বাংলাদেশ

তামাক কোম্পানির কৌশল ঠেকাতে আইন শক্তিশালী করা জরুরি

মাখদুম সামি কল্লোল: বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিগুলো নানামুখী কৌশলে পণ্যের প্রচারণা, তরুণদের লক্ষ্য করে বিপণন এবং নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে তারা তামাকের কর বৃদ্ধি ও আইন সংশোধন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করারও চেষ্টা করছে। ফলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা বলছেন—কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন আরও শক্তিশালী করা এখন সময়ের দাবি।

বুধবার ২৬ নভেম্বর, সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে “আইনের সীমাবদ্ধতা: সুযোগ নিচ্ছে তামাক কোম্পানি” শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা ট্রিবিউন ও বাংলা ট্রিবিউনের খুলনা প্রতিনিধি মো. হেদায়েৎ হোসেন মোল্লা এবং সারাবাংলা ডটনেট-এর সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এমদাদুল হক তুহিন গত তিন মাসের অনুসন্ধানী রিপোর্ট উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ। সঞ্চালনায় ছিলেন দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা অনন্যা রহমান। আলোচনায় অংশ নেন আইনজীবী ও নীতি বিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা এবং টিসিআরসি সদস্য সচিব মো. বজলুর রহমান।

তরুণদের টার্গেট করে নতুন ফ্লেভারের সিগারেট
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে আসে—তামাক কোম্পানিগুলো তরুণদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন দামে চকলেট, আপেল, স্ট্রবেরি ও মেনথলসহ নানা ফ্লেভারের সিগারেট বাজারজাত করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব সিগারেট সাধারণ সিগারেটের মতোই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়; বিশেষ করে সিনথেটিক মেনথল শ্বাসতন্ত্রের অ্যালার্জি, টনসিল প্রদাহ ও দীর্ঘস্থায়ী অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ-তরুণী এবং বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এসব ফ্লেভারযুক্ত সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছে, যা বিশেষজ্ঞদের মতে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রতিবেদনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে ফ্লেভার সিগারেট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়।

আইন প্রয়োগ দুর্বল—সুযোগ নিচ্ছে তামাক কোম্পানি
অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে কোম্পানিগুলো শিক্ষার্থী ও তরুণদের লক্ষ্য করে গোপন ও চটকদার বিজ্ঞাপন চালিয়ে যাচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত খুলনায় মাত্র ৫০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয় এবং জরিমানা হয় ৬১ জনের। একই সময়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৮০১ জনকে কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে—যা তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের দুর্বল অবস্থানকে প্রকাশ করে।

প্যাকেজিংয়ের আকর্ষণীয়তা, সহজলভ্যতা ও আড়াই-চোখে প্রচারণার কারণে অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা বাড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে গড়ে উঠছে সিগারেট বিক্রয়কেন্দ্র, যা সরাসরি তরুণদের ধূমপানে উৎসাহিত করছে।

প্রতিবেদনগুলোর সুপারিশে বলা হয়—
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধন করে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, ফ্লেভারযুক্ত সিগারেট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ, তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের নিয়মিত সভা নিশ্চি, জরিমানা ও শাস্তির বিধান কার্যকর ও কঠোরভাবে প্রয়োগ।

বিশেষজ্ঞ এবং গণমাধ্যমকর্মীদের মতে, তামাক কোম্পানির কৌশল থামাতে এবং তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় এখনই কঠোর ও শক্তিশালী আইন নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই।

Related Articles

Back to top button