টাইমস ২৪ ডটনেট, ঢাকা: নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দেশের পরবর্তী ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে চমক দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এর মেয়াদ আগামী ২৩ এপ্রিল বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে। তাঁর স্থলে পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দলীয়ভাবে মনোনীত হয়েছেন সাবেক জেলা দায়রা জজ মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার। রোববার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় প্রার্থী হিসেবে তার নাম চূড়ান্ত করেন। এদিন সকালে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচন কমিশনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নাম দাখিল করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনে প্রতিনিধি দল সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত হন। এসময় সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নামে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করা হয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর প্রস্তাবক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সমর্থক হয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এরআগে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসাবে মো. সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় শেখ হাসিনা এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন। মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বিস্তারিত পরিচয়ও এসময় তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের।
শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী: দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সকালে গণভবনে তিনি সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এসময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন। এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চিফ হুইপ লিটন চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ফারুক খান, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সাহাবুদ্দিনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় প্রার্থী হিসেবে তার নাম চূড়ান্ত করেন। রোববার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচন কমিশনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাহাবুদ্দিন আহমেদের নাম দাখিল করেন। মো. সাহাবুদ্দিন পেশায় একজন আইনজীবী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য। তিনি ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি। এরপর ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামাত জোটের নেতা কর্মীর দ্বারা সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন এবং মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে সংঘটিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর কারা বরণ করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র সন্তানের পিতা। তার স্ত্রী প্রফেসর ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন। ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাষ্ট্রপতি পদে দুই মনোনয়নপত্র জমা: রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একই ব্যক্তির নামে দুটি আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম। তিনি বলেন, যার নামে দাখিল হয়েছে তিনি মো. সাহাবুদ্দিন। পিতা মরহুম শরফুদ্দিন আনসারী। বাসা হোল্ডিং ৮৮/১ গ্রাম রাস্তা শিবরামপুর পাবনা। পোস্ট কোড ৬৬০০ পাবনা। গতকাল রোববার সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান সচিব জাহাংগীর আলম। তিনি জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্বাচনী কর্তার দপ্তরে দুটি আবেদন সকাল ১১ টা এবং সকাল ১১টা ৫ মিনিটে জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, মনোনয়নপত্র প্রস্তাবকারীর নাম হচ্ছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নোয়াখালী-৫ আসনের সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদের, এবং সমর্থনকারীর নাম হচ্ছে চট্টগ্রাম-৭ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাছান মাহমুদ।এ দুটি আবেদন সোমবার দুপুর একটায় হতে বাছাই করা হবে। বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ার পর মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচনী কর্তা আপনাদেরকে অবহিত করবেন বলে জানান তিনি। একক প্রার্থী হলে তার প্রক্রিয়া কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোমবার বাছাইয়ের পরে বৈধ মনোনয়ন যেটা হবে তার নাম ঘোষণা করা হবে। আইনানুগভাবে প্রত্যাহারের শেষ তারিখে আমরা চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করব কে বাংলাদেশের পরবর্তী মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
বিপ্লব বড়ুয়ার ফেসবুক পোস্ট: অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। গতকাল রোববার এক ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে যান ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের নেতারা। এরপর নির্বাচন কমিশনে গিয়ে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নাম দাখিল করেন ওবায়দুল কাদের। পরে নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফও করেন কাদের। বিপ্লব বড়ুয়া জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসাবে মো. সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন প্রদান করেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাননীয় সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় শেখ হাসিনা এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন। তিনি পেশায় একজন আইনজীবী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বললেন সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে: দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেছেন, সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে। রোববার সকালে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল মনোনয়নপত্র জমা দিতে নির্বাচন কমিশন ভবনে যান। ওই প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ দলের সঙ্গে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু নিজেও নির্বাচন কমিশনে যান। পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের প্রাচীনতম এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে প্রার্থী মনোনয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি এ মনোনয়ন চূড়ান্ত করেন। মনোনয়ন জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের একের পর এক অনুরোধের মধ্যে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু শুধু বলেন, সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে। এখন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সব সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছা।
কি আছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইনে: রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইনে মনোনয়নপত্র দাখিল সম্পর্কে বলা আছে, মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য নির্ধারিত দিনে ও সময়ের মধ্যে কোনো সংসদ-সদস্য রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন কোন ব্যক্তিকে ওই পদের জন্য মনোনীত করে নির্বাচনি কর্তার কাছে একটি মনোনয়নপত্র দিতে পারবেন, যে মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসাবে তার সই থাকবে এবং সমর্থক হিসেবে অন্য একজন সংসদ-সদস্যের সই থাকবে। সেইসঙ্গে যিনি রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত হতে যাচ্ছেন, তারও ওই মনোনয়নে সম্মতিসূচক সইসহ বিবৃতি থাকবে। তবে প্রস্তাবক বা সমর্থক হিসাবে কোনো সংসদ-সদস্য একটির বেশি মনোনয়নপত্র সই করবেন না।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচনি কর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ নির্বাচনে ভোটার সংসদ সদস্যরা। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ মোট আসন ৩৫০টি। এদিকে, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুগ্মসচিব এসএম আসাদুজ্জামান বলেছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত কোনো দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়নি। যেহেতু রোববার পর্যন্ত মনোনয়ন জমার শেষদিন, তাই এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছরের জন্য পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।