নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদন আদালতের নির্দেশনার পরিপন্থি — পাবলিক হেলথ লয়ারস নেটওয়ার্কের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর—এ বিষয়ে কোনো বিতর্ক নেই। এমন বাস্তবতায় বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিসকে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদন দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে পাবলিক হেলথ লয়ারস নেটওয়ার্ক (PHLN)। সংগঠনটির দাবি, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) কর্তৃক এই অনুমোদন বাংলাদেশের সংবিধান, সরকারের নীতি ও আদালতের নির্দেশনার পরিপন্থি।
আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর ২০২৫) দুপুরে নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য নিষিদ্ধের দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপর অর্পিত হয়েছে। কিন্তু বেজা কর্তৃক ফিলিপ মরিসকে “নিকোটিন পাউচ” উৎপাদনের অনুমতি প্রদান আদালতের নির্দেশনা ও রাষ্ট্রীয় নীতির পরিপন্থি। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও ফিলিপ মরিসের অনুমোদন বাতিলের দাবি জানানো হয়।
সংগঠনটি উল্লেখ করে, সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। এই লক্ষ্যে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ কঠোরভাবে প্রয়োগের পাশাপাশি সংশোধনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। তবে অনেক কোম্পানি রাসায়নিক নিকোটিন ব্যবহার করে আইনকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করছে।
বিবৃতিতে স্মরণ করানো হয়, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ১ মার্চ ২০১৬ তারিখে সিভিল আপিল নং ২০৪-২০৫/২০০১ মামলায় এক ঐতিহাসিক রায়ে ছয়টি নির্দেশনা প্রদান করেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো
দেশে নতুন কোনো তামাক কোম্পানি বা তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনের লাইসেন্স প্রদান না করা এবং বিদ্যমান কোম্পানিগুলোকে ধীরে ধীরে অন্য শিল্পে রূপান্তর করা।
বিবৃতিতে বলা হয়, “নিকোটিন পাউচ কোনোভাবেই ‘নিরাপদ পণ্য’ নয়। বরং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এ পণ্যটিকে নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। ফলে বেজার এই অনুমোদন কেবল আদালতের নির্দেশনাই নয়, সংবিধানের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক দায়বদ্ধতারও লঙ্ঘন।”
এতে আরও বলা হয়, চলতি বছরের ১৮ মে ২০২৫ তারিখে সরকার বিডা ও বেজাকে ই-সিগারেটজাত পণ্য উৎপাদনের অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৩৫টি মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রতিনিধিরা অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে এক যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রস্তাবেও নিকোটিনজাত পণ্য নিষিদ্ধের সুপারিশ রয়েছে।
তবে এসব নীতির পরেও বেজা কর্তৃক ফিলিপ মরিসকে অনুমোদন দেওয়া গভীর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বলে মন্তব্য করে সংগঠনটি।
বিবৃতিতে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক আইনজীবীরা বলেন, “আইন ও আদালতের নির্দেশনার দুর্বল প্রয়োগের কারণে দেশে তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন এবং ই-সিগারেটের প্রচারণা বাড়ছে। কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তরুণ প্রজন্মকে লক্ষ্য করে ক্ষতিকর পণ্যের প্রসারে কাজ করছে, যা বাংলাদেশের সংবিধান ও আদালতের রায়ের পরিপন্থি।”
তারা আশা প্রকাশ করেন, সরকার দ্রুত এই অনুমোদন বাতিল করে, জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় এনে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।



