলাকায় বিপুল লোকসমাগম ঘটেছিল। সব মিলিয়ে সারা দিনই রাজধানীর পথে পথে বসন্তের রং ছাড়িয়েছেন এই উৎসমুখর নগারিকেরা।
ওদিকে আবার ভালোবাসার ভাবাবেগে আকুল তরুণ–তরুণীরা ঘুরতে বেরিয়েছেন জুটি বেঁধে। উপহার দিয়েছেন পরস্পরকে। ফুলের দোকানগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা। একটি গোলাপ ফুল বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। এদিন
বসন্ত উৎসব শুরু হয়েছিল সকাল সাতটা ১৫ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চে। প্রথমেই ছিল বেঙ্গল মিউজিকের শিক্ষার্থীদের এসরাজে “বাসন্তী রাগ” পরিবেশনা।
জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদের আয়োজনে এই উৎসব শুরু হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। বসন্ত কথনে উৎসবের ইতিহাস আর প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে পরিষদের সভাপতি স্থপতি সফিউদ্দিন আহমদ বলেন, “ঋতুভিত্তিক উৎসগুলোর ভেতর দিয়ে আমরা প্রকৃতির প্রতি সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি মানবিক বোধেরও বিকাশ ঘটাতে চাই। নগর জীবনে সেই লক্ষ্য নিয়েই গত প্রায় তিন দশক ধরে এই উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে।”
বসন্ত কথনের পরে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে আবির বিনিময় এবং প্রীতিবন্ধনী পড়ানো হয়। দলীয় পরিবেশনায় আরও অংশ নিয়েছে গানে সুরসপ্তক, নৃত্যে ধ্রুপদ কলাকেন্দ্র, সাধনা, নৃত্যম, মুদ্রা ক্লাসিক্যাল ড্যান্স, পুষ্পাঞ্জলি,স্পন্দনসহ বিভিন্ন সংগঠন। বেলা প্রায় ১১টা পর্যন্ত চলেছে বসন্ত বরণের এই সাংস্কৃতিক উৎসব।