মতামত

দেশ রাষ্ট্র সমাজ সংসারের বহুব্রীহি মানুষের শান্তির প্রয়াসে

সৈয়দা রাশিদা বারী: অপ্রত্যাশিতভাবে হঠাৎ অকচ্ছাৎ বৈরী উৎপাদিত, কিছু কিছু বর্বর কীর্তিকলাপ! অসহ্য দূরবীময় করে ফেলে, করে দেয় কিছু কিছু ভালো নারীর চলার পথঘাট জীবন! এটা সমাজের শিক্ষা বলবো, না পুরুষের শিক্ষা বলবো? বুঝো তো উঠতে পারছি না?! বাবা যে সন্তান জন্মিলে তার দায়িত্ব নেইনি, অবৈধ পরকীয়া বা নতুন নারীতে আসক্ত হয়ে, স্ত্রীর প্রতি অন্যায় করেছে! নতুন নারীর সাথে প্রেমের আকৃষ্ট হয়ে, স্ত্রীর উপরে নিষ্ঠুর খেল খেলেছে! অবৈধ প্রেমে আকৃষ্ট হওয়া ওই নারীকে বিয়ে করার মুহূর্তে, যে সন্তানকে সন্তান বলে স্বীকার করেনি! স্বীকৃতি দেয়নি নির্মম জাহেলীপনা করে!! সন্তানসহ সন্তানের মাকে বাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে! তাড়িয়ে দিয়েছে তালাক দিয়ে! সন্তানকে স্বীকার করলে সন্তানের ভরণ তোষণ দিতে হতো তাই স্বীকার করেনি সন্তান তার! এমন পরিস্থিতির যে সন্তানকে সন্তানের মা, সন্তানকে আগলে রাখতে আর বিয়ের পিড়িতে জীবনে বসেন নাই। সন্তানকে বুকে নিয়েই থেকেছে সন্তানের ধরেই শেষ জীবন কাটিয়ে দেবে এই বাসনায়! মানুষের বাড়ি কাজ করে, কাজের বিনিময়ে সন্তানকে মানুষের মতন মানুষ করেছে। এটা একটা বিরাট তার জন্য অন্তত মহীরূহ ব্যাপার। ব্যাপার হলো এই সন্তান যদি তার গায়ের চামড়া কেটে মায়ের পায়ের জুতাও বানিয়ে দেয় তবু কিন্তু মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার ঋণের বোঝার শোধ যায় না। কিন্তু পুরুষ তো? আর যেখানে সমাজটাও পুরুষ শাসিত! তাই অকৃতজ্ঞ পুত্র, পুরুষ পুত্র, নারীর চিরশত্রু হয় শাশুড়ি, সেই সুযোগ নিলো পুত্রবধূ!! মানে এই পুরুষ পুত্রের স্ত্রী। অভাগীর পুত্রের স্ত্রী। স্ত্রীর সাথে তাল মিলিয়ে, বাবার পাঁচ দশ কাঠা জমির অংশীদারিত্ব পাবার লোভে প্রলোভনে, দেবীর মতো নিরীহ নিষ্পাপ পবিত্র মাকে, যুবতী বয়সে এই পুত্রের বাবা অবৈধ অন্য নারীর সাথে পরকীয়ায় মত্ত হয়ে যা করেছিল! অন্যায় করে তাড়িয়ে দিয়েছিলো! বাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিল তালাক দিয়ে!!! চরিত্রহীন বানচোট বাবার শেষ বয়সে, বাবার সম্পত্তি সম্পদ স্থান নেওয়ার লোভে, সন্তান মানুষ করতে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করার ফলে বয়স অনুপাতে আগেই অসুস্থ হয়ে পড়া অসহায়, তালাকপ্রাপ্ত হওয়া এই মাকে রাতের আঁধারে তাড়িয়ে দেওয়া বলতে! বহু দূরের অজানা অচেনা রাস্তায় ফেলে দিয়ে গেছে! চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাচ্ছে এই বলে, ফাঁকি দিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলো!! তারপরে সে মানে কুলাঙ্গার পুত্র, ঠিকান লুকাতে, ঢাকা শহরে ভাড়া করা যে বাসায় ছিলো, সেই বাসাও চেঞ্জ করে ফেললো, ভোর হতে না হতেই! এই পরিস্থিতির এটাকে আসলে কি বলবো?? এমন দায়গুলো আসলে কার উপর ভর করবে? সমাজের উপর?? না পুরুষের উপর?? ধর্মটা হলো বিশ্বাসের জিনিস! মহাপবিত্র জিনিস! আত্মবিশ্বাস আর ধর্ম একই বন্ধন এর জিনিস! ইসলাম অর্থ আদর্শ শান্তি!

