
মোঃ আবুতালেব সিকদার, রামু (কক্সবাজার) প্রতিনিধি: কক্সবাজারের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীনুর রহমান ওরফে শাহীন ডাকাতকে শ্বশুরবাড়ি থেকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের জাউচপাড়া এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
আটকের সময় ডাকাত শাহীন তার শ্বশুর শাকের মেম্বারের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী একটি চৌকস দল ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করতে সক্ষম হয়।
শাহীন ডাকাত আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকায় জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঝিলংজা ক্যাম্পের দায়িত্বরত মেজর শাহরিয়ার শাহীন ডাকাতকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গর্জনিয়া এলাকায় প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হবে।
রামু উপজেলার পূর্বাঞ্চলের অস্ত্র, গরু, মাদক চোরাচালানসহ বহু মামলার আসামি শাহীনুর রহমান শাহীন ওরফে ডাকাত শাহীনের ডেরায় গত ২৫ মে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। ওই অভিযানে অস্ত্র, মাদক, জাল টাকা ও ওয়াকিটকি উদ্ধার হলেও কৌশলে সটকে পড়েন ডাকাত শাহীন।
র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক (সহকারী পুলিশ সুপার) আ ম ফারুক জানিয়েছেন, কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডস্থ মাঝিরঘাটা গ্রামের পলাতক আসামী শাহীনুর রহমান শাহীন অস্ত্রধারী ডাকাত। সে দীর্ঘদিন বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। তার বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা রয়েছে।
পুলিশের তথ্য সূত্র বলছে, সিআর ও জিআর মামলা এবং জিডিসহ প্রায় ১৯ মামলার পলাতক আসামি ডাকাত শাহীন। তার দুই ডজন মামলার মধ্যে ৯টি ডাকাতি, ডাকাতি প্রস্তুতি ও ছিনতাই, ৪টি হত্যা মামলা, দুটি অস্ত্র মামলা, দুটি মাদক মামলা এবং বাকিগুলো বিভিন্ন থানায় জিডি হিসেবে রয়েছে।
জানা যায়, রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত এলাকা বিশেষ করে গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, ঈদগড়, বাইশারী ও লেমুছড়ির দেড় লক্ষাধিক মানুষ তার কাছে জিম্মি। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে অপ্রতিরোধ্যভাবে চলছে তার রাম রাজত্ব। তিনিই ওই এলাকার স্বঘোষিত শাসক। মতের বাইরে গেলেই ধরে নিয়ে গিয়ে দেওয়া হয় কঠিন শাস্তি। প্রকাশ্যে ভারী অস্ত্র উঁচিয়ে ফিল্মি স্টাইলে এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে নিজের অবস্থান জানান দেন ডাকাত শাহীন।
শাহিনের শাসনে চলে পুরো এলাকা, তার লাইফস্টাইল যেন তামিল সিনেমার বাস্তব কাহিনী। বলা চলে শাহিনের হাতে স্বাধীন দেশের পরাধীন এক ভূখণ্ড, যেখানে আইন, প্রশাসন, সরকার সব কিছুই ডাকাত শাহীন। প্রকাশ্য দিবালোকে অপহরণ, খুন, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, দখলবাজি, লুটতরাজ, এমন কিছু বাকি নেই যা তার নিজস্ব ডাকাত বাহিনী দ্বারা সংগঠিত হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, শাহীনের চোরাচালানে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে নিশ্চিত মৃত্যু, চোরাচালানকে কেন্দ্র করে বিগত কয়েক মাসে ১০টির মতো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে ডাকাত শাহীন। শাহীনের হাতে খুনের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে সর্বদা, জনসম্মুখে করা খুনের তথ্য মানুষ জানলেও লোকচক্ষুর অন্তরালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পরিসংখ্যান থেকে যাচ্ছে আড়ালে। যুবক, বৃদ্ধ, নারী এমনকি পেটের অনাগত সন্তানও রেহায় পায়নি শাহীনের হাত থেকে।
ডাকাত শাহীনের ভয়ে আত্মগোপনে থাকা সাংবাদিক সরওয়ার জাহান যুগান্তরকে জানান, মিয়ানমারে পণ্য পাচার ও মাদক-গরু চোরাচালানের আনঅফিশিয়াল করিডোরের নিয়ন্ত্রক শাহীন। সীমান্তের এপারে আরাকান আর্মির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি জানান, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য যেমন হুমকি, তেমনি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্যও চরম বিপজ্জনক। এমতাবস্থায় আরাকান আর্মি নিজেদের যাবতীয় রসদের সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল। আর এই রসদের একমাত্র যোগানদাতা ডাকাত শাহীন। তার রসদ না পৌঁছালে আরাকান আর্মি অনেকটা না খেয়ে মরবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের পাশাপাশি বিশেষ করে অকটেন যাচ্ছে ড্রামে ড্রামে। আরাকান আর্মি এসব অকটেন বিভিন্ন অস্ত্র ও বোমা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এপার থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বিবিধ পণ্য ওপারে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ওখান থেকে এপারে ঢুকছে গরুর সঙ্গে ইয়াবা, আইস, স্বর্ণ, সুপারি ও সিগারেট।