topঅর্থনীতি

টিকে থাকার লড়াইয়ে পোশাক শিল্প

টাইমস ২৪ ডটনেট: গ্যাস সংকটে উৎপাদন কমে গেছে শিল্প কারখানায়। উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে দাবি করে পোশাক শিল্প মালিকরা বলছেন, ‘এই সংকটের মধ্যেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। বেশি চাপের মুখে পড়ছে পোশাক শিল্পের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো।’ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক মাস ধরে শিল্প-কারখানায় তীব্র গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে তৈরি পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানার উৎপাদন। বিশেষ করে গ্যাস সংকটে অর্ধেকে নেমে এসেছে রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোর পণ্য উৎপাদন। দিনের বেশির ভাগ সময় লোডশেডিং আর গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, ‘গ্যাসের সংকটের ভেতর দাম বাড়ানোতে বন্ধ হয়ে যেতে পারে অনেক কারখানা।’ তাই দাম পুনর্বিবেচনার পাশাপাশি বর্ধিত দাম পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ব্যবসায়ীরা এখন প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন।
সূত্র মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিতে চাপের মুখে পড়েছে দেশের পোশাক শিল্প। কমেছে মূল্য সংযোজনের পরিমাণ। বৈশ্বিক সংকটে কমছে রপ্তানি আদেশও। এরমধ্যেই ঘোষণা আসে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির। বিদ্যুৎসহ শিল্পের সব খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত। বর্ধিত দাম কার্যকর হবে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে।উদ্যোক্তারা বলছেন, বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। বর্ধিত দাম দিয়ে অনেক কারখানার পক্ষেই টিকে থাকা সম্ভব নাও হতে পারে।
এ বিষয়ে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, গ্যাসের দাম পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হলে আমাদের জন্য তার সাথে খাপ খাওয়ানো সহজ হবে। তাতে আমাদের পক্ষে ব্যয় সংকোচন সম্ভব হবে। তাছাড়া একত্রে যদি এত বেশি দাম বাড়ানো হয়, তবে আমাদের কারও পক্ষেই শিল্পগুলোকে কর্মক্ষম রাখা সম্ভব হবে না। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। অভ্যন্তরীণ বাজারেও আমাদের পণ্য বিক্রি হবে না। সেই সাথে, রপ্তানিতেও আমরা প্রতিযোগিতা করতে পারব না। তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ, প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রির সবকিছুরই দাম বেড়ে যাবে। তাতে আমদানি নির্ভরশীলতা বেড়ে যাবে। এমনিতেই ডলার সংকট, তার ওপর আমদানি নির্ভরশীলতা বাড়লে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে যাবে। অনেক ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই মনে করি, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ- সব শিল্পের জন্যই এটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
উদ্যোক্তারা বলছেন, সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে পোশাক শিল্প। তাতে চাপ বাড়বে ডলারের ওপর। রপ্তানির অর্জনও কঠিন হবে। তাই শিল্প এবং কর্মসংস্থানের স্বার্থে দাম পুনর্বিবেচনার দাবি উদ্যোক্তাদের। ব্যবসায়ীরা বলেন, ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে আমরা ধরে রাখতে পারব কিনা, তা নিয়ে আমার শঙ্কা রয়েছে। এক পর্যায়ে গার্মেন্টসগুলো ভারত এবং চীন থেকে কাঁচামাল কেনা শুরু করবে। কারণ, দামের পার্থক্য দাঁড়াবে ২৫-৩০ সেন্ট করে। ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ ইন্ডাস্ট্রিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাদের পক্ষে রপ্তানির গতি ধরে রাখাটাও কঠিন হবে।এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে দাম পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং শিল্প ও বণিক সমিতির শীর্ষ সংসঠন এফবিসিসিআই। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দাম বেশি বাড়ানো হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা ভাবছেন। তারা এ ব্যাপারে কথা বলবেন, আমাদের জানিয়েছেন। আমরাও রিপোর্ট তৈরি করছি যে, কীভাবে ভালো হয়, দাম কমানো কিনা। প্রধানমন্ত্রী তাদের সাথে কথা বলে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গত বছরের জুলাই থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। কারখানায় উৎপাদনের জন্য যেখানে প্রতি বর্গফুটে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকার কথা, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র দুই-তিন। এছাড়া দিনের বেশির ভাগ সময় লোডশেডিং থাকায় বেশি দামে ডিজেল কিনে জেনারেটর চালু রাখতে হচ্ছে। তাই কারখানা সচল রাখতে প্রতিদিন বাড়তি খরচ হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে রপ্তানিমুখী পোশাক খাত। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এ খাতের রপ্তানি লক্ষ্য। তার মধ্যে গ্যাস সংকটে এই খাতের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি হতে দ্রুত পরিত্রাণ চাইছেন কারখানার মালিকরা।
কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, কারখানায় অনেক দিন ধরেই গ্যাস সংকট রয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ঘন ঘন লোডশেডিং। এতে কারখানা উৎপাদন ৪০-৫০ ভাগ কমে গেছে। জ্বালানির জন্য অতিরিক্ত ডিজেল কিনতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে অনেক। গ্যাস-সংকটে ইতোমধ্যে চাহিদা মত উৎপাদনে ঝামেলা শুরু হয়ে গেছে। সময় মতো উৎপাদন করতে না পারায় অনেকেই নিজ খরচে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন। পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার ইকোটেক্স লিমিটেড কারখানার পরিচালক মোহাম্মদ আলম খান বলেন, গত কয়েক মাস ধরেই গ্যাসের চাপ নেই বললেই চলে। আমাদের চাহিদা গড়ে ১০-১২ পিএসআই কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১-২ পিএসআই। এদিকে আবার বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং। ফলে আমাদেরকে ডিজেলচালিত জেনারেটর এবং এলপি গ্যাস ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে করে প্রতিমাসে আমাদের সাড়ে ৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। সবমিলিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমে গেছে। তাই সরকারকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে গ্যাস আমদানি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোন খাতে গ্যাস বেশি দরকার সেটি নির্ধারণ জরুরি। যেমন, আমাদের ডাইয়িং, নিট এবং ওভেন কারখানায় বেশি গ্যাস দরকার। এখানে গ্যাস ঠিকমত সরবরাহ করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে দ্রুত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যাতে আমরা এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারি।
মৌচাক এলাকার নিট এশিয়া লিমিটেড কারখানার জেনারেল ম্যানেজার মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক মাস থেকে বিদ্যুতের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। প্রায় লোডশেডিং হচ্ছে। আমাদের কারখানা চালাতে ডিজেল ব্যবহার করতে হচ্ছে। আর ডিজেল কিনতে গিয়ে প্রতি মাসে আড়াই কোটি টাকা বেশি বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। এছাড়া গ্যাসের প্রেশার একবারেই কম। আমাদের চাহিদা ১০ পিএসআই, কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে এক-দুই পিএসআই। আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা প্রতিদিন ৩৫ টন, কিন্তু উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে ১৭-১৮ টন। সে কারণে আমরা বায়ারদের ঠিক সময়ে শিপম্যান্ট করতে পারছি না। বায়ারদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে, ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সব মিলিয়ে আমরা একটা ভয়াবহ বিপর্যয়ে আছি।’
সূত্র: ঢাকা পোষ্ট।

Related Articles

Back to top button