পুরুষের বহুবিবাহ, একাধিক বিবাহ এবং ভোগ বিলাস পূরণ হলে, আর ভালো লাগছে না পছন্দ হচ্ছে না, এমন নানা নজুহাতে তালাক দেওয়ার অধিকার আছে। এটা সমাজে স্বীকৃত। ইসলাম ধর্মের স্বীকৃত! ধর্মের শ্রদ্ধা করি, মানি, ভালোবাসি তাই এই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। এই রীতিনীতি নিয়মের আড়ালে, এক নারীর সুখের মূলে আরেক নারীর কষ্ট নির্মম কষ্ট! শান্তি আছে শান্তির জায়গায় কিন্তু অশান্তির অভাব নাই! পুরুষের নাগালের মধ্যে সুখ শান্তি সরোবর! ঠিক এখানেই আবার নারীর নাগালের মধ্যে কষ্ট দুঃখ অশান্তি!! তাহলে এক জীবনে নারী কয়জনের দুয়ারেই বা নিজেকে উত্থান পতন ঘটাবে?! নারীর সংসার, নারীর জীবনের, নারীর ভালো থাকার, স্বাভাবিক থাকার, কোথায় স্থায়িত্ব নিরাপত্তা?! আর অবুঝ সন্তানকে নিয়ে তার যে দুঃখ কষ্টে ভাসা দিল দরিয়া! অথৈ সাগর! পদ্মা মেঘনা যমুনার মতো নারীর হৃদয়ে কুল কিনারা হীন পুরুষের ছোবল!! কষ্টের দরিয়া!
অকথ্য দিশাহীন অবস্থা! দুরবস্থা! যেখানে পুত্রের আশ্রয়ও নারীর বৃদ্ধকালে বীভৎস হয়! পুত্রবধু পুত্রবধূর মায়ের সাথে থাকতে প্রস্তুত! তার নিজের মাকেই কাছে রাখতে এবং অভিভাবক মানতে, অভিভাবক বানাতে প্রস্তুত। সংসারে হত্যা কর্তা নেতৃত্ব কর্তৃত্ব দিতে ইন্টারেস্ট রেট! শাশুড়ির সাথে থাকতে জীবন মৃত্যু লড়াই শপথে অপ্রস্তুত। মোটেই রাজি নয়! সে যে তার মাকেই কাছে রাখবে। স্বামীর মাকে ধিক ধিক্কারে করবে সর্বচূত! রাজ্য বিজয় বিকর্ষণ! এই শপথ বাক্য প্রত্যেকটা নারী তার মায়ের কোলে থাকা থেকেই পাঠ করে, বস হয়ে থাকে। সেটা কুঠার মেরেও ভাঙার বা ভাঙ্গানোর নয়। সেই কারণেই পুত্রবধূরা শাশুড়িকে প্রতিপক্ষ মনে করে। খোঁজে শুধু খুঁত! বাহির করে তুলে ধরে নেগেটিভ দিক, পজেটিভ সব লুকিয়ে। পরম শত্রু মনে করে! একটাই চিন্তায় তাড়িয়ে দেওয়া ধান্দায়! পুরুষ চালাক সেটা বহু বিয়ের ক্ষেত্রে! মায়ের প্রতি তার কিংকর্তব্যবিমূঢ় থাকা, এইদিক থেকে সে বোকা। ধর্ষণ করার সময় ধর্ষনকৃত নারীর প্রতি যেমন অন্যায়ের দিক থেকে, নির্মমতার স্থানে, কঠিন এবং হিংস্র দানব বন্যপ্রাণী পশুর মতন। ঠিক এমন একই রকম বলা চলে। রীতিমতো পুরুষ হয় প্রানপন নারী ভোগী। স্ত্রী পিপাসু! আর মা সম্পর্কীয় বলতে, বলতে হয়, পুরুষ বেশিরভাগই সাধারণত উপযুক্ত বয়সে যৌবনকালে মাকে চিনে না। মাকে মানে না। মাকে বোঝেনা! বিবাহের পূর্বে সাবালক হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত, একটা বয়স পর্যন্ত থাকে, বিশেষ করে বিবাহের পূর্বে, প্রত্যেকটা পুরুষ থাকে মা ভক্ত। মা আশক্ত। তখন সে মায়ের জন্য সব করতে পারে। জীবনও দিয়ে দিতে পারে। বিবাহর আগ মুহূর্ত পর্যন্তই পুরুষের ওই সময়টা থাকে মা নীতিতে বিশ্বাসী। বিবাহ থেকে পুরুষ পুরুষ হয়। পুরুষ হওয়া থেকে একজন পুরুষ তখন শুধু ভোগের সামগ্রী নারীকেই বোঝে। এটা আমি বলছি মোটামুটি বা সাধারণ ক্ষেত্রে। সাধারণতই এমন হয়। