
টাইমস ২৪ ডটনেট :ফ্যাসিবাদী সরকারের লেসপেনসারদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ব্যবসা ও চাকরি হারিয়ে বাংলাদেশে প্রত্যাগত বঞ্চিত ও নির্ঘাতিত ওমান প্রবাসীগণ।
মঙ্গলবার ১৫ জুলাই সকাল ১১ টায় শফিকুল কবির মিলনায়তন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে, প্রত্যাগত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত ওমান প্রবাসীরা। সম্মেলনে ওমান প্রবাসীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইবরা হাসপাতাল, সালতানাত অব ওমানের সাবেক শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সালতানাত অব ওমানে প্রায় সাত লক্ষ বাংলাদেশী জীবন জিবিকার জন্য চাকরি বা ব্যবসা নিয়ে বসবাস করে। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ওমানের বাংলাদেশ দূতাবাস মাসকাট পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়।
বাংলাদেশ দূতাবাস মাস্কাট, বাংলাদেশ স্কুল মাসকাট ও বাংলাদেশ সোশাল ক্লাব এই তিনটি প্রতিষ্ঠান প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের মাধ্যমে ও তাদের কারনে ওমানী সরকার বাংলাদেশীদের ভিসা প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে। এতে একদিকে যেমন শ্রমের বাজার সংকুচিত হয়েছে অন্যদিকে, ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষা কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির মধো তিক্ত সামাজিক সম্পর্ক্য বিরাজ করছে। যা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্য মর্যাদা হানিকর।
বন্ধুপ্রতিম দেশ ওমানের জনগণ বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও বন্ধুত্ব পরায়ন। যা বাবহার করে বাংলাদেশ ওমানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ও প্রভাবমুক্ত শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ দুতাবাস মাস্কাট, বাংলাদেশ স্কুল মাসকাট ও বাংলাদেশ সোশাল ক্লাবের কার্যক্রম ও তাদের আচরণের কারনে ওমানী সরকার বাংলাদেশিদের প্রতি বিতশ্রদ্ধ।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ স্কুল জালান বানী বু আলীর প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা ও শিক্ষক মরহুম শেখ আবদুল্লাহকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে প্রায় তিন মাস কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। দূতাবাস থেকে তাকে কোন আইনী সহযোগিতা দেয়া হয়নি। ২০১৩ সালে একই স্কুলের সাবেক অধ্যক্ষ জনাব আজাদ সহ আরো কয়েকজন ভালো শিক্ষককে তাতক্ষনিক আদেশে চাকরি চ্যুত করে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
মাস্কাটের শিলুপ অঞ্চল মবেলার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সলিম উল্লাহকে তার পরিবার সহ ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তার অপরাধ সে স্কুলের সংবিধান সংশোধনের জন্য অভিভাবকদের ওয়াটস আপ গ্রুপে লেখালেখি করতো। পরিবার সহ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত গোলাম সারোয়ারের সাথে এমনকি দূতাবাসের যেকোন কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করতে চাইলেও, কেউ তাকে দেখা দেয়নি। এখন সে দূর্বিসহ দিন কাটাচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওমানের বুরাইমি প্রদেশে কর্মরত এনেসথেশিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক ডা. সাইয়েদ মাহমুদ আলি রেজা, ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, এমরান চৌধুরী ও সাহফুল ইসলামকে ওমান ত্যাগে বাধ্য করা হয়।। তাদের অপরাধ তারা বিএনপির নামে একটা ইফতার পার্টির আয়োজন করেছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওমানের ইবরা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিতসক ডা. মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরীকে পরিবার সহ ২০২১ সালের মার্চ মাসে নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে জোরপূর্বক পাঠিয়ে দেয়া হয়। তার অপরাধ তিনি অভিভাবকদের ভোটে স্কুল পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ স্কুল মাসকাট তথা বাংলাদেশের জিম্মাদার হয়ে জামিনযোগ্য মামলায় ১০ জানুয়ারী ২০২১ সালে গ্রেফতার হন। তার পক্ষে আইনী সহায়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ দুতাবাস মাসকাটের কোন কর্মকর্তা এগিয়ে আসেননি। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় তার পরিবার ও কমিউনিটির বন্ধুদের তার পক্ষে জামিন আবেদন না করার কঠোর অশিয়ারী দেখা হয় এবং মিথ্যা আশ্বাস ও তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে থাকে। অবশেষে জানা যায় দূতাবাসের কর্মকর্তারাই তাকে গ্রেফতার করানোর প্লট তৈরী করেছিলো। দীর্ঘ ২৩ দিন দুঃসহ হাজত বাসের সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ওমানের রাষ্ট্রীযুত শেখ তাইয়ের সালেম আল আলায়ি ডা. সাজ্জাদকে জামিন লাভের ব্যবস্থা করেন। তিনি নাগরিকের প্রতি নিজ দেশের দূতাবাস ও এর কর্মকর্তাদের আচরণে হতভম্ব হয়ে পড়েন।
একই রকম পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাংলাদেশ স্কুল মাসকাটের ততকালীণ প্রিন্সপাল ফারজানা করিম, সোহার স্কুলের শিক্ষক আজিজুল ইসলাম ও গনিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জাহিদ হোসেন নিরাপত্তার কারনে ওমান ছাড়তে বাধ্য হন।
মাবেলার ব্যবসায়ী সৈয়দ জাহাঙ্গির আলম ও বুরাইমির ব্যবসায়ী আজিজুর রহমানকে আগামী ২৯ জুলাই ২০২৫ এর মধ্যে ওমান ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ওমানের রেমিটেন্স যোদ্ধারা বিপদের মুখোমুখি হয়ে দুতাবাস, সোশ্যাল ক্লাব, প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন নিবেদন করলেও কোন সহায়তা পাওয়া যায়নি। বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মাদ ইজনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ায় আমরা নিগৃহীত ওমান প্রবাসীরা প্রতিকার পাবো বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
ডা. সাজ্জাদ হোসেন তাদের পক্ষে বর্তমান সরকারের কিছু দাবী উত্থাপন করে এবং দোষীদের নাম প্রকাশ করে।
এক/ ফ্যাসিবাদের দোসর ও ওমান থেকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অন্যতম কারিগর হলো,
১. সিরাজুল ইসলাম সভাপতি, বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব, ওমান
২. এম এম আমিন, সেক্রেটারি, বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব, ওমান।
৩. ইফতেখারুল হাসান চৌধুরী, প্রধান নির্বাহী, গালফ এক্সচেঞ্জ, ওমান
ও মোস্তফা কামাল পাশা, সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ওমান
৫. সবুজ শিকদার, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ওমান। ৬. মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ওমান।
৭. তৌহিদুল ইসলাম, সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, ওমান
৮. জসিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ওমান
৯. মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ওমান।
সহ সংশ্লিষ্টদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করুন।
দুই/ ফ্যাসিবাদী সরকারের লেসপেনসারদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ব্যবসা ও চাকরি হারিয়ে ওমান থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাগত বঞ্চিত ও নির্যাতিত প্রবাসী
১. ডা মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্পেশালিষ্ট শিশু বিভাগ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওমান।
২. ডা. সাঈদ মোহাম্মদ আলী রেজা, সাবেক স্পেশালিস্ট, এনেসথেশিয়া, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওমান।
৩. আজিজুর রহমান, বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী, বুরাইমি, ওমান।
৪. সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, ব্যবসায়ী, মাস্কাট, ওমান।
৫. আনোয়ার হোসেন, ব্যবসায়ী, বুরাইমি ওমান।
৬. ইমরান চৌধুরী, ব্যবসায়ী বুরাইমি,, ওমান
৭. সাইফুল ইসলাম, বাবসায়ী, বুরাইমি, ওমান
৮. সলিম উল্লাহ, ব্যবসায়ী মবেলা সেনাইয়া, মাতণী ওমান
৯. ফারজানা করিম প্রিন্সিপাল বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাটি, ওমান।
১০. মাহবুব চৌধুরী সাবেক সভাপতি, বিএনপি, ওমান।
১১. আবিদ হোসেন, শিক্ষক, বাংলাদেশ স্কুল মাস্কাট, ওমান
১২. সাঈদীদ মোহম্মদ আনোয়ার হোসেন বাবসায়ী, সোহার ওমান।
১৩. আজিজুল ইসলাম, শিক্ষক বাংলাদেশ স্কুল, সোহার ওমান।
১৪. সাঈদ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন, বাবসায়ী সোহার ওমান।
১৫. রিপন চৌধুরী, ব্যবসায়ী আল ফালাজ ও মান সহ সকল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার ওমান প্রবাসীদের চাকরী ও ব্যবসা ফিরিয়ে দাও।
তিন/ রাষ্ট্রদূত সেকান্দার আলী, রাষ্ট্রদুত গোলাম সারোয়ার, রাষ্ট্রদূত মিজানুর রহমান প্রথম সচিব আবু সাঈদ, দূতালয় প্রধান নাহিদ ইসলাম সহ বাংলাদেশ দুতাবাস মাসকাটে সেসময় কর্মরত। ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর ও অত্যাচারী কর্মকর্তাদের বিচার করুন।
চার/ মাবেলার বাবসায়ী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম ও বুরাইমির ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান ২৯ জুলাই ২০২৫ এর মধ্যে দেশে প্রত্যাবর্তন রহিত করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা মহোদয়দের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
ওমানে বাংলাদেশী শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারি, প্রকৌশলী, শিক্ষক, ডাক্তার, নার্স সহ অন্যানা পেশার চাকরী সৃষ্টি ও বাবসা সম্প্রসারনের সুযোগ রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা মহোদয়দের সরাসরি হস্তক্ষেপে উপরোক্ত চার দফা বাস্তবায়িত হলে আমরা রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি ও ওমানে বসবাসরত সাত লক্ষ বাংলাদেশীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।
এই সময় ডা. মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী ছাড়াও অন্যান্য ওমান প্রবাসী গণ।