জাতীয়

ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার অজুহাতের দিন

টাইমস ২৪ ডটনেট: ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী ইরাকে বড় ধরনের সামরিক হামলা চালায়। এই হামলার জন্য ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে হামলাকে অজুহাত বানানো হয়। ইরাকে মার্কিন, ব্রিটিশসহ অন্যান্য দেশের যৌথ বাহিনীর হামলায় কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ হারান।২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চারটি বিমান ছিনতাই করে যুক্তরাষ্ট্রের টুইট টাওয়ার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হামলা হয়। এছাড়া একটি বিমান মাঠে আছড়ে পড়ে। এ ঘটনায় প্রায় ৩ হাজার মানুষের মৃত্যুর পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরুর ঘোষণা দেন। এরপরই শুরু হয় ইরাকে হামলার প্রস্তুতি।
২০০৩ সালে ইরাকে হামলার কারণ হিসেবে জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছিলেন, ইরাকের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন সন্ত্রাসবাদে মদদ দিচ্ছেন। কিন্তু এই অভিযোগগুলোর স্বপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ কখনোই পাওয়া যায়নি। এমনকি জাতিসংঘের পরিদর্শকরাও ইরাকে কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্রের সন্ধান পাননি।যুদ্ধ শুরুর আগে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সামরিক অভিযানের পক্ষে ভোট দেয়নি। তা সত্ত্বেও, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ ২৯টি দেশ মিলে “কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং” নামে একটি জোট বাহিনী গঠন করে। এই জোটে পোল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি এবং স্পেনের মতো দেশও অংশ নেয়।অবশেষে, ২০০৩ সালের ২০ মার্চ ইরাকে হামলা শুরু হয়। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই ইরাকি সেনাবাহিনী পরাজিত হয় এবং রাজধানী বাগদাদের পতন ঘটে। সাদ্দাম হোসেন পালিয়ে গেলেও ২০০৪ সালের জুনে তাকে আটক করা হয়। যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে বিচার শেষে ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।এই যুদ্ধের আর্থিক ও মানবিক ক্ষতি ছিল। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৮৪৫ বিলিয়ন ডলার এবং ব্রিটেন প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই যুদ্ধে ২ লাখের বেশি বেসামরিক নাগরিক এবং ৩০ থেকে ৪০ হাজার ইরাকি সেনা নিহত হন। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।যুদ্ধের ভয়াবহ মানবিক প্রভাব দেখা যায় শিশুদের ওপর। ২০০৭ সালের মধ্যে প্রায় ২৮ শতাংশ ইরাকি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছিল এবং প্রায় ৭০ শতাংশ শিশু মানসিক সমস্যায় জর্জরিত ছিল।ইরাকে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও বর্বরতা চালানোর পর ২০১০ সালের ১৯ আগস্ট মার্কিন কমব্যাট সেনারা ইরাক ছাড়েন। এরপর ২০১১ সালের ডিসেম্বরে চূড়ান্তভাবে সব মার্কিন সেনাকে প্রত্যাহার করা হয়। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ ৪৪ লাখের বেশি ইরাকি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।যদিও এই যুদ্ধের ফলে সাদ্দাম হোসেনের শাসনের অবসান ঘটে। কিন্তু এর পরিণতিতে ইরাকের জনগণ ধ্বংসযজ্ঞ, বাস্তুচ্যুতি এবং এক গভীর মানবিক সংকটের শিকার হয়। এটি একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও বিতর্কিত যুদ্ধগুলোর মধ্যে অন্যতম।

Related Articles

Back to top button