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। সেটা খুব কম সংখ্যক পুরুষের মধ্যেই দেখা যায়। ব্যতিক্রম এই পুরুষগুলো আবার আমৃত্য মা ভক্ত থাকে। মা ভক্ত যারা থাকে তারা কিন্তু স্ত্রীকেউ ভালোবাসে। বোন কন্যা ফুপু খালা স্ত্রীর উপর অন্যায় করে না। কোন নারীর উপর অন্যায় করে না। এরাই সাধারণত আসল পুরুষ। প্রকৃত পুরুষ। বহুবিবাহে আসক্ত হয় না। নিজ সন্তানকে অস্বীকার করে না। এরাই প্রকৃত মানুষ। পুরুষরূপ ধারী প্রকৃত পুরুষ। এরাই সমাজে বেশি কিন্তু প্রভাবের ক্ষেত্রে খারাপ পুরুষ, ওদেরই প্রভাব বেশি। তাই সংসার সমাজের অংকধারাপাতে অশান্তির প্রভাব, দুঃখ দুর্দশা কষ্টের মাত্রা, জ্বালা যন্ত্রণা আর অন্যায় অপকর্ম অনৈতিকতা দুর নৈতিকতার সংখ্যাও বেশি। তবে এর একটা সুষ্ঠু সুরাহা, গ্রহণযোগ্য অবসান, একটা সুষ্ঠু সমাধান প্রয়োজন। যেকোনো দায় নারীর উপরে চাপিয়ে দিতে, নারীর যোগ্যতা পারদর্শিতা, নারী কতটুকু মানিয়ে নিতে পারবে, অমানবিকতা না করে, নারীও জড় পদার্থ নয় জীব এবং মানুষ। নারীকে মানুষের মর্যাদায় আনতে হবে। মানুষের মর্যাদায় ভাবতে হবে। পুরুষের সমকক্ষ নারী কখনো ভাবে না। নারী পুরুষকে পুরুষ বলেই সম্মান করে। তাই একজন মা কন্যার থেকে পুত্রকেই বেশি ভালোবাসে বেশি সম্মান করে। বেশি কর্তৃত্ব নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত থাকে। একজন মা পুরুষকে সম্মান করে বলো চোখে দেখে তাই তার পুত্রকে এইভাবে সম্মান করে বড় স্থানে রাখে। একই পেটে ধরা কন্যার থেকে পুত্রের বড় স্থান দেয়। এর বিপরীতে পুরুষদের সুযোগ নেওয়া কি ঠিক? নাকি পুরুষরাও ছাড় দিলে, প্রযোজ্য থাকতো। বরং সেটাই হতো খাঁটি মানুষত্বের প্রকাশ? সেটা দেওয়াটাই হতো মানবিকতা? নারী করবে পুরুষের সম্মান পুরুষ করবে নারীর সম্মান। যখন মা পুত্রকে ভালোবাসে সম্মান করে পুত্রের নেতৃত্ব কর্তৃত্ব দেয়! মাথার মনি চোখের মনি বানায়! তখন বাবাকে কন্যার ফাঁকি দেওয়া কি ঠিক?! ওই অবস্থানই ফিরিয়ে দেওয়া আমার মনে হয় সঠিক বা উচিত। চিন্তার বিষয় এর বিনিময়ে পুরুষ যা করেছে! পুরুষ নারীর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, মন গড়া কিছু নির্মম জুলুম অন্যায় নারীর উপর চাপিয়ে দিয়েছে! মা দিয়েছে পুত্রকে ছাড়, বাবা দিয়েছে কন্যাকে ফাঁকি!!! বোধোদয়ের বিস্তার হলে যা দিতে পারেন না। শান্তি শৃংখলার লক্ষ্যে,,, আসলে আল্লাহর রহমত নারী-পুরুষ, সবারই সৃজনশীলতা রক্ষার্থে, সমাজের সচেতন মহল তো বটেই, এমনকি সাধারণ জনগণও চাই, নারীকে মানুষ ভেবে, আদর্শিকতার আলোকে, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে, নারীর সমর্থনও নেওয়া প্রয়োজন এবং দরকার। ভালোর ব্যতিক্রম নাই। সেটা সবার জন্যই সবসময়ই প্রযোজ্য। যেখানে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকে, থাকে সেখানেই মঙ্গল এবং কল্যাণ অবধারিত। শুভময় উদ্ভাবিত প্রসারিত হোক, দুনিয়া জুড়ে, সকল পর্যায় মানুষের অকল্যান অমঙ্গল খুঁচে যাক ভুলন্ঠিত হয়ে। দেশ রাষ্ট্র সমাজ সংসারের বহুব্রীহি মানুষের শান্তির প্রবাসে।

৮. ১০. ২০২৫ইং, বেলা ১২টা, বুধবার।

Related Articles

Back to top button