আইন বাস্তবায়ন ও কর ফাঁকি রোধে তামাক বিক্রেতার নিবন্ধন জরুরি

মাখদুম সামি কল্লোল: তামাক ও সিগারেট বিক্রিতে নিবন্ধন ও লাইসেন্স ব্যবস্থা কার্যকর না হওয়ায় কর ফাঁকি, অবৈধ সিগারেট বিক্রি ও আইন লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করা বেআইনি হলেও অধিকাংশ বিক্রেতা এখনও লাইসেন্স গ্রহণ করেনি। ফলে ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন, অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি এবং চোরাচালান প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না।
বুধবার ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীর বিজয়নগরের ফার্স হোটেলে বেসরকারি সংস্থা এইড ফাউন্ডেশনের আয়োজনে “স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণে নির্দেশিকা বাস্তবায়নের সফলতা ও চ্যালেঞ্জ: অভিজ্ঞতা বিনিময়” শীর্ষক সভায় বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়ক সাইফুদ্দিন আহমেদ।
সভায় আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক (পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন অনুবিভাগ) মো. মাহমুদুল হাসান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এনটিসিসি মহাপরিচালক মো. আখতারউজ-জামান, সাবেক সিনিয়র সচিব ও ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ভাইটাল ষ্ট্রাটেজিসের মোহাম্মদ হামিদুর রহমান খান এবং জনস্বাস্থ্য নীতি বিশ্লেষক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন। প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার আবু নাসের অনীক।
বক্তারা জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০২১ সালে প্রকাশিত ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা’ অনুসারে তামাক বিক্রেতাদের নিবন্ধন ও লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৩৭টি পৌরসভায় ৪,১৫৫ জন বিক্রেতাকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে, যা থেকে সরকার ৮৩ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব আয় করেছে। দেশে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার বিক্রেতা নিবন্ধনের আওতায় এলে বছরে ৩০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে।
এছাড়া নির্দেশিকা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাক বিক্রির লাইসেন্স প্রদান করা যাবে না। এর ফলে শিশু-কিশোর ও তরুণদের তামাকের নাগাল থেকে দূরে রাখা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে ৬টি সিটি কর্পোরেশন, ৪৩টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন পরিষদে এ নির্দেশিকা আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে, যা প্রায় ৫৯% এলাকায় কার্যকর।
বক্তারা বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো সচেতনভাবে বিক্রেতাদের ব্যবহার করে কর ফাঁকি ও আইনের ফাঁকফোকর কাজে লাগাচ্ছে। অথচ লাইসেন্সিং ব্যবস্থা কার্যকর হলে বিক্রির পরিসংখ্যান সংরক্ষণ, আইন প্রয়োগ এবং চোরাচালান প্রতিরোধ সহজ হবে।
সভায় বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, এসডিজি-৩ বাস্তবায়ন ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। এজন্য শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয়, বরং অর্থ ও বাণিজ্যসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সাংবিধানিক দায়িত্ব রয়েছে। তামাক বিক্রেতাদের নিবন্ধনের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।