
নিজস্ব প্রতিবেদক: “রাজধানীর বিজয় স্মরণীস্থ কলমিলতা বাজার ও মিরপুর ভাষানটেক বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্প” দুটির দাবি বাস্তবায়নে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বস্তিবাসীদের পূর্বঘোষিত সচিবালয়ের গেইটে প্রতীকী অনশনে বাঁধা দিয়েছে পুলিশ। আজ সোমবার বেলা ১২টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে সচিবালয়ের দিকে রওনা হলে পুলিশ বাঁধা দেয়। এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের একটি টীমকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়। ৫ সদস্যের টীমে নেতৃত্ব দেন শহীদ আব্দুল কাদের এর নাতনি এডভোকেট নুরতাজ আরা ঐশী। মিরপুর ভাষানটেক বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্পের বিস্তারিত শুনে সচিব আগামী ১ মাসের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দেন।
এর আগে, আমরা ‘বস্তি পুনর্বাসন ও শহীদ পরিবারের ক্ষতিপূরণ আদায় সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচী থেকে গতকাল রবিবার সচিবালয়ের গেইটে প্রতীকী অনশনের ঘোষনা দেন শহীদ আব্দুল কাদের এর সন্তান আলহাজ মো. আব্দুর রহিম। পূর্বঘোষিত প্রতীকী অনশনে অংশ নিতে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে সচিবালয় অভিমুখে রওনা দিলে পুলিশ বাঁধা দেয়। ওই সময় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও প্রায় হাজার খানেক বস্তিবাসী উপস্থিত ছিলেন। তখন তারা একটি মিছিল করে। মিছিলটি জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে হাইকোর্ট মোড় ও পুরানা পল্টন মোড় হয়ে সচিবালয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন পুলিশ তাদের বাঁধা দেন। এসময় আব্দুর রহিম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। পূর্বঘোষিত প্রতীকী অনশন করতে আসলে পুলিশ আমাদের বাঁধা দিচ্ছে। যা খুবই দুঃখজনক। যত বাঁধা দেয়াই হোক না কেন, আমাদের আন্দোলন চলবেই। এসময় তিনি নতুন কর্মসূচী ঘোষনা করেন। কর্মসূচী- ১৩ আগস্ট বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কাফনের কাপড় পড়ে অবস্থান কর্মসূচী। ওই বাস্তবায়নের জন্য বস্তিবাসীসহ সকলে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
আব্দুর রহিম বলেন, আমরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হলেও রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস ও অরাজকতায় দুটি বিষয়ে ভুক্তভোগী। একটি রাজধানীর বিজয় স্মরণীস্থ কলমিলতা বাজার ও আরেকটি মিরপুর ভাষানটেক বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্প। আমাদের কলমিলতা বাজারটি সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, উত্তর সিটি কর্পোরেশন জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পরস্পর যোগসাজসে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জবরদখল করে রাখে। আর মিরপুর ভাষানটেক বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্পটি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও কর্নেল (অব.) ফারুখ খানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও ভূমি মন্ত্রণালয় অবৈধভাবে দখল করে রাখে। আমরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার দীর্ঘদিনযাবৎ উল্লেখিত বিষয় দুটির সমাধান চেয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়াসহ দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও কোনো সমাধান পাইনি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরও এখনো বিষয় দুটির সমাধান হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমাদের বিষয় দুটির সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টাসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আব্দুর রহিম আরো বলেন, বিগত সরকারের কাছে বারবার কলমিলতা বাজার ও মিরপুর ভাষানটেক বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্প দুটির সমাধান চেয়েও সমাধান পাইনি। অতঃপর গত বছর হাসিনা সরকারের পতনের পর এ বিষয়ে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমিমন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ পুলিশের আইজিপি বরাবরে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে অবহিত করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এর প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ভূমি মন্ত্রণালয় ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠনও করেন। প্রজ্ঞাপনে আগামী তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দেন। অদৃশ্য কারণে সাত মাস অতিবাহিত হলেও এর কোন অগ্রগতি নেই। প্রতিবেদন দাখিলও হয়নি, বস্তিবাসীদের ভাগ্যও পরিবর্তন হয়নি। অথচ, আমলাদের ও উপদেষ্টাদের ভাগ্য ঠিকই পরিবর্তন হচ্ছে। এমতাবস্থায় রাজপথে নেমে আন্দোলন করা ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো পথ নেই। কাজেই আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই রাজপথেই থাকবো, প্রয়োজনে জীবন দেব, তবু রাজপথ থেকে পিছপা হব না।
নিম্নে দুটি দাবির বিস্তারিত তুলে ধরা হলো- ১। রাজধানীর বিজয় স্মরণীস্থ কলমিলতা বাজার : ঢাকার বিজয় স্মরণীস্থ কলমিলতা বাজার এর প্রকৃত মালিক ছিলেন আমার দাদা শহীদ আব্দুল কাদের। বর্তমানে আমার বাবা আলহাজ্ব মো. আব্দুর রহিম এর উত্তরাধিকার। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আমার দাদা শহীদ হওয়ার সুযোগে ১৯৭২ সালে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অবৈধভাবে জবরদখল করে। এই জবরদখলকে মুক্ত করার জন্য আমরা শহীদ পরিবার হিসেবে তৎকালীন শাসক গোষ্ঠীর দ্বারে দ্বারে ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে বিচার বিভাগের কাছে ১৯৭৫ সালে একটি রীট মামলা দায়ের করি। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন আইনি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই সর্বোচ্চ সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। যদিও প্রতিটি আদালত আমাদের এই সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ দুই মাসের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও সরকারকে প্রদান করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরও আমাদের ক্ষতিপূরণ দেই দিচ্ছি বলে এখনো দেয়া হয়নি। বাস্তবতা হচ্ছে, এই ৫৩ বছরের যাবতীয় ক্ষতিপূরণ হিসেবে আমাদের পাওনা প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার অধিক। সাবেক মেয়র আতিক ও তার কর্মকর্তা কর্মচারীগণ বিভিন্ন সময়ে আমাদের কাছে এই ক্ষতিপূরণের একটি পার্সেন্টিজ দাবি করে আসে। সেই দাবি না মেটানোর কারণে আজ অবধি আমাদের পাওনা টাকা এখনো দেয়নি। গত বছরের ৫ আগস্টের পর ঢাকার ডিসি ও অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ যথাযথ কতৃপক্ষের কাছে আমাদের ক্ষতিপূরণ চাইলেও এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দাবি বাস্তবায়ন হয়নি।
২। মিরপুর ভাষানটেক বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্প : বাংলাদেশের বস্তিবাসী সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবন মানোন্নয়নের জন্য আমরা ১৯৯৭ সাল থেকে আজ অবধি লড়াই সংগ্রাম করে আসছি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ঢাকার ভাষানটেক বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্পটি একটি পাইলট প্রকল্প। ১৯৯৮ সালে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এই প্রকল্পটির শতভাগ বিনিয়োগ আমার বাবা ও আমাদের প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড কর্তৃক ২০১০ সালের মে মাস পর্যন্ত বাস্তবায়ন ও পরিচালনা করেন। প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন সময়ে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, কর্নেল (অবঃ) ফারুখ খান ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিসহ স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীগণ নানাবিধ অপকর্ম লুটপাট করে। অতঃপর আমাদেরকে জুলুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে ২০১০ সালের মে সাসে প্রকল্প ছাড়া করে এবং ওই বছরের জুন মাসে দেশ ছাড়া করে। অতঃপর প্রকল্প অবৈধভাবে দখল করে সম্পদ লুটপাট ও ধ্বংস করা শুরু করে।