বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী ও জামাত একক চরফ্যাশন-মনপুরা (ভোলা-৪) জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে

মীর সাজু, ভোলা প্রতিনিধি :আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোলা- ৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিএনপি থেকে এ আসনে ৫প্রার্থী রয়েছে। ইতিমধ্যেই তারা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে প্রচার-প্রচারণায় মাঠ-ঘাট চর্ষে বেড়াচ্ছে। তবে জামায়াতে ইসলামী দল এই আসনে এক প্রার্থী ঘোষনা করেছে এবং ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশও একক প্রার্থী দিয়েছে। ফলে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্ধিতা ঘিরে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন না হলে জামায়াত সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।
বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলা নিয়ে গঠিত ভোলা-৪ আসন। এ আসনে রয়েছে ১টি এ ক্লাস পৌরসভা, ৫টি থানা ও ২৫টি ইউনিয়ন। মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৬০ হাজার ৯৮৬ জন।
ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ অঞ্চল হওয়ায় এখানকার প্রধান ইস্যু নদীভাঙন, যোগাযোগ অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা। এসব স্বর্থ জুড়ে ভোলা-৪ আসনে বিএনপির টিকেট পেতে ইতিমধ্যেই তৎপর বিএনপির চরফ্যাশন প্রভাবশালী নেতা।
তিন তিন বারের সাবেক সংসদ সদস্য, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক এজিএস বিএনপির নির্বাহী সম্পাদক এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সাবেক চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব নাজিম উদ্দিন আলম ২০১৮ সালেও তিনি এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। রাজপথের আন্দোলনে হামলা ও মামলার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতাকে তিনি ভোটের মূল পুঁজি হিসেবে কাজে লাগাতে চান। ভোটারেরা বলেন, এ আসন ধরে রাখার জন্য নাজিম উদ্দিন আলম বহু কষ্ট করেছেন।
অন্যদিকে তার নিকতম প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবদল সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন ২০১৮ সালে মনোনয়ন ফরম তুলেও দলের নির্দেশে তা প্রত্যাহার করেছিলেন। এ বছর আবারও এলাকায় পুরোদমে সক্রিয় হয়ে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। বাজারে পথসভা, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন।
আরেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নির্বাহী সদস্য, বিশিষ্ট ব্যাংকার ও যুবনেতা শোয়েব মোঃ মুনতাছির মোর্শেদ প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। ইতিমধ্যে চরফ্যাশন ও মনপুরা ব্যানার ফেস্টু নিজেকে মনোয়ন প্রত্যাশীি হিসেবে তুলে ধরে এলাকাজুড়ে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। স্থানীয়দের অনেকে মনে করেন, শিক্ষিত ও যোগ্য তরুণ নেতৃত্ব রাজনীতিতে এলে দলের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
শোয়েব মোঃ মুনতাছির মোর্শেদ চরফ্যাশন পৌরসভার কৃতি সন্তান ও বরিশাল ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। তার বাবা মরহুম অধ্যক্ষ মাকসুদুর রহমান বাচ্চু চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ভোলা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি চরফ্যাশন কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন এবং সামাজিক কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলেন। মূলত তার বাবার নেতৃত্বেই চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপি গড়ে উঠেছিল। তার মা চরফ্যাশন উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি ছিলেন। বিএনপি’র এই নেতা শোয়েব মুনতাসির মোর্শেদ কালের কন্ঠকে বলেন, উচ্চশিক্ষায় অস্ট্রেলিয়াতে স্বপরিবারে থাকার সুযোগ পেলেও রাজনৈতিক টানে দেশের মানুষের সেবা করার লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া যাওয়া প্রত্যাখ্যান করেছি। আমি জনগণের পাশে থেকে জনগণের সেবা করতে চাই।
অপরদিকে বিএনপির আইনজীবী ফোরামের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক চরফ্যাশন তথা ভোলার উন্নয়ন নিয়ে তিনি নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এডভোকেট মোঃ সিদ্দিকুল্লাহ মিয়া। ইতিমধ্যে তিনি জনগনের যাতায়াতের কাচা রাস্তাসহ মানুষের চিকিৎসা ক্যাম্প করে সরাসরি অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সহকারী এটর্নি জেনারেল ব্যারিষ্টার মেহেদী হাসান রনভী ডবএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে ধর্মীয়ভাবে মুক্তব মাদ্রাসা এবং মসজিদ করে ভোটারদের কাছে প্রার্থী হিসেবে পরিচিত লাভ করছেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলনের পক্ষ থেকে অধ্যাপক এ এম এম কামাল উদ্দিন একক প্রার্থী হিসেবে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় সভাসহ এলাকায় নিয়মিত জনসংযোগ চালাচ্ছেন। দলটির দাবি, আসন্ন নির্বাচনে তারা তৃণমূল পর্যায়ে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলবে। সৎ যোগ্য এবং শিক্ষিত ব্যাক্তিকে দল মনোনয়ন দেয়ায় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জোড়সোরে গ্রাম-গঞ্জে প্রচার-প্রচারনা চলাচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামী ভোলা জেলার সাবেক আমির ও বরিশাল বিভাগীয় অঞ্চল পরিচালনা টিমের সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মোস্তফা কামালকে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি দীর্ঘদিন রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। তার দাবি, তার বড় ছেলে গুম হয়ে নিহত হয়েছেন। নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি চরফ্যাশন-মনপুরাকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদকমুক্ত করার পাশাপাশি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে প্রচার-প্রচারণায় এবং সভা সমাবেশ করছেন।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভোলা-৪ আসনে বিএনপি একাধিক গ্রæপে বিভক্ত। যদি এই গ্রæপিং রাজনীতি অব্যাহত থাকে তবে জামায়াত সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।



