বাংলাদেশ

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় তৃণমূলে সুশাসনের ঘাটতি ৭৫% ইউনিয়নে ওয়ার্ড সভা নেই: জলবায়ু সুশাসনে জনঅংশগ্রহণ উপেক্ষিত

টাইমস ২৪ ডটনেট : জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন ও জনঅংশগ্রহণে গুরুতর ঘাটতির চিত্র উঠে এসেছে। উপকূলীয় জেলা বরগুনা ও পটুয়াখালীর ইউনিয়ন পরিষদগুলোর ৭৫ শতাংশে নিয়মিত ওয়ার্ড সভা অনুষ্ঠিত হয় না, আর ৬৮ শতাংশ ক্ষেত্রে জনগণের মতামত সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রতিফলিত হয় না। ফলে অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্প স্থানীয় মানুষের বাস্তব চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন হয়ে পড়ছে।

রোববার ২৯ ডিসেম্বর, সকালে রাজধানীর সিরডাপ আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে আয়োজিত “জলবায়ু সুশাসন সিম্পোজিয়াম”-এ এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। ওয়েভ ফাউন্ডেশন ও ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় আয়োজিত এ সিম্পোজিয়ামে মূল প্রতিপাদ্য ছিল—“স্থানীয় অংশীদারিত্ব উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ ও করণীয়”।

সিম্পোজিয়ামের সভাপতিত্ব করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন অধিশাখা) শাহানারা ইয়াসমিন লিলি। তিনি বলেন,
“জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় শুধু নীতি নয়, মাঠপর্যায়ে কার্যকর বাস্তবায়ন এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”

সেন্টার ফর সোশ্যাল রিসার্চের রিসার্চ ডিরেক্টর আহমেদ বোরহান সামাজিক নিরীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, বরগুনা ও পটুয়াখালীর ৪টি উপজেলা, ৩২টি ইউনিয়ন ও ২৮৮টি ওয়ার্ডে পরিচালিত এই সামাজিক নিরীক্ষায় ৬৪টি ফোকাস গ্রুপ আলোচনা, ১৬০টি কী ইনফরম্যান্ট ইন্টারভিউ এবং প্রায় ১,৬০০ জনের প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

নিরীক্ষায় দেখা যায়—৮২ শতাংশ উন্নয়ন প্রকল্প প্রত্যাশিত ফল দেয়নি, ৭০ শতাংশ মানুষ ইউনিয়ন পরিষদের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত নয়, অভিযোগ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও সময়ানুবর্তিতার ঘাটতি রয়েছে, নারীর অংশগ্রহণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি এখনও সীমিত, জলবায়ু অভিবাসন ও ক্ষতিপূরণে কাঠামোগত দুর্বলতা।

বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় জলবায়ু অভিবাসন ও ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন ব্লাস্টের ক্লাইমেট অ্যান্ড ডিসপ্লেসমেন্ট অ্যাডভাইজার আহমাদ ইব্রাহীম। তিনি বলেন, “জলবায়ু অভিবাসীরা এখনো কোনো স্বীকৃত ক্ষতিপূরণ কাঠামোর আওতায় নেই। এটি পরিবেশগত ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।”

ওয়াটার ডট ওআরজি দক্ষিণ এশিয়ার পোর্টফোলিও লিড আবু আসলাম বলেন, “স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী না করলে জলবায়ু সহনশীলতা অর্জন সম্ভব নয়।”
সুপারিশ ও করণীয়, সিম্পোজিয়ামে বক্তারা বলেন–ইউনিয়ন পরিষদে বাধ্যতামূলক ওয়ার্ড সভা নিশ্চিত করতে উপ-আইন কার্যকর করতে হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সক্রিয় ও জবাবদিহিমূলক করতে হবে, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদা নীতিমালা ও ক্ষতিপূরণ কাঠামো প্রয়োজন, টপ-ডাউন ও বটম-আপ পরিকল্পনার সমন্বয় ঘটাতে হবে।

সিম্পোজিয়ামের উপসংহারে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। ন্যায়ভিত্তিক ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা ও স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া ছাড়া জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা মানুষের আস্থা ফেরানো সম্ভব নয়।

অনুষ্ঠান শেষে স্মারক বিতরণ, ফটোসেশন ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।

Related Articles

Back to top button