টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আহমেদকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। একক প্রার্থী হওয়ায় সোমবার দুপুরে তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করে ইসি।এর আগে রবিবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শাসকদল আওয়ামি লিগের প্রার্থী হিসেবে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নাম দাখিল করেন। নির্বাচন কমিশনে আবেদন দাখিল করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাড়াতে ও তাদের সহায়তা দিতে দেশের উত্তরের জনপদ জেলা পাবনার কাশিনাথপুর/নগরবাড়ীতে ‘মুজিব বাঁধ’ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন পাবনা জেলা ছাত্রলিগের সভাপতি ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। জনসভার স্বাগত বক্তব্যের দায়িত্ব পড়ল সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর ওপর। বক্তব্য দিয়ে ডায়াস থেকে নামার সময় বঙ্গবন্ধু তাঁর হাত ধরে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। কপালে চুমু দিয়ে বললেন, ‘তুই তো ভালো বলিস।’
অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গবন্ধু হেলিকপ্টারে উঠতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি সাহাবুদ্দিনের কাছে জানতে চাইলেন, ঢাকায় যাবি কি না? তিনি সানন্দে রাজি হলেন। জীবনে প্রথমবারের মতো হেলিকপ্টারভ্রমণের সুযোগ হলো তাঁর, তা-ও রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। ঢাকায় হেলিকপ্টার থামল পুরনো বিমানবন্দর তেজগাঁওয়ে। ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ডাকলেন বঙ্গবন্ধু। নির্দেশ দিলেন, ‘ওকে বাসায় নিয়ে খেতে দাও, তারপর খরচ দিয়ে পাবনা পাঠিয়ে দিও।’
১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আরেকবার গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। জনসভার আয়োজন তখন স্টেডিয়ামে। জেলা ছাত্রলিগের সভাপতি হিসেবে সেবারও বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ হয় সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর। বক্তব্য শেষে বঙ্গবন্ধু ঠিক আগের মতোই তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেন। ভবিষ্যতে আরো সফলতা কামনা করেন। এ দুই ঘটনা গতকাল রবিবার আবারও পাবনাবাসীর অনেকে স্মরণ করেছেন। সাহাবুদ্দিনকে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রপতি পদে দেখতে চাওয়ার মধ্যে অর্ধশত বছর আগের ওই ঘটনার কিছুটা যোগসূত্র খুঁজছেন তাঁরা।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন দেশের রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন—এমন খবর রোববার পাবনায় পৌঁছালে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে স্থানীয় আওয়ামি লিগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। আনন্দ মিছিল করেছে তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাধানগর মজুমদার আকাডেমির শিক্ষার্থীরাও। পাবনা জেলা আওয়ালি লিগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল মিডিয়াকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর রাধানগর মজুমদার আকাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহপাঠী ও বাল্যবন্ধু এবাদত আলী বলেন, ‘তিনি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদে অধিষ্ঠিত হলেতে যাচ্ছেন। এর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে?’ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শের সৈনিক। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা ছাড়া তাঁর জীবনে কিছুই নেই। বঙ্গবন্ধুই তাঁকে নেতা বানিয়েছেন। ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু তাঁকে ভালোবাসতেন। আমরা খুবই খুশি। তিনি একজন সুযোগ্য মানুষ।’ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শরফুদ্দিন আনছারী ও মাতা খায়রুন্নেসা। তিনি পাবনা শহরের পূর্বতন গান্ধী বালক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করে রাধানগর মজুমদার আকাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করার পর পাবনার ঐতিহ্যবাহী সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২সালে) বিএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহিদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আইন পেশায় যোগ দেন এবং ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এই পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। পরে ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পর পরই আওয়ামি লিগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়। হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের কাণ্ড ঘটে। পরে আওয়ামি লিগ সরকার ক্ষমতায় এলে সেসব ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠন করে, যার প্রধান ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের অন্যতম কাণ্ডারি হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনেরও সভাপতি। পেশাগত জীবনে প্রথম দিকে সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি পাবনা প্রেসক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির আজীবন সদস্য।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে মো. সাহাবুদ্দিন চু্প্পুকে সামরিক আইন বলে গ্রেপ্তার করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। কারাভোগের পর মুক্ত হলে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামি লিগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাংকের কথিত পদ্মা সেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তার প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদন কানাডা কোর্ট কর্তৃক সমর্থিত হয়। সর্বশেষ তিনি শাসকদল বাংলাদেশ আওয়ামি লিগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ড. রেবেকা সুলতানার সঙ্গে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